Saturday 20 April 2019

ফাইব্রয়েড থেকে ক্যান্সার !



উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির গৃহবধূ ঊর্মিলা বসাক গত কয়েকমাস ধরে এক বিচিত্র পেটের ব্যাথায় ভুগছিলেন। তার সাথে যোগ হয়েছিল ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ। মাঝে পাড়ার একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে নিয়ম করে ৭ দিন বেশ কয়েকটা গ্যাস-অম্বলের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। তাঁর স্বামী ভদ্রলোকটি অতিরিক্ত রকম যোগাসন প্রিয় ব্যক্তি। তিনি নির্দ্বিধায় ঊর্মিলাকে উষ্ট্রাসনের উপদেশ দিয়ে চুপচাপ নিজের কাজে মন দিয়েছিলেন। অবস্থা যখন প্রায় হাতের বাইরে চলে যায় অর্থাৎ ঊর্মিলার যখন অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হতে থাকে তখন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন। পরীক্ষা করার পর জানা যায় ঊর্মিলার ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড হয়েছে এবং সার্জারির প্রয়োজন আছে। এখানে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডটা ঠিক কি। 
    
ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (uterine fibroid) হল একধরণের টিউমার যা জরায়ুর মধ্যে হয়। এই টিউমারগুলি পেশীর ফাইবার দ্বারা গঠিত হলেও জরায়ুর মায়োমেট্রিয়ামের (uterine wall - myometrium) তুলনায় অনেক বেশি ঘন হয়। এই টিউমার সাধারণত বৃত্তাকার হয় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোনোরকম ব্যথা হয় না। তবে ফাইব্রয়েড যদি আকারে বড় হয় সেক্ষেত্রে ব্লাডার বা অন্যান্য অঙ্গে বেশ চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই ফাইব্রয়েড বেশ কয়েক ধরণের হতে পারে। এর অবস্থান অনুযায়ী নিম্নলিখিত ভাবে তাদের ভাগ করা হল।

১. সাবসেরোসাল ফাইব্রয়েড (Subserosal fibroid) - জরায়ুর বহিঃস্তরে এই ফাইব্রয়েড হয়।
২. সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড (Submucosal fibroid) - জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আস্তরণের নিচে এই ফাইব্রয়েডটি হয়।
৩. ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড (Intramural fibroid) - জরায়ুর পেশিতে হয়।
৪. পেডানকুলেটেড ফাইব্রয়েড (Pedunculated fibroid) - এই ফাইব্রয়েড কতকটা ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে যা জরায়ুর বহির্ভাগে হয়।
৫. ইন্ট্রাক্যাভিটারি ফাইব্রয়েড (intracavitary fibroid) - এটি জরায়ুর অভ্যন্তরে হয়। এর ফলে যৌনমিলনে যথেষ্ট ব্যাথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।

এর উপসর্গ কি কি ?
সাধারণত এর কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, ফলে যাঁর ফাইব্রয়েড আছে তিনিও এর উপস্থিতি নাও টের পেতে পারেন। তবু কিছু কিছু জটিলতার আভাস আগে থেকে পাওয়া যায় যেমন - জরায়ু থেকে রক্তপাত, একটানা অনেকদিন ধরে ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাবের সময় যথেষ্ট ব্যাথা, অত্যাধিক ঋতুস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাতে রক্তাল্পতা, যথেষ্ট ব্যাথা অনুভূত হওয়া, পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, প্রস্রাব বেশি হওয়া বা আটকে যাওয়া ইত্যাদি। 
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফাইব্রয়েড থাকলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। যার ফলে বারে বারে গর্ভপাতও হতে পারে। এর সাথে অতিরিক্ত রক্তপাতও হতে পারে। যদি সময়মতো ফাইব্রয়েড নির্মূল না করা হয় তাহলে পরবর্তীকালে গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এখন যে প্রশ্নটা মনে আসে, তা হল -

ফাইব্রয়েড হওয়ার কারণ কি ?
এখনো অবধি কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলা যায়নি, তবে কিছু কিছু সম্ভাবনা থাকতে পারে যেমন - জিনগত জটিলতা, পারিবারিক ইতিহাসে ফাইব্রয়েডের উপস্থিতি, ভাস্কুলার সিস্টেমে অস্বাভাবিকতা, উচ্চ রক্তচাপ বা ইস্ট্রোজেনের কারণেও ফাইব্রয়েড হতে পারে।

ফাইব্রয়েড থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে ?
সাধারণত জরায়ুর ফাইব্রয়েড কোনোরকম সমস্যা করে না। তবে এই ফাইব্রয়েড যদি খুব তাড়াতাড়ি আকারে বড় হতে থাকে তাহলে বেশ চিন্তার বিষয় আছে। এর কারণ লিওমায়োসার্কোমা (leiomyosarcoma) নামে একধরণের বিরল ক্যান্সার আছে যা এক্ষেত্রে হতেই পারে। যেটা ভয়ের কথা তা হল আল্ট্রাসাউন্ড বা এম.আর.আই পরীক্ষায় আলাদা করে একে ক্যান্সার ফাইব্রয়েড বলে চেনা যায় না। তবে এই ধরণের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা ১% এরও নিচে। তাই ফাইব্রয়েড হলে তাকে ফেলে না রেখে সত্বর একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  

এর চিকিৎসা কি ?
ফাইব্রয়েডের আকার অনুযায়ী এর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। অর্থাৎ ফাইব্রয়েড যদি বড় হয় তাহলে কয়েকটা সার্জারির মাধ্যমে তা পুরোপুরি নির্মূল করা হয়, যেমন -

# হিস্টেরেক্টমি (hysterectomy) - এই পদ্ধতির মাধ্যমে ফাইব্রয়েড সহ সম্পূর্ণ জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়। ওপেন সার্জারি, ল্যাপারোস্কপি বা NDVH-এর সাহায্যে হিস্টেরেক্টমি করা হয়।
 
# মায়োমেক্টমি (myomectomy) - এই পদ্ধতিতে ওপেন সার্জারি, ল্যাপারোস্কপি বা হিস্টেরেস্কোপির সাহায্যে জরায়ুকে যথাস্থানে রেখে শুধুমাত্র ফাইব্রয়েড কেটে বের করা হয়।

এছাড়া আরও কিছু পদ্ধতি আছে যার সাহায্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বের করে আনা হয়।   
বেশ কিছু ওষুধও আছে যার সাহায্যে ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা করা হয়। জেনে রাখা ভালো যে এই সমস্ত ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তবে এই চিকিৎসা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।  বরং ফাইব্রয়েডের হাত  থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি পেতে গেলে অস্ত্রোপচারই সর্বশ্রেষ্ঠ  উপায়। সুতরাং একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ যে অবশ্যই নিয়ে নেওয়া উচিত সেটা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই ধরণের অস্ত্রোপচারের সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন জেনেসিস হাসপাতালে (Genesis Hospital)  এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২৪২৪২ / ৮৫৮৪৮৮৩৮৮৪

#GenesisHospitalKolkata #uterinefibroids #leiomyosarcoma #hysterectomy #myomectomy #Prescriptiontheke 

No comments:

Post a Comment