Friday 29 June 2018

কেস জণ্ডিস !

জণ্ডিস হলেই হলুদ খেতে বারণ করা হয়। তার কারণ হলুদের হলুদ বর্ণ জণ্ডিস বাড়িয়ে দিতে পারে এমন একটা চালু ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। এর সাথে যখন সেদ্ধ শাকসবজি এবং তেল,নুন ব্যতীত পথ্য চলতে থাকে তখন রোগীর সর্বপ্রকারে কেস জণ্ডিস হবার উপক্রম হয়। সদ্যজাতকের ক্ষেত্রে তা আরও মারাত্মক। জন্ডিস হলেই তার স্তন্যপান বন্ধ করে দিতে উদ্যত হন বাড়ির লোকজন। তাঁদের ধারণা মাতৃদুগ্ধের বদলে জল খাওয়ালে বোধহয় শিশুটি তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠবে। জেনেসিস হাসপাতালের কর্ণধার ডাঃ পূর্ণেন্দু রায় বলছেন, এই সমস্ত চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধে নেই কিন্তু কার্যকরী করতে যাবেন না তার কারণ এর ফল মারাত্মক হতে পারে।   
প্রথমেই যেটা ভালো করে জেনে রাখা দরকার তা হল জণ্ডিস কোনো রোগ নয়। অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলেই জণ্ডিস দেখা দেয়। প্রতি ১২০ দিন অন্তর পুরোনো লোহিত রক্ত কণিকা (RED BLOOD CELLS) নষ্ট হয়ে আবার নতুন লোহিত রক্ত কণিকার জন্ম হয়। এর ফলে বিলিরুবিন তৈরী হয় যা শরীরের অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের সাথে বেরিয়ে যায়। কোনো সমস্যার ফলে এই বিলিরুবিন শরীর থেকে বেরোতে না পারলেই তা জমা হতে থাকে যার ফলস্বরূপ জণ্ডিস হয়। বলাই বাহুল্য জণ্ডিস হলে ত্মক ও চোখের বর্ণ হলুদ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগ অনুযায়ী এর উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। খুব সাধারণ উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হল। 

উপসর্গ 
# প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ 
# ত্মকের চুলকানি 
# বমি ভাব বা বমি হওয়া 
# ডায়ারিয়া 
# জ্বর 
# শারীরিক দুর্বলতা 
# ওজন হ্রাস পাওয়া 
# খিদে না হওয়া 
# পেটে ব্যাথা 
# পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি 

কোন কোন রোগে জণ্ডিস হয় সেটা আগের থেকেই জেনে রাখা দরকার। সেইমত চিকিৎসা করলে উপযুক্ত ফল পাওয়া যায়। জণ্ডিসের কারণ অনুযায়ী সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়। মেডিক্যাল জণ্ডিস এবং সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস। এই দুই কারণের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্টতা আছে যা বিশদে আলোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। 

মেডিক্যাল জণ্ডিস যে যে কারণে হয় তা হল - 
# হেপাটাইটিস (A,B,C,D,E)
# ম্যালেরিয়া  
# ডেঙ্গু 
# সিক্ল সেল ডিজিজ (Sickle cell disease)
# স্ফেরোসাইটোসিস 
# সিরোসিস 
# অতিরিক্ত মদ্যপান 
# ড্রাগ সেবন 
# গিলবার্টস সিনড্রোম (Gilbert's syndrome) ইত্যাদি 
সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস যে যে কারণে হয় তা হল -
# পিত্তথলিতে পাথর 
# ক্যান্সার (অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, পিত্তথলির ক্যান্সার, বাইল ডাক্টের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার)
# প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস 
# কোল্যাঞ্জাইটিস 
# বাইল ডাক্টে কোনো বাধা বা সমস্যা ইত্যাদি 

এর চিকিৎসা কি ?
মেডিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। যেমন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, লিভার ফাঙ্কশন টেস্ট অথবা ইউরিন্যালিসিস। এরপর সঠিক রোগ নির্ণয় করে রোগ অনুযায়ী ওষুধ বা এন্টিবায়োটিক খেলে জণ্ডিস আপনিই সেরে যাবে। এছাড়া প্রচুর পরিমানে জল খেতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং মদ্যপান থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হবে। তবে সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস হলে পিত্তথলি বা অগ্ন্যাশয়ের সার্জারি করিয়ে নিতে হবে এবং বাইল ডাক্টের সমস্যাতে এন্ডোস্কোপি করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। শিশুদের ক্ষেত্রে ফোটোথেরাপি একটি অত্যন্ত স্বীকৃত মাধ্যম।  

সুতরাং জণ্ডিস নিয়ে কোনোরকম টোটকার বশবর্তী হবেন না। শিশুদের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধই শ্রেষ্ঠ। জণ্ডিসের সময় স্তন্যপানে বঞ্চিত করবেন না, শিশুর ক্ষতি হতে পারে। বাকিরা পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। শুধুমাত্রই নিরামিষ খাবারের ওপর নির্ভর করতে হবে এমনটা নয় বরং স্বল্প পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে আপনার ডায়েট যেন সুষম হয় এবং তাতে যেন সমস্ত পুষ্টিগুণ থাকে। বাকি বিশ্রামে থাকুন আর অতিরিক্ত চিন্তা করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। 

#jaundice #hepatitis #liverproblems #gallstone #pancreatitis #endoscopy #medicaljaundice #obstructivejaundice