Tuesday 19 February 2019

সুখে থাকতে ভূতের কিল

বালাই ষাট ! সুখে থাকতে ভূতের কিল খেতে যাবেন কেন ? ভূতের কিল খাক আপনার শত্তুর ! আপনি দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতে থাকুন। কারণ আপনার শরীরের বাইরে ও ভিতরের সমস্ত যন্ত্র, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ অবধি বেরোখ কাজ করছে একেবারে। ঠিক কিনা ? তার কারণ আপনি তো বিলকুল সুস্থ ! সুতরাং আগের থেকে মেডিক্যাল টেস্ট করে আবার কোন পাগলে ? বইটা ছিঁড়ুক তবে তো বইয়ের মলাট দেবেন ? বাইকটা খারাপ হোক তবে তো সার্ভিসিং !

কি বললেন ? 'এরকমটা নয়' ? মানে মলাট বা সার্ভিসিং-টা আগের থেকেই করিয়ে রাখেন, তাই তো ? বেশ, শরীরের ব্যাপারে তাহলে মাতব্বরি কেন বন্ধু ?  বাড়ির ফিল্টারটা যদি ৩ মাস অন্তর লোক ডেকে সার্ভিসিং করাতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরের দুদিকে যে দুটো ফিল্টার রয়েছে সে কি দোষ করল বলুন তো ? কিডনি - জন্ম থেকে সমানে আপনার শরীরের দূষিত পদার্থ নিরলস ফিল্টার করে চলেছে কোনো রকম ইন্সেন্টিভ আর ছুটিছাটা ছাড়াই। রাগ করে সে যদি দুদিন ছুটি নিয়ে ফেলে আপনার তো ইউরেমিয়া হয়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে ছুটি হয়ে যেতে পারে, সেটা জানেন কি ? শেষ কবে ইউরিয়া, ক্রিয়াটিনিন মেপে দেখেছেন, মনে আছে ? 

বাড়ির টুলু পাম্পটির অতিরিক্ত জল তুলে ফেললে যে জ্বলে যাবার উপক্রম হয় এ আপনার থেকে
বেশি ভালো আর কে জানে। কিন্তু আপনার বুকের ভিতর যে মোটরটা মিনিটে ৭০ বার পাম্প করছে তার বেলা ? জানেন, আপনার হার্টরেট আর রিদিম ঠিক আছে কিনা ? ইস্কিমিয়া (ischemia) নেই তো ? কোনো বিয়ে বাড়ি বা অনুষ্ঠানে গেলে আপনার পাতে মিষ্টি পড়তে সময় পায় না। পিঁপড়েরা হা হুতাশ করে পাশ দিয়ে চলে যায় এমনি আপনার রসগোল্লা খাওয়ার ধুম।

বলুন তো, শেষ কবে ব্লাডসুগার টেস্ট (blood sugar test) করেছেন ? জানেন কি সারা পৃথিবীতে ভারতবর্ষ হল ডায়বেটিসের রাজধানী। ২০৩০ সালে ভারতবর্ষে ডায়াবেটিকের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ছুঁতে পারে। ডায়াবেটিসে চোখ খারাপ - ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (diabetic retinopathy), কিডনি খারাপ - ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি (diabetic nephropathy), ব্লাড ভেসেলস ড্যামেজ - ডায়াবেটিস মাইক্রোএনজিওপ্যাথি (diabetic microangiopathy) - এতো জেনেও সুস্থ অবস্থাতেও কিছুতেই আপনি ব্লাড সুগার টেস্টটা করবেন না। কারণ লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যাবে সে আপনার ধম্মে সইবে কেন ? আচ্ছা এবার বলুন তো আপনার ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেলটা ঠিক কত ? কেন জানতে চাইছি ? তার কারণ কোলেস্টেরল আর্টারির ওয়ালের মধ্যে তৈরী করবে এথেরোসক্লেরোসিস (atherosclerosis)। করোনারি আর্টারিটা একটু একটু করে সরু হয়ে এনজাইনা এবং পরে করোনারি আর্টারি ব্লক হয়ে মায়োকার্ডিয়াল ইনফাকশন (myocardial infarction), যার ফল হার্ট এট্যাক। অর্থাৎ আপনার হাসি হাসি মুখের ছবিতে মালা ঝুলবে। 

এবার আসি মহিলাদের ক্যান্সারের কথায়। এক্ষেত্রে ক্যান্সার বললেই সর্বপ্রথম ব্রেস্ট ক্যান্সারের কথা মাথায় আসে। জানেন কি, মহিলারা সব থেকে বেশি কোন ক্যান্সারে মারা যান ? সারাভাইকাল ক্যান্সার (cervical cancer), ব্রেস্ট ক্যান্সার নয়। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে মহিলাদের বাধ্যতামূলক ভাবে ৩৫ বছরের উর্দ্ধে সবাইকে 'ওয়েল-উম্যান ক্লিনিক' এটেন্ড করতে হয়। এই ক্লিনিকে 'প্যাপ স্মিয়ার' (pap smear) বলে একটা টেস্ট করা হয়, যাতে ক্যান্সার সার্ভিক্স, স্টেজ ওয়ানের আগেই ধরা পড়ে। ক্যান্সার হওয়া অবস্থাতেই সার্জারি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় করা হয়। তবে মহিলারা সুস্থ অবস্থায় ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন এটা কতকটা সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠার মতো।  তাঁরা অসুস্থ হলেও ডাক্তারের কাছে যান না আর তাই, সময়মত ক্যান্সারও ধরা পড়ে না। কি ! কালঘাম ছুটছে তো ? আচ্ছা বেশ, দূর থেকে পাথর না ছুঁড়ে বরং ঠিকঠাক জেনে নিই সুস্থ অবস্থায় কি কি টেস্ট আমাদের সকলের করে রাখা উচিত। 

# ব্লাড টেস্ট - হিমোগ্লোবিন করা উচিত কারণ এনিমিয়া আছে কিনা বোঝা যাবে। এছাড়া টোটাল
কাউন্ট, ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট, ই.এস.আর করতে হবে। অনেক রক্তের অসুখ আছে যার কিন্তু উপসর্গ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আবার রুটিন টেস্টেও লিউকেমিয়া ধরা পড়েছে এমন পেশেন্টও আছেন । যে অসুখে ব্যাথা নেই সে অসুখ ধরাও পরে অনেক দেরিতে। কারণ ব্যাথা না হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।

# ইউরিয়া, সিরাম, ক্রিয়াটিনিন করা উচিত - কিডনি কেমন চলছে তা দেখার জন্য।

# লিভার ফাংশন টেস্ট - বিলিরুবিন, এসজিওটি, এসজিপিটি, এলকালাইন, ফসফেটিস, এলবুমিন, গ্লোবিউলিন ইত্যাদি টেস্ট করে বোঝা যায় আপনার লিভারটি কেমন কাজ করছে।

# লিপিড প্রোফাইল - কোলেস্টেরোল-ট্রাইগ্লিসারাইড টেস্ট করে জেনে নিন আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা। অনেক অসুখ আছে যেগুলো বংশানুক্রমিক, চট করে ধরা পড়ে না। 

# চেস্ট এক্স রে - ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত জরুরী। শহরের দূষণ থেকে নানারকম রোগ হতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন বিড়ম্বনা কিন্তু রুটিন চেকআপে ধরা পড়ে।

# আল্ট্রাসোনোগ্রাফি - একটা ইউএসজি অফ হোল এবডোমেন বছরে বার দুয়েক করে রাখলে মঙ্গল। কিডনি, প্যানক্রিয়াস, গল ব্লাডার, লিভার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ইউটেরাস, ওভারি টিউব ইত্যাদি।

# বেসিক ইসিজি করিয়ে রাখা ভালো। ইসিজি আর ইকোকার্ডিওগ্রামের তফাৎ কি ? ইসিজি  নির্ণয় করে ইলেক্ট্রিক্যাল কন্ডাকশন, হার্ট রেট, রিদম। আমাদের কোনো এভি ব্লক আছে কিনা বা পাণ্ডল ব্রাঞ্চ ব্লক আছে কিনা, এতে ধরা পড়বে। ইস্কিমিয়া থাকলে অর্থাৎ করোনারি আর্টারি ড্যামেজ থাকলে ইসিজি-তে খানিকটা ধরা পড়ে। ইকোকার্ডিওগ্রামে ভাল্ভ স্ট্রাকচার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন - পালমোনারি ভাল্ভ, ট্রাইকাস্পিড ভাল্ভ, এওর্টিক ভাল্ভ ইত্যাদি।  যারা হাই ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তাদের লেফট ভেন্ট্রিকুলার ওয়াল হাইপারট্রফি হয়। ওয়াল মোটা হয়ে গেলে এই টেস্টে সেটা দেখা যায়। হার্ট এট্যাকের পর হার্ট কেমন কাজ করছে তাও ইকোকার্ডিওগ্রামে বোঝা যায়। একে বলে লেফট ভেন্ট্রিকুলার ইজেকশন ফ্র্যাকশন। 

এছাড়া আরো অন্যান্য টেস্ট আছে যা সময়বিশেষে অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে জেনেসিস হাসপাতালে যোগাযোগ করে সমস্ত টেস্ট সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন। যোগাযোগ করুন এই নম্বরে - ৮৫৮৪৮৮৩৮৮৪ / ০৩৩ ৪০২২৪২৪২ সুতরাং টেস্ট করা কেন প্রয়োজন তা নিশ্চই এবার বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন। তাছাড়া শরীরের সমস্ত যন্ত্রাদি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা সেটাও তো জানতে হবে। নিয়ম করে ঘর বাড়ির যত্ন নিচ্ছেন আর শরীরের বেলা দ্বিচারিতা কেন ? ভেবে দেখুন একবার…..

#bloodtest #ureaserumcreatinine #lipidprofile #chestxray #USG #ECG #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed