Saturday 25 May 2019

স্তন্যপানের পদ্ধতিতে বিপদ !

পলাশ - ঝুমুরের বাড়িতে আজ খুশির রোশনাই। দীর্ঘ চার বছর পর ঝুমুরের কোলে এসেছে একটা মোম মোম গড়নের ফুটফুটে পুতুল। যার চোখের বিস্ময় আর কচি হাত পায়ের ছটফটানিতে গোটা বাড়ি নিশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছে না। এদিক ওদিক থেকে নানান রকম উপদেশ, পরামর্শে পলাশ-ঝুমুর এর মধ্যেই জেরবার হয়ে উঠেছে। কি করে কোলে নেওয়া উচিত, কেমন করে দুধ খাবে, কখন খাওয়াতে হবে, কিভাবে শোয়াতে হবে এমন নানান ফরমায়েশি বিধানে দুজনের হাঁপিয়ে ওঠার জোগাড়। 

সদ্য বাবা মায়েদের বলি, কমবেশি এমনটা হয়ত সমস্ত নবজাতকের বাড়িতেই ঘটে থাকে। অযথা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং স্তন্যপানের সঠিক তথ্য ও পদ্ধতিগুলি জেনে নিন।

WHO-র তথ্য অনুযায়ী শিশুকে অন্তত দু’বছর পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো উচিত এবং প্রথম ছ’মাস মাতৃদুগ্ধই দেওয়া উচিত। মাতৃদুগ্ধের বিবর্তন অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়।https://parenting.firstcry.com/articles/breast-milk-colour-whats-normal-whats-not/ 

১. কোলোস্ট্রাম - হলদেটে রঙের ঘন রসের নাম কোলোস্ট্রাম, যা উচ্চ প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন সমৃদ্ধ। মাতৃদুগ্ধের প্রাথমিক পর্যায় এবং শিশুর জন্মের দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত এটা থাকে।

২. রূপান্তরমুখী দুধ - এর স্থায়িত্ব দু’সপ্তাহ মতো। এতে প্রচুর পরিমান ফ্যাট, ল্যাকটোজ, জলে দ্রাব্য ভিটামিন থাকে এবং এর ক্যালোরি কোলোস্ট্রামের থেকে বেশি হয়।

৩. পরিণত দুধ - এটি চূড়ান্ত পর্যায়ের মাতৃদুগ্ধ। এই দুধের ৯০% জল যা শিশুর শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। বাকি ১০% কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট, যা শিশুর বেড়ে ওঠা এবং শক্তির জন্য দরকার।

যখনই শিশুর খিদে পাবে তখনিই ওকে স্তন্যপান করান। একে বলে চাহিদা অনুযায়ী দুগ্ধপান। প্রথম কয়েক সপ্তাহ মাকে হয়ত প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৮ থেকে ১২ বারও দুগ্ধপান করাতে হতে পারে। তাছাড়া শিশুর পাশাপাশি মায়েরও শিশুকে স্তন্যপান করানো জরুরি। এই সুবিধাগুলি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।

স্তন্যপানে শিশুর সুবিধা -
# সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে উপযুক্ত পুষ্টি যোগায়
# প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
# ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে 
# পাচনতন্ত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করে
# মায়ের সাথে বন্ধন গড়ে তোলে

স্তন্যপানে মায়ের সুবিধা -
# উপকারী হরমোন তৈরী করে
# অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায়
# অপরিকল্পিত গর্ভসঞ্চারের আশঙ্কা কমায়
# প্রসবের পরে দেহের স্থুলতা প্রতিরোধ করে
# স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে




স্তন্যপানের নির্দেশিকা 

স্তন্যপান করানোর কিছু পন্থা বা নিয়ম আছে যেগুলো মেনে চললে মা এবং শিশু দুজনেরই উপকার হয় । অনেকেই হয়ত এ বিষয়ে জানেন না যার ফলে অধিকাংশ সময়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিচে বিশদে দেওয়া হল।

সঠিক পদ্ধতি 
# শিশুর মুখ বড় করে খোলা, ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো
# শিশুর চিবুক আর নাক স্তনের ওপর রাখা
# এরোলার বেশিরভাগ অংশই শিশুর মুখের মধ্যে থাকা      উচিত
# ছোট ছোট তীব্র টানের ছন্দে দুগ্ধপান
# দুধ গিলে নেওয়ার শব্দ শোনা যাবে
# প্রথম কয়েকবার দুধ টানার পরে স্তনবৃন্তে আরাম


ভুল পদ্ধতি
# শিশুর মাথা তার দেহের সাথে যখন সরলরেখায় নেই
# শিশু কেবল স্তনবৃন্ত থেকে দুধ খাচ্ছে, এরোলা মুখের মধ্যে নেই
# ছোট ছোট টানে দুগ্ধপান, স্বাভাবিক টানে নয়
# শিশুর গাল ভিতরে ঢুকে রয়েছে, মুখে কুলকুচোর শব্দ পাচ্ছেন
# দুধ গিলে নেওয়ার শব্দ নেই
# স্তনবৃন্তে সর্বক্ষণ ব্যাথা বা ফেটে যাওয়া


মনে রাখবেন, স্তন্যপান করানোর সময় আপনি যদি রিল্যাক্সড থাকেন তাহলে সহজেই শিশুর কাছে দুধ পৌঁছবে। এক্ষেত্রে হেলান দেওয়া চেয়ারে বসাটা খুব উপকারী। শিশুকে আপনার দিকে আনুন, আপনি শিশুর দিকে ঝুঁকে পড়বেন না। তাহলে আপনার ঘাড় ও কাঁধে চাপ পড়বে এবং শিশুর অবস্থানেও ক্ষতি হবে। 

খেয়াল রাখবেন শিশুর মুখে স্তনবৃন্তটি যেন সঠিকভাবে পৌঁছায়, সেজন্য আপনাকে স্তন ধরে রাখতে হতে পারে। স্তনের পাশ থেকে সি (C) - এর মতো অথবা ইউ (U) এর মতো করে ধরুন। আপনার আঙুল যেন স্তনবৃন্ত থেকে খানিকটা দূরত্বে থাকে যাতে শিশুটির স্তন্যপানে অসুবিধে না হয়। 

বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, বসা অবস্থায় শিশুর মাথা আপনার কনুইয়ের ভাঁজে রাখতে হবে। শিশুর নাক যেন স্তনবৃন্তের সাথে এক সরলরেখায় থাকে। 

তবে সাবধান ! সাইড-লায়িং অবস্থানে কখনোই স্তন্যপান করাবেন না। এতে শিশুর শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে জীবন সংশয় হতে পারে। পাশের ছবিগুলি দেখে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। 

এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার যে, ভারত সরকারের শ্রমমন্ত্রক দ্বারা ঘোষিত এবং মেটার্নিটি বেনিফিটস অ্যাক্ট, ১৯৬১ অনুযায়ী চাকুরীজীবি মায়েরা ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন।


এই সংক্রান্ত তথ্য বিশদে জানতে হলে যোগাযোগ করুন জেনেসিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। এপয়েন্টমেন্টের জন্য ক্লিক করুন - https://www.genesishospital.co/doctors অথবা ফোন করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২ ৪২৪২ 

এর পাশাপাশি আপনার কোনো জরুরি প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন। উত্তর দেবেন জেনেসিস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

Tags: how to breast feed a baby ; the right methods of breastfeeding ; breast feeding techniques ; Genesis Hospital Kolkata ;  Prescription Theke

No comments:

Post a Comment