Thursday 7 December 2017

কণ্ঠের কণ্টক


"হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে" - উত্তর কলকাতার ডাকসাইটে উকিল সুধীর গাঙ্গুলি এই লাইনটিকে প্রায় বেদবাক্যের মতো মেনে চলেন। কোনোরকম আইনি মামলা হোক বা সামাজিক ইস্যু, আন্তর্জাতিক ঘটনা থেকে পাড়ার হাইড্রেন আঁটকে যাওয়ার মতো যে কোনো বিষয়ে সুধীরবাবু তাঁর উচ্চকণ্ঠের প্রতিধ্বনিতে নিজস্ব বক্তব্য রাখতে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তিনি মনে করেন গান বাজনা, শিক্ষকতা, রাজনীতি এবং ওকালতি, এই সমস্ত পেশায় গলার জোর যদি না থাকে তাহলে জনগন কিছুতেই আপনাকে পাত্তা দেবে না। মিনমিন করা মানুষদের সুধীরবাবু মোটেই দুচক্ষে দেখতে পারেন না। 

এহেন সুধীরবাবু কোনো এক শীতের ভোরবেলায় উঠে দেখলেন তাঁর গলা দিয়ে ঘড়ঘড়ে হাওয়া ছাড়া আর কোনোরকম আওয়াজই বেরোচ্ছে না। আঁতকে উঠলেন তিনি। চোখের সামনে ভেসে উঠল তিনি কোর্টের মধ্যে হাত মুখ নাড়িয়ে কতকটা ইশারাতেই একের পর এক কেস লড়ছেন আর হেরে যাচ্ছেন। একলাফে বিছানা ছেড়ে উঠে তিনি বাড়ির সমস্ত লোককে ধরে ধরে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে তিনি বোধহয় বোবা হয়ে যেতে বসেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির লোকজন প্রায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচবার জোগাড় করছিলেন। কিন্তু সেসমস্ত চিন্তা ভাবনাকে দূরে সরিয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল একজন ইএনটি স্পেশালিস্টের কাছে। সমস্তটা দেখে শুনে তিনি বললেন উকিলবাবুর  টন্সিলাইটিস হয়েছে। সুধীর গাঙ্গুলি তাঁর কণ্ঠরোধের আশঙ্কায় মুষড়ে পড়লেন প্রায়। কি এমন রোগ হল ? আসুন জেনে নিই। 

টন্সিলাইটিস কি ?
গলার পিছন দিকে যে দুটি লিম্ফ্ নোড থাকে তাদেরকেই টন্সিল বলে। টন্সিল, শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। মুখের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করা ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস প্রতিরোধে টন্সিলের কার্যকরী ভূমিকা রীতিমত উল্লেখযোগ্য। এই টন্সিলে যখন কোনো সংক্রমণ হয় তখন তাকে টন্সিলাইটিস বলে। এই রোগটি সাধারণত শিশুদের হয়ে থাকে এবং যথেষ্ট সংক্রামকও বটে। কিছু সাধারণ ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে স্ট্রেপ থ্রোট হয়। এই স্ট্রেপ থ্রোট থেকেই টন্সিলাইটিসের জন্ম। তবে সময়মত চিকিৎসা না করলে পরবর্তীকালে এই রোগের জটিল আকার ধারণ করার বিলক্ষণ সম্ভাবনা থেকে যায় কিন্তু। তাই বলে সাংঘাতিক ভয়ের কিছু নেই কারণ টন্সিলাইটিস চিহ্নিত করা যায় খুব সহজেই। এর নানান উপসর্গগুলি নিম্ন লিখিত দেওয়া হল।

উপসর্গ 
# গলা ফুলে যাওয়া এবং অসম্ভব ব্যাথা হওয়া
# খাবার গিলতে সমস্যা বা ব্যাথা হওয়া
# মুখে গন্ধ
# জ্বর
# ঠাণ্ডা লাগা
# কানে ব্যাথা
# ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
# টন্সিল লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া
# টন্সিলে সাদা বা হলুদ স্পট দেখা দেওয়া

কার হতে পারে এই রোগ ?
সাধারণত শিশুদের হলেও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কোনো বয়েসের মানুষের টন্সিলাইটিস হতে পারে। স্ট্রেপ টেস্ট বা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে এই রোগ নিশ্চিত করা হয়।

কত রকমের টন্সিলাইটিস হয় ?
সাধারণত তিন রকমের হয়।
# একিউট টন্সিলাইটিস - সাধারণ টন্সিলাইটিসেরই নামান্তর। উপরোক্ত উপসর্গগুলি দেখা যায় এক্ষেত্রে।
# রেকারেন্ট টন্সিলাইটিস - সারা বছর ধরে একাধিকবার এই রোগ হয়।
# ক্রনিক টন্সিলাইটিস - সাধারণ টন্সিলাইটিসের থেকে অনেক বেশি জটিল হয় এই রোগ। এর উপসর্গগুলি হল প্রচণ্ড গলা ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া, মুখে অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিস হওয়া।

এর চিকিৎসা কি ?
খুব সাধারণ টন্সিলাইটিস হলে বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। দু তিন দিনের মধ্যে এমনিই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগ যখন জটিল হয় তখন কিন্তু এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিৎ এবং সম্পূর্ণ কোর্স করাই বাঞ্ছনীয়।
সাধারণ টন্সিলাইটিস হলে প্রচুর পরিমানে জল খেতে হবে ও উষ্ণ লবন জলে নিয়মিত গার্গল করলে অনেকটাই উপশম ঘটবে। এছাড়া জলে বিটাডিন সল্যুশন মিশিয়ে গার্গল করলেও দিব্যি উপকার পাবেন। 

সার্জারির সাহায্যেও টন্সিলাইটিস নিরাময় করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলে টন্সিলেক্টমি। এই পদ্ধতি একসময় বহুল প্রচারিত ছিল। তবে বর্তমানে যে রুগীর ক্রনিক বা রেকারেন্ট টন্সিলাইটিস হয়, তাদের ক্ষেত্রেই সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোবলেশন টেকনোলজি উপস্থাপিত হওয়ার পর বলা যেতে পারে এই সার্জারিতে অনন্য বিপ্লব ঘটেছে। দুর্দান্ত পরিবর্তন এনেছে এই যুগান্তকারী পদ্ধতি। তার কারণ, অন্যান্য টন্সিলেক্টমি পদ্ধতির তুলনায় কোবলেশন টেকনোলজিতে খুব সামান্যই ব্যাথা হয়, রক্তক্ষরণের সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে এবং চিকিৎসকরাও অত্যন্ত সহজ ভাবে এই সার্জারি সম্পন্ন করতে পারেন। যার ফলে রুগীরা অনেক দ্রুত স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে পারেন। বাকি পদ্ধতির তুলনায় সার্জারির পরবর্তী জটিলতাও অনেকটাই কম এক্ষেত্রে।

এই কোবলেশন টেকনোলজি কলকাতার বুকে বিরল। তবে সম্প্রতি জেনেসিস হসপিটালে এমনিই একটি ব্যায়বহুল কোবলেশন টেকনোলজি স্থাপন করা হয়েছে। যার দ্বারা এখন বহু সার্জারি অপেক্ষাকৃত কম সময় ও বিনা জটিলতায় সম্পন্ন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রুগীরা সেরে উঠছেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। 

সুধীরবাবুর কিন্তু কদিন ধরেই ঘুসঘুসে জ্বর, খুসখুসে কাশি ইত্যাদি সমস্তরকম উপসর্গ দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু সেসব সামান্য ইতর বিশেষ রোগজ্বালাকে তিনি চিরকাল একফুঁয়ে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। তাই অবহেলায় ও অজান্তে তিনি এমন এক রোগ ডেকে আনলেন যা তাঁর কণ্ঠরোধের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াল। আপনার ক্ষেত্রে এই ধরণের যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে কিন্তু অসময়ে বীর হওয়ার চেষ্টা করবেন না। অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন অথবা জেনেসিস হসপিটালের স্পেশালিস্ট ইএনটি ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করুন যার ঠিকানা এখানেই পেয়ে যেতে পারেন প্রায় বিনা কসরতে। 

#healtharticle #tonsillitis #tonsillectomy #coblation #healthnews #GenesisHospitalKolkata #asprescribed