Saturday 18 May 2019

ডায়াবেটিস থেকে মৃত্যু ?

হ্যাঁ তা হতেই পারে। চোরাগোপ্তা মিষ্টি খাওয়া, সর্বোপরি ডায়বেটিসের রুগী হওয়া সত্ত্বেও নোলার আবেগকে সামলে না রাখতে পারাটা কিন্তু আখেরে বিপদের সম্ভাবনাকে বহুগুন বাড়িয়ে তোলে। আর এই বিপদ কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আপনার মিষ্টি প্রীতিকে তোয়াক্কা না করে আপনার প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নিই কি কি হতে পারে। 


# হৃদরোগ - ডায়াবেটিস কিন্তু বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। করোনারি ধমনীর সমস্যা, সাথে বুকে ব্যথা (এনজিনা), হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং ধমনীর সংকোচন (এথেরোস্ক্লেরোসিস)। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 






# নার্ভ ড্যামেজ বা নিউরোপ্যাথি - অতিরিক্ত শর্করা, আপনার স্নায়ুকে পুষ্ট করে এমন ক্ষুদ্র রক্তবাহী জালিকার দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে আপনার পায়ের স্নায়ু। এতে সাধারণত হাতের বা পায়ের আঙুলের প্রান্তভাগে জ্বলুনি বা ব্যথা হতে পারে যা ধীরে ধীরে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পাচন সম্পর্কীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে বমি, ডায়ারিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 




# চোখের সমস্যা বা রেটিনোপ্যাথি - ডায়াবেটিস রেটিনার রক্তবাহী জালিকার ক্ষতি করতে পারে, যা সম্ভাব্য অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য মারাত্মক অবস্থার ঝুঁকি বাড়ে, যেমন ছানি পড়া, গ্লোকোমা ইত্যাদি। 

# পায়ের সমস্যা - পায়ের স্নায়ু যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা রক্ত প্রবাহ সঠিক না হয় তাহলে নানান রকমের জটিলতা তৈরী হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অল্প কাটা-ছেঁড়াতেই সংক্রমণ হতে পারে। তেমন মারাত্মক হলে পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতা বা গোটা পা'টাই বাদ দিতে হতে পারে।

# ত্বকের সমস্যা - ডায়াবেটিসে ত্বকের সমস্যা হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ এক্ষেত্রে হতেই পারে। 

# কানের সমস্যা - ডায়াবেটিসে শুনতে না পাওয়া বা কম শোনার সমস্যাটা অত্যন্ত সাধারণ।  

# আলঝেইমার্স ডিজিজ - টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ডিমেনশিয়া নামক এক রকম স্নায়ুর রোগ হতে পারে যা হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়ে যায়। যেমন - আলঝেইমার্স ডিজিজ। জেনে রাখুন, ব্লাড সুগার যত অনিয়ন্ত্রিত থাকবে ততই এই রোগের ঝুঁকি বাড়বে। 

# বিষন্নতা - টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিক রুগীদের মধ্যে বিষন্নতার বিভিন্ন উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। এটা কাটিয়ে না উঠতে পারলে চিকিৎসায় বেশ সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

এর পাশাপাশি কয়েকটা জরুরি জিনিস জেনে রাখা দরকার। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য তারা হল উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থুলতা। আসুন এই প্রসঙ্গে একটু আলোকপাত করা যাক।

উচ্চ রক্তচাপ - ফেলুদা-তোপসে বা ব্যোমকেশ-অজিতের মতো উচ্চ রক্তচাপ আর ডায়াবেটিস হল বিখ্যাত মানিকজোড়। সাধারণত এদেরকে একইসাথে দেখতে পাওয়া যায়। এইটা যাঁদের আছে তাঁরা এই লাইনটা পড়ে নিশ্চই এখন ঘাড় নাড়ছেন। সেক্ষেত্রে বলি এতটাও আনন্দিত হবার কিছু নেই। এই মারাত্মক জুটির কারণে কিডনি, চোখ, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই রোগে আর যা যা হয় তা হল :

# রক্তনালীর প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়
# শরীরে তরলের পরিমান বৃদ্ধি পায়
# শরীরের ইনসুলিন পরিচালনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয় 
# হৃদরোগের সমস্যা বাড়ে
এই সমস্ত ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে এবং সঠিক ডায়েট ও ওষুধের মাধ্যমে সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে হবে। 

মেটাবলিক সিনড্রোম - ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন বিরাট ভূমিকা পালন করে। বংশগত কারণ বা পেশাগত কারণে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অল্প বয়েসে মাত্রাতিরিক্ত ওজন মানুষকে প্রিডায়াবেটিক থেকে ডায়াবেটিকে রূপান্তরিত করে। আর এই ওজনের সমস্যা থেকে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গগুলি পৃথকভাবে বা একসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হল সুষম আহার বা খাদ্যের মাত্রা কম করা। তার সাথে সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে বা ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে যাঁরা স্থুলতায় ভুগছেন তাঁরা অনেকাংশেই স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলবেন। আর যাঁরা ভুগছেন না তাঁরা অনর্থক ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে রেহাই পাবেন। 

মেডিক্যাল নিউট্রিশন থেরাপি :
পথ্যের গুরুত্ব মেটাবলিক রোগে অপরিসীম। জীবন, জীবিকা, ওজন, কিডনির ক্ষমতা - এই সমস্ত কিছু বিবেচনা করেই তৈরী হওয়া উচিত ডায়েট চার্ট । ‘ভালো খাবার - ভালো মন’ এই যোগাযোগটা চিন্তা করে একজন নিউট্রিশনিস্ট এবং একজন চিকিৎসক যুগ্মভাবে আপনার ডায়েট চার্ট তৈরী করে দেবেন। তবে যতক্ষণ না সেই চার্ট হাতে পাচ্ছেন ততক্ষন অবধি নিচের চার্টটা একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে শুরু করতে পারেন।

ভোরের দিকে : ১ কাপ চিনি ছাড়া চা, সাথে ১/২ বিস্কিট হোক।
জল+খাবার : ১ প্লেট উপ্ মা বা ওট্ স, সাথে একটা ফল বা এক কাপ লেবু জল - এই অভ্যাসটা চালু করুন।
ঠিক দুপুরবেলা : ২টো আটার রুটি, ১ বাটি ভাত, ১ বাটি ডাল, আধবাটি সবজি বা সোয়াবিন, ১/২ পিস্ মাছ এবং শেষ পাতে টক দই আর স্যালাড রাখুন।
বিকেল বিকেল : ১ কাপ চিনি ছাড়া চা, সাথে ১/২ বিস্কিট আর স্বাদবদলের জন্য ১ কাপ স্যুপ খেতে পারেন।
রাতকাবারি : ২ টো আটার রুটি,  ১ বাটি ডাল, আধবাটি সবজি আর স্যালাড হলে সবচেয়ে ভালো। এক-দু পিস্ চিকেন রাখতে পারেন থালার পাশে কিন্তু জমিয়ে রান্না করা কষা মাংসটা নৈব নৈব চ। ঘুমানোর আগে সামান্য দুধ (চিনি ছাড়া) খেতে পারেন।



যে সমস্ত দিকে আর কখনোই ভুলে তাকাবেন না তা হল - রেড মিট, তেল - চর্বি জাতীয় খাবার, সাদা ময়দা, আলু, গাজর এবং নুন। এছাড়া মিষ্টির দোকানের আশপাশ দিয়েও যে যাবেন না সেটা বলাই বাহুল্য। ফুরফুরে মেজাজে থাকার চেষ্টা করুন আর ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। 

সুতরাং এই সমস্ত কঠিন রোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে আজ থেকেই ব্যবস্থা নিন। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নয়ত দেরি হয়ে গেলে যে বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়বে এ নিশ্চই দিব্যি বুঝতে পারছেন। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়ত ভাবছেন যে আমার তো অনেক বছরই হল, কই তেমন সাংঘাতিক তো কিছু হয় নি। তাঁদের প্রথমেই অনেক অভিনন্দন কারণ আপনারা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না, তাঁদের বলব, নিজের কথা না হোক অন্ততপক্ষে বাড়ির আপনজনদের কথা তো একবার ভেবে দেখুন ! আপনার বিপদ মানে যে তাদেরও বিপদ সেটা ভুলে যাচ্ছেন কেন ? সুতরাং যতদিন এই ধরাধামে থাকার সুযোগ পেয়েছেন ততদিন সুস্থ হয়ে বাঁচুন।

আর তেমন হলে জেনেসিস হাসপাতালের ডায়াবেটিক ক্লিনিক তো আছেই, চিন্তা কি ! ফোন করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২৪২৪২ / ৪০২২৪২৪২

#diabetes #heartproblems #neoropathy #retinopathy #alzheimer'sdisease #asprescribed #medicalissues #GenesisHospitalKolkata

No comments:

Post a Comment