Friday 8 March 2019

উলটপুরাণ


গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর (Gallstone) হলে সার্জারি করিয়ে নেওয়াই যে উপযুক্ত কাজ তা বোধহয় বর্তমান যুগে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যাঁরা ভাবছেন যে এসব সামান্য বিষয়ে ছুরি, কাঁচির তলায় পেট কি না পাতলেই নয়, তাঁদের জন্য জানিয়ে রাখি যে পিত্তথলিতে গঠিত পাথর বেশ বড় রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে আপনার জীবনে। যেমন - জন্ডিস , জ্বর তার সাথে তীব্র ব্যাথা, পিত্তথলিতে পুঁজ সঞ্চয়, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় জনিত ব্যাধি, পিত্তথলির ক্যান্সার এবং পিত্তথলিতে ছিদ্র থাকলে তা জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। পেটে পাথর নিয়ে আপনি ঘুরে ফিরে বেড়াতেই পারেন তবে কিনা ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমির (laparoscopic cholecystectomy) সাহায্যে এই গোটা পিত্তথলিটাই বার করে নেওয়া হয়। তাতে রুগী অনেক দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং অন্যান্য কাজ করতে আর কোনোরকম বাধা থাকে না। এত গেল সাধারণ গরুর রচনা। এই ব্যাপারে কম বেশি আমরা সকলেই জানি। এ আর নতুন কি ? তাহলে একটা চমকপ্রদ গল্প বলি শুনুন।

তারাতলাবাসী যুবক সুরঞ্জন দত্তচৌধুরীকে (নাম পরিবর্তিত) একডাকে আশেপাশের মানুষ চেনে। সুরঞ্জন এলাকার একজন নামকরা ব্যায়ামবীর। রোগজ্বালা না থাকায় শক্তপোক্ত সুরঞ্জনের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি খুব একটা। এহেন ট্রাইসেপ বাইসেপধারীর হঠাৎ করে একদিন পেটের বাঁদিকে ব্যাথা শুরু হল। হজমের গোলমাল ভেবে গোটা কয়েক এন্টাসিড খেয়ে সে দিব্যি চালিয়ে দিল কয়েকদিন। কিন্তু দিন যত যায় সুরঞ্জনের ব্যাথাও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। শেষটায় আর সহ্য করতে না পেরে সে পাড়ার এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হল। তিনিও পাকস্থলীর সমস্যা ভেবে দু একটা ওষুধ লিখে দিলেন। তাতে ব্যথা তো কমলই না বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলল। অবশেষে সুরঞ্জন যোগাযোগ করল জেনেসিস হাসপাতালে ডাঃ পূর্ণেন্দু রায়ের সাথে। সমস্ত উপসর্গ শুনে তিনি আল্ট্রাসোনোগ্রাফির নির্দেশ দিলেন। যথাসময় রিপোর্টে দেখা গেল সুরঞ্জনের গলস্টোন অর্থাৎ পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। কিন্তু তার সাথে যে অদ্ভুত বিষয়টি ধরা পড়ল তাতে করে সুরঞ্জনের হাঁ হয়ে যাওয়া মুখ আর কিছুতেই বন্ধ হতে চাইল না।

ডাঃ রায় বললেন সুরঞ্জনের সাইটাস ইনভার্সাস (situs inversus) রয়েছে। ভাবছেন এ আবার কি গোলমেলে রোগ ? না, এটা ঠিক রোগ নয়। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী এটি একরকম অবস্থা, যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি তাদের স্বাভাবিক জায়গার বদলে তাদের ঠিক উল্টোদিকে থাকে। একটু খোলসা করে বলি। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ডের বাম কক্ষপথ এবং বাম ফুসফুস শরীরের ডান দিকে অবস্থান করে। লিভার, ডানদিকের বদলে থাকে বাঁদিকে এবং পাকস্থলী বাঁদিকের বদলে ডানদিকে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই পিত্তথলিও ডানদিকের বদলে বাঁদিকে থাকে। সুরঞ্জনের ক্ষেত্রে ঠিক যেটা হয়েছে। এবং সেই কারণেই সুরঞ্জনের বাঁদিকে ব্যাথা হচ্ছিল, যাকে পূর্বতন চিকিৎসক পাকস্থলীর ব্যাথা ভেবে ভুল করছিলেন। অতএব এখন বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন উঠতে পারে, যেমন - 


সাইটাস ইনভার্সাস হওয়ার কারণ কি ?
বিভিন্ন জটিল জিনগত সমস্যার কারণে এই অবস্থার সূত্রপাত। অত্যন্ত দুর্লভ হলেও এটা দেখতে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০,০০০ মানুষের মধ্যে একজনের সাইটাস ইনভার্সাস হয়। যমজ "মিরর ইমেজ" শিশুদের মধ্যেও এটা দেখতে পাওয়া যায়।

কত রকমের হয় ?
সাধারণত দু ধরণের হয়। ডেক্সট্রোকার্ডিয়া (dextrocardia) এবং লেভোকার্ডিয়া (levocardia) হৃদপিণ্ড অন্যদিকে থাকলে ডেক্সট্রোকার্ডিয়া এবং বাকি অঙ্গগুলি উল্টোদিকে থাকলে লেভোকার্ডিয়া বলে। তবে সমস্ত অঙ্গ উল্টোদিকে থাকলে বলা হয় সাইটাস ইনভার্সাস টোটালিস।  

এর উপসর্গ কি কি ?

উল্টোদিকে থাকা সত্ত্বেও যেহেতু অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ করে তাই সাধারণত কোনো উপসর্গ পাওয়া যায় না। সুতরাং গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসার কোনো কারণ নেই।

কিভাবে জানতে পারবেন ?
এক্স রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করলে তবেই জানা যায়। শুধু খেয়াল রাখবেন তলপেটের বাঁদিকে এপেনডিক্সের মতো ব্যাথা হচ্ছে না তো ! সেক্ষেত্রে ডানদিকের বদলে বাঁদিকে এপেন্ডিক্স থাকতে পারে। তবে একজন চিকিৎসকের পক্ষে হার্টবিট শুনে বলে দেওয়া সম্ভব সাইটাস ইনভার্সাস আছে কিনা। 

এক্ষেত্রে কি করণীয় ?
সাধারণ রোগ যেভাবে চিকিৎসা করা হয় এক্ষেত্রেও তাই হবে। তবে দিকপরিবর্তনের জন্য চিকিৎসকের সামান্য সমস্যা হতে পারে। তাই বলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সঠিক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য জেদ ধরে থাকবেন না। তাতে কিন্তু আবার অন্য বিপদ। বরং যেমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চলছে তেমনই চলতে দিন।

ডাঃ পূর্ণেন্দু রায় (Dr.Purnendu Roy) অবশ্য সুরঞ্জনের গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার সফলভাবেই করেছিলেন। সুরঞ্জন, তার এই বিরল অবস্থার কথা প্রথমটায় বিশ্বাস করেনি যদিও, তবে ডাঃ রায়ের চিকিৎসা ও আশ্বাসবাণীতে সে এখন একেবারেই সুস্থ। বলা চলে দ্বিগুন উৎসাহে সে এখন শারীরিক কসরত করে চলেছে। সুতরাং আপনি যদি এহেন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তাহলে একেবারেই ভয় পাবেন না। আপনার অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমনই থাকুক না কেন, কোনো রকম উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে জেনেসিস হাসপাতালে (www.genesishospital.co) যোগাযোগ করুন। এখানে সোজা উল্টো সবরকম রোগেরই চিকিৎসা হয়।

#genesishospitalkolkata #situsinversus #gastroeneterology #asprescribed #bengalimedicalarticle #medicalblog #medicine #drpurnenduroy