Thursday 25 July 2019

এক বিস্ময়কর সত্য ঘটনা !

আট মাসের অবোধ শিশু চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে দক্ষিণের জানলা দিয়ে। পৌষের কুসুম কুসুম রোদ তার কচিবেলা ছুঁয়ে দিয়ে যায় নিরন্তর। পেঁয়াজি রঙের নরম তুলতুলে কাঁথায় অপত্য স্নেহের ওম জড়িয়ে রাখেন তার বাবা মা - শ্যামল ও কাকলি দেবনাথ। যাঁরা আদর করে ছেলের নাম রেখেছেন - শৌভিক। এমন স্নিগ্ধ টলটলে মধ্যবিত্তের সংসারে কখন যে শৌভিককে নিয়ে সময় কেটে যায় কেউ জানে না। হঠাৎ একদিন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় এই নিশ্চিন্ত পরিবারে ঘনিয়ে আসে বিষাদের কালো ছায়া। 

কোনো এক বিকেলের নরম আলোয় খেলা করতে করতে শৌভিকের কাকা প্রথম খেয়াল করেন তার ডাকে শৌভিক তেমন ভাবে সাড়া দিচ্ছে না। অথচ চোখ মেলে তাকানো, কচি আঙুলে কাকার গাল ছুঁয়ে দেখা, সমস্তটাই স্বাভাবিক নিয়মে ঘটছে। শুধু ডাকার সময় শৌভিক আশ্চর্য ভাবে নিরুত্তর থাকছে। প্রথমটা অবশ্য শিশুর সরল অভিব্যক্তি ভেবে পাত্তা দেননি শ্যামল ও কাকলি। কিন্তু পরবর্তী কালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় তাঁরা দেরি না করে পাড়ার একজন শিশু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিলেন। বেরা (BERA) টেস্টের মাধ্যমে ডাক্তার নিশ্চিত করলেন যে শৌভিক প্রায় বধির। শ্যামল ও কাকলিকে তিনি অবিলম্বে একজন ই.এন.টি চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে বললেন। একবুক কষ্ট আর মনখারাপের মেঘ নিয়ে তাঁরা দেখা করলেন একজন বিশেষজ্ঞের সাথে। বিভিন্ন পরীক্ষার পর তিনিও নিশ্চিত করলেন শৌভিকের যথেষ্ট শুনতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর পরামর্শ মতো একটি বেসরকারী  সংস্থার দ্বারস্থ হলেন দম্পতি। সেখানে বিশেষজ্ঞের কথা অনুযায়ী তাঁরা শৌভিককে দিলেন নন ডিজিটাল হিয়ারিং এড (non digital hearing aid)। 

দেখতে দেখতে বছর দুয়েক কাটল। ততদিনে শৌভিকের ঠোঁটে আধো আধো শব্দ বুদবুদের মতো ফুটে উঠেছে। এছাড়া লিপ রীডিং করেও সে কথা বলার চেষ্টা করে চলেছে একটানা। কিন্তু সংস্থায় মূল্যায়নে দেখা গেল শৌভিক তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তাঁদের পরামর্শে এবার শ্যামল ও কাকলি শৌভিককে ডিজিটাল হিয়ারিং এড (digital hearing aid) দিলেন। বছর দেড়েক কেটে গেল এরপর। ডিজিটাল এডে কয়েক শতাংশ উন্নতি হলেও আশানুরূপ ফল মিলল না একেবারেই। শ্যামল ও কাকলির নিরলস ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল এবার, অনিবার্যভাবেই। একমাত্র পুত্রের প্রতিবন্ধকতা ছিন্নভিন্ন করে দিতে লাগল তাঁদের হৃদয়। সমস্তটা বুঝে সংস্থার বিশেষজ্ঞ কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশনের (cochlear implantation) পরামর্শ দিলেন। কেটে গেল আরও দেড় বছর। ততদিনে শৌভিক একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। অন্যান্য বিভাগে সামান্য অগ্রগতি হলেও ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে লাগল কথা বলার ক্ষেত্রে।  

উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে তাঁরা কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নিলেন। পাঁচ বছরের শিশুকে নিয়ে অসহায়, উদ্বিগ্ন বাবা মা শেষ চেষ্টার আশায় জেনেসিস হাসপাতালের অন্যতম ই.এন.টি (E.N.T) সার্জেন ডঃ সৌমিত্র ঘোষের দ্বারস্থ হলেন। বিভিন্ন টেস্টের পর সার্জারির দিন ঠিক হল। ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ র সকালে শুরু হল কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি। টানা সাড়ে তিন ঘন্টা সার্জারির পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এল শৌভিক। ডঃ ঘোষের ইশারায় শ্যামল তাঁর ছেলেকে নাম ধরে ডাকলেন। বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল তাঁর পরম আদরের সন্তান। বাঁধ মানল না কাকলি ও শ্যামলের চোখের জলও। হাসপাতালের তৃতীয় তলে তখন আনন্দের বন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছেন পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। শ্যামলের কথা অনুযায়ী 'নবজন্ম' ঘটল শৌভিকের। 

পাঠকদের বলি এই গল্প শুধুমাত্র বিস্ময়কর সত্য ঘটনা নয়, শ্যামল কাকলির একমাত্র সন্তানের জীবন্ত দলিল। তাঁদের স্বপ্ন সাকার হওয়ার এক অত্যন্ত মধুর, বাস্তব চিত্র। সুতরাং বধিরতা এখন আর কোনো সমস্যাই নয়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ফিরে পাওয়া যেতে পারে শ্রবণ ক্ষমতা। আপনার সন্তান, পরিচিত, বা কোনো আপনজনের যদি এমনই উপসর্গ দেখা দেয় এবং কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশনের প্রয়োজনীয়তা পড়ে তাহলে বলব অবিলম্বে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। এই ধরণের  প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় জেনেসিস হাসপাতাল সর্বদা প্রস্তুত।

আমাদের সাথে যোগাযোগ করার উপায় - ৮৫৮৪৮৮৩৮৮৪ / ০৩৩ ৪০২২ ৪২৪২।
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশন নিয়ে বিশদে জানতে হলে এই লিংক ক্লিক করুন - https://docs.wixstatic.com/ugd/c72522_2135963da147417890acabb3a63dc6df.pdf
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।




#cochlearimplant #hearingproblems #medicalarticles #ENT #GenesisHospitalKolkata #Prescriptiontheke 


No comments:

Post a Comment