Tuesday 28 May 2019

লাম্প থেকে ক্যান্সার !


বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক ডঃ চিরন্তন সরকার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। উল্টোদিকে বসা অনকোলজিস্ট ডঃ চৌধুরী তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন। পশ্চিমের জানলা দিয়ে বিকেলের শেষ আলোটুকু পর্দা ভেদ করে টেবিলের ওপর রাখা একটা রিপোর্টের খাম ছুঁয়ে যাচ্ছে। ডঃ সরকার দু’হাতে মুখ ঢেকে বললেন, 'আমি জানতেই পারলাম না ! ডঃ চৌধুরী তাঁর সহকর্মীর হাত দুটি ধরে বললেন, 'শান্ত হও চিরন্তন, অকারণে নিজেকে দোষের ভাগী কোরো না। তোমার তো কিছু করার ছিল না। পেশেন্ট যদি কিছু না বলেন তুমি জানবেই বা কি করে' ? 

অশ্রুসিক্ত চোখে ডঃ সরকার ধীরে ধীরে রিপোর্টটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলেন। বললেন, 'মায়ের ব্রেস্ট টিউমারটা যদি বিনাইন অবস্থাতেই ধরতে পারতাম তাহলে বোধহয় আরও অনেকটা সময় পেতাম.......'

গল্পের এটুকু পড়ে নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে এক্ষেত্রে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। নিজে চিকিৎসক হওয়া সত্বেও মায়ের ব্রেস্ট টিউমারের বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন। তার কারণ এই ধরণের বিষয়গুলি আজও মহিলারা ডাক্তারের সমক্ষে আলোচনা করতে ইতস্তত বোধ করেন, যার ফল হয় মারাত্মক। স্তনে ছোট লাম্প বা মাংসপিণ্ড হলে কিভাবে সাবধান হবেন আসুন জেনে নিই।

বিনাইন ব্রেস্ট লাম্প কি :
স্তনের টিস্যুগুলি যখন ফুলে ওঠে বা পুরু হয়ে যায় তখন তাকে ব্রেস্ট লাম্প বলে। তবে ব্রেস্ট লাম্প মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। যেহেতু ক্যান্সার নয়, তাই একে বিনাইন ব্রেস্ট লাম্প বলা হয়। শরীরে হরমোনের পরিবর্তনেই ফলে অনেকেরই এই রোগটি হয়ে থাকে। সাধারণত ঋতুস্রাবের আগে বা গর্ভধারণের সময় হরমোনের পরিবর্তন হয় যার ফলে স্তনে লাম্প হতে পারে। এছাড়া কোনো আঘাত লাগলে বা স্তন্যপান করানোর সময়তেও এই সমস্যা হতে পারে।

লাম্পের রকমফের :
# ফাইব্রোএডিনোমা (Fibroadenoma) - অত্যন্ত পরিচিত এবং সাধারণ লাম্প, যা টিস্যু বৃদ্ধির কারণে হয়। সাধারণত ১৬ - ২৪ বছর বয়েসের মধ্যে হতে পারে।

# সিস্টোসারকোমা ফিলোডস টিউমার (Phyllodes tumor) - এই টিউমার হলে আগামী দিনে বেশ বড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা ৪০ - ৫০ বছর বয়েসের মধ্যে হয় এবং এই টিউমার সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলাই বাঞ্ছনীয়।

# ফ্যাট নেক্রোসিস (Fat necrosis) - এই ধরণের লাম্প বেশ শক্ত প্রকৃতির হয়। সাধারণত কোনো আঘাত লাগলে হতে পারে। 

# স্তনের সংক্রমণ (ম্যাসটাইটিস বা এবসেস) - সাধারণত স্তন্যপানের সময় এই সংক্রমণ হতে পারে।
# ডাক্ট এক্টাশিয়া (Duct Ectasia) - ঋতুবন্ধের সময় এই সমস্যা হতে পারে। স্তনের অভ্যন্তরীণ নালী বন্ধ হয়ে গিয়ে স্তনবৃন্তের তলায় লাম্প হতে পারে। অনেক সময় রক্তপাত হতেও দেখা গেছে।


উপসর্গ :
এমন বেশ কিছু উপসর্গ আছে যা আপনি নিজে থেকেই বুঝতে পারবেন যে কোনো একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমন, স্তনে বা বগলে কোনো লাম্প বা কঠিনভাব, স্তনের আকার বা আয়তনে পরিবর্তন, স্তনের ত্বকে ভাঁজ হওয়া বা কুঁচকে যাওয়া, স্তনবৃন্তের আকার বা অবস্থানে পরিবর্তন, স্তনবৃন্তের চারপাশে ফুসকুড়ি হওয়া স্তনবৃন্ত থেকে তরলের নির্গমন, স্তনের কোনো অংশে ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি। 
   
চিকিৎসা কি ?
এর চিকিৎসা নির্ভর করছে লাম্পের ধরণের ওপর। কিছু লাম্প আছে যাদের তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না যদি না সেই লাম্পের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় অথবা আকারে বেশ বড় হয়। তবে যে কোনো রকম লাম্প হলে প্রথমেই এফ.এন.এ.সি (FNAC - Fine Needle Aspiration Cytology) করিয়ে নেওয়া ভালো। যদি শুধুমাত্র পুঁজ জমা হয়ে থাকে তাহলে এন্টিবায়োটিকের সাহায্যে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এছাড়া লাম্পে যদি জল জমে তাহলেও তার চিকিৎসা আছে। তবে এটা যদি ফাইব্রোএডিনোমা বা ফিলোডস টিউমার হয় তাহলে সার্জারি করিয়ে নিয়ে বায়োপসি করা উচিত। কিন্তু ক্যান্সার ধরা পড়লে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য, ফ্যাট নেক্রোসিস হলে, সাধারণত আপনিই মিলিয়ে যায়।


সুতরাং ব্রেস্ট লাম্প খুব সাধারণ একটা ঘটনা হলেও একে হেলাফেলা না করাই ভালো। বলা তো যায় না, যদি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরোয় তাহলে কপাল চাপড়ানোর অবকাশ পাবেন না। তাই নিজের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আর উপরে উল্লিখিত কোনোরকম উপসর্গ দেখতে পেলেই অবিলম্বে যোগাযোগ করুন জেনেসিস হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। এপয়েন্টমেন্টের জন্য ফোন করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২ ৪২৪২। 

Tags : Benign Breast Lump ; Fibroadenoma ; Phyllodes Tumor ; Fat Necrosis ; Duct Ectasia ; Genesis Hospital Kolkata ; Prescription Theke

Saturday 25 May 2019

স্তন্যপানের পদ্ধতিতে বিপদ !

পলাশ - ঝুমুরের বাড়িতে আজ খুশির রোশনাই। দীর্ঘ চার বছর পর ঝুমুরের কোলে এসেছে একটা মোম মোম গড়নের ফুটফুটে পুতুল। যার চোখের বিস্ময় আর কচি হাত পায়ের ছটফটানিতে গোটা বাড়ি নিশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছে না। এদিক ওদিক থেকে নানান রকম উপদেশ, পরামর্শে পলাশ-ঝুমুর এর মধ্যেই জেরবার হয়ে উঠেছে। কি করে কোলে নেওয়া উচিত, কেমন করে দুধ খাবে, কখন খাওয়াতে হবে, কিভাবে শোয়াতে হবে এমন নানান ফরমায়েশি বিধানে দুজনের হাঁপিয়ে ওঠার জোগাড়। 

সদ্য বাবা মায়েদের বলি, কমবেশি এমনটা হয়ত সমস্ত নবজাতকের বাড়িতেই ঘটে থাকে। অযথা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং স্তন্যপানের সঠিক তথ্য ও পদ্ধতিগুলি জেনে নিন।

WHO-র তথ্য অনুযায়ী শিশুকে অন্তত দু’বছর পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো উচিত এবং প্রথম ছ’মাস মাতৃদুগ্ধই দেওয়া উচিত। মাতৃদুগ্ধের বিবর্তন অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়।https://parenting.firstcry.com/articles/breast-milk-colour-whats-normal-whats-not/ 

১. কোলোস্ট্রাম - হলদেটে রঙের ঘন রসের নাম কোলোস্ট্রাম, যা উচ্চ প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন সমৃদ্ধ। মাতৃদুগ্ধের প্রাথমিক পর্যায় এবং শিশুর জন্মের দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত এটা থাকে।

২. রূপান্তরমুখী দুধ - এর স্থায়িত্ব দু’সপ্তাহ মতো। এতে প্রচুর পরিমান ফ্যাট, ল্যাকটোজ, জলে দ্রাব্য ভিটামিন থাকে এবং এর ক্যালোরি কোলোস্ট্রামের থেকে বেশি হয়।

৩. পরিণত দুধ - এটি চূড়ান্ত পর্যায়ের মাতৃদুগ্ধ। এই দুধের ৯০% জল যা শিশুর শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। বাকি ১০% কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট, যা শিশুর বেড়ে ওঠা এবং শক্তির জন্য দরকার।

যখনই শিশুর খিদে পাবে তখনিই ওকে স্তন্যপান করান। একে বলে চাহিদা অনুযায়ী দুগ্ধপান। প্রথম কয়েক সপ্তাহ মাকে হয়ত প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৮ থেকে ১২ বারও দুগ্ধপান করাতে হতে পারে। তাছাড়া শিশুর পাশাপাশি মায়েরও শিশুকে স্তন্যপান করানো জরুরি। এই সুবিধাগুলি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।

স্তন্যপানে শিশুর সুবিধা -
# সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে উপযুক্ত পুষ্টি যোগায়
# প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
# ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে 
# পাচনতন্ত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করে
# মায়ের সাথে বন্ধন গড়ে তোলে

স্তন্যপানে মায়ের সুবিধা -
# উপকারী হরমোন তৈরী করে
# অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায়
# অপরিকল্পিত গর্ভসঞ্চারের আশঙ্কা কমায়
# প্রসবের পরে দেহের স্থুলতা প্রতিরোধ করে
# স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে




স্তন্যপানের নির্দেশিকা 

স্তন্যপান করানোর কিছু পন্থা বা নিয়ম আছে যেগুলো মেনে চললে মা এবং শিশু দুজনেরই উপকার হয় । অনেকেই হয়ত এ বিষয়ে জানেন না যার ফলে অধিকাংশ সময়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিচে বিশদে দেওয়া হল।

সঠিক পদ্ধতি 
# শিশুর মুখ বড় করে খোলা, ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো
# শিশুর চিবুক আর নাক স্তনের ওপর রাখা
# এরোলার বেশিরভাগ অংশই শিশুর মুখের মধ্যে থাকা      উচিত
# ছোট ছোট তীব্র টানের ছন্দে দুগ্ধপান
# দুধ গিলে নেওয়ার শব্দ শোনা যাবে
# প্রথম কয়েকবার দুধ টানার পরে স্তনবৃন্তে আরাম


ভুল পদ্ধতি
# শিশুর মাথা তার দেহের সাথে যখন সরলরেখায় নেই
# শিশু কেবল স্তনবৃন্ত থেকে দুধ খাচ্ছে, এরোলা মুখের মধ্যে নেই
# ছোট ছোট টানে দুগ্ধপান, স্বাভাবিক টানে নয়
# শিশুর গাল ভিতরে ঢুকে রয়েছে, মুখে কুলকুচোর শব্দ পাচ্ছেন
# দুধ গিলে নেওয়ার শব্দ নেই
# স্তনবৃন্তে সর্বক্ষণ ব্যাথা বা ফেটে যাওয়া


মনে রাখবেন, স্তন্যপান করানোর সময় আপনি যদি রিল্যাক্সড থাকেন তাহলে সহজেই শিশুর কাছে দুধ পৌঁছবে। এক্ষেত্রে হেলান দেওয়া চেয়ারে বসাটা খুব উপকারী। শিশুকে আপনার দিকে আনুন, আপনি শিশুর দিকে ঝুঁকে পড়বেন না। তাহলে আপনার ঘাড় ও কাঁধে চাপ পড়বে এবং শিশুর অবস্থানেও ক্ষতি হবে। 

খেয়াল রাখবেন শিশুর মুখে স্তনবৃন্তটি যেন সঠিকভাবে পৌঁছায়, সেজন্য আপনাকে স্তন ধরে রাখতে হতে পারে। স্তনের পাশ থেকে সি (C) - এর মতো অথবা ইউ (U) এর মতো করে ধরুন। আপনার আঙুল যেন স্তনবৃন্ত থেকে খানিকটা দূরত্বে থাকে যাতে শিশুটির স্তন্যপানে অসুবিধে না হয়। 

বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, বসা অবস্থায় শিশুর মাথা আপনার কনুইয়ের ভাঁজে রাখতে হবে। শিশুর নাক যেন স্তনবৃন্তের সাথে এক সরলরেখায় থাকে। 

তবে সাবধান ! সাইড-লায়িং অবস্থানে কখনোই স্তন্যপান করাবেন না। এতে শিশুর শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে জীবন সংশয় হতে পারে। পাশের ছবিগুলি দেখে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। 

এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার যে, ভারত সরকারের শ্রমমন্ত্রক দ্বারা ঘোষিত এবং মেটার্নিটি বেনিফিটস অ্যাক্ট, ১৯৬১ অনুযায়ী চাকুরীজীবি মায়েরা ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন।


এই সংক্রান্ত তথ্য বিশদে জানতে হলে যোগাযোগ করুন জেনেসিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। এপয়েন্টমেন্টের জন্য ক্লিক করুন - https://www.genesishospital.co/doctors অথবা ফোন করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২ ৪২৪২ 

এর পাশাপাশি আপনার কোনো জরুরি প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন। উত্তর দেবেন জেনেসিস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

Tags: how to breast feed a baby ; the right methods of breastfeeding ; breast feeding techniques ; Genesis Hospital Kolkata ;  Prescription Theke

Saturday 18 May 2019

ডায়াবেটিস থেকে মৃত্যু ?

হ্যাঁ তা হতেই পারে। চোরাগোপ্তা মিষ্টি খাওয়া, সর্বোপরি ডায়বেটিসের রুগী হওয়া সত্ত্বেও নোলার আবেগকে সামলে না রাখতে পারাটা কিন্তু আখেরে বিপদের সম্ভাবনাকে বহুগুন বাড়িয়ে তোলে। আর এই বিপদ কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আপনার মিষ্টি প্রীতিকে তোয়াক্কা না করে আপনার প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নিই কি কি হতে পারে। 


# হৃদরোগ - ডায়াবেটিস কিন্তু বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। করোনারি ধমনীর সমস্যা, সাথে বুকে ব্যথা (এনজিনা), হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং ধমনীর সংকোচন (এথেরোস্ক্লেরোসিস)। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 






# নার্ভ ড্যামেজ বা নিউরোপ্যাথি - অতিরিক্ত শর্করা, আপনার স্নায়ুকে পুষ্ট করে এমন ক্ষুদ্র রক্তবাহী জালিকার দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে আপনার পায়ের স্নায়ু। এতে সাধারণত হাতের বা পায়ের আঙুলের প্রান্তভাগে জ্বলুনি বা ব্যথা হতে পারে যা ধীরে ধীরে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পাচন সম্পর্কীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে বমি, ডায়ারিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 




# চোখের সমস্যা বা রেটিনোপ্যাথি - ডায়াবেটিস রেটিনার রক্তবাহী জালিকার ক্ষতি করতে পারে, যা সম্ভাব্য অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য মারাত্মক অবস্থার ঝুঁকি বাড়ে, যেমন ছানি পড়া, গ্লোকোমা ইত্যাদি। 

# পায়ের সমস্যা - পায়ের স্নায়ু যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা রক্ত প্রবাহ সঠিক না হয় তাহলে নানান রকমের জটিলতা তৈরী হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অল্প কাটা-ছেঁড়াতেই সংক্রমণ হতে পারে। তেমন মারাত্মক হলে পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতা বা গোটা পা'টাই বাদ দিতে হতে পারে।

# ত্বকের সমস্যা - ডায়াবেটিসে ত্বকের সমস্যা হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ এক্ষেত্রে হতেই পারে। 

# কানের সমস্যা - ডায়াবেটিসে শুনতে না পাওয়া বা কম শোনার সমস্যাটা অত্যন্ত সাধারণ।  

# আলঝেইমার্স ডিজিজ - টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ডিমেনশিয়া নামক এক রকম স্নায়ুর রোগ হতে পারে যা হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়ে যায়। যেমন - আলঝেইমার্স ডিজিজ। জেনে রাখুন, ব্লাড সুগার যত অনিয়ন্ত্রিত থাকবে ততই এই রোগের ঝুঁকি বাড়বে। 

# বিষন্নতা - টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিক রুগীদের মধ্যে বিষন্নতার বিভিন্ন উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। এটা কাটিয়ে না উঠতে পারলে চিকিৎসায় বেশ সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

এর পাশাপাশি কয়েকটা জরুরি জিনিস জেনে রাখা দরকার। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য তারা হল উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থুলতা। আসুন এই প্রসঙ্গে একটু আলোকপাত করা যাক।

উচ্চ রক্তচাপ - ফেলুদা-তোপসে বা ব্যোমকেশ-অজিতের মতো উচ্চ রক্তচাপ আর ডায়াবেটিস হল বিখ্যাত মানিকজোড়। সাধারণত এদেরকে একইসাথে দেখতে পাওয়া যায়। এইটা যাঁদের আছে তাঁরা এই লাইনটা পড়ে নিশ্চই এখন ঘাড় নাড়ছেন। সেক্ষেত্রে বলি এতটাও আনন্দিত হবার কিছু নেই। এই মারাত্মক জুটির কারণে কিডনি, চোখ, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই রোগে আর যা যা হয় তা হল :

# রক্তনালীর প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়
# শরীরে তরলের পরিমান বৃদ্ধি পায়
# শরীরের ইনসুলিন পরিচালনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয় 
# হৃদরোগের সমস্যা বাড়ে
এই সমস্ত ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে এবং সঠিক ডায়েট ও ওষুধের মাধ্যমে সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে হবে। 

মেটাবলিক সিনড্রোম - ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন বিরাট ভূমিকা পালন করে। বংশগত কারণ বা পেশাগত কারণে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অল্প বয়েসে মাত্রাতিরিক্ত ওজন মানুষকে প্রিডায়াবেটিক থেকে ডায়াবেটিকে রূপান্তরিত করে। আর এই ওজনের সমস্যা থেকে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গগুলি পৃথকভাবে বা একসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হল সুষম আহার বা খাদ্যের মাত্রা কম করা। তার সাথে সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে বা ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে যাঁরা স্থুলতায় ভুগছেন তাঁরা অনেকাংশেই স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলবেন। আর যাঁরা ভুগছেন না তাঁরা অনর্থক ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে রেহাই পাবেন। 

মেডিক্যাল নিউট্রিশন থেরাপি :
পথ্যের গুরুত্ব মেটাবলিক রোগে অপরিসীম। জীবন, জীবিকা, ওজন, কিডনির ক্ষমতা - এই সমস্ত কিছু বিবেচনা করেই তৈরী হওয়া উচিত ডায়েট চার্ট । ‘ভালো খাবার - ভালো মন’ এই যোগাযোগটা চিন্তা করে একজন নিউট্রিশনিস্ট এবং একজন চিকিৎসক যুগ্মভাবে আপনার ডায়েট চার্ট তৈরী করে দেবেন। তবে যতক্ষণ না সেই চার্ট হাতে পাচ্ছেন ততক্ষন অবধি নিচের চার্টটা একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে শুরু করতে পারেন।

ভোরের দিকে : ১ কাপ চিনি ছাড়া চা, সাথে ১/২ বিস্কিট হোক।
জল+খাবার : ১ প্লেট উপ্ মা বা ওট্ স, সাথে একটা ফল বা এক কাপ লেবু জল - এই অভ্যাসটা চালু করুন।
ঠিক দুপুরবেলা : ২টো আটার রুটি, ১ বাটি ভাত, ১ বাটি ডাল, আধবাটি সবজি বা সোয়াবিন, ১/২ পিস্ মাছ এবং শেষ পাতে টক দই আর স্যালাড রাখুন।
বিকেল বিকেল : ১ কাপ চিনি ছাড়া চা, সাথে ১/২ বিস্কিট আর স্বাদবদলের জন্য ১ কাপ স্যুপ খেতে পারেন।
রাতকাবারি : ২ টো আটার রুটি,  ১ বাটি ডাল, আধবাটি সবজি আর স্যালাড হলে সবচেয়ে ভালো। এক-দু পিস্ চিকেন রাখতে পারেন থালার পাশে কিন্তু জমিয়ে রান্না করা কষা মাংসটা নৈব নৈব চ। ঘুমানোর আগে সামান্য দুধ (চিনি ছাড়া) খেতে পারেন।



যে সমস্ত দিকে আর কখনোই ভুলে তাকাবেন না তা হল - রেড মিট, তেল - চর্বি জাতীয় খাবার, সাদা ময়দা, আলু, গাজর এবং নুন। এছাড়া মিষ্টির দোকানের আশপাশ দিয়েও যে যাবেন না সেটা বলাই বাহুল্য। ফুরফুরে মেজাজে থাকার চেষ্টা করুন আর ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। 

সুতরাং এই সমস্ত কঠিন রোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে আজ থেকেই ব্যবস্থা নিন। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নয়ত দেরি হয়ে গেলে যে বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়বে এ নিশ্চই দিব্যি বুঝতে পারছেন। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়ত ভাবছেন যে আমার তো অনেক বছরই হল, কই তেমন সাংঘাতিক তো কিছু হয় নি। তাঁদের প্রথমেই অনেক অভিনন্দন কারণ আপনারা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না, তাঁদের বলব, নিজের কথা না হোক অন্ততপক্ষে বাড়ির আপনজনদের কথা তো একবার ভেবে দেখুন ! আপনার বিপদ মানে যে তাদেরও বিপদ সেটা ভুলে যাচ্ছেন কেন ? সুতরাং যতদিন এই ধরাধামে থাকার সুযোগ পেয়েছেন ততদিন সুস্থ হয়ে বাঁচুন।

আর তেমন হলে জেনেসিস হাসপাতালের ডায়াবেটিক ক্লিনিক তো আছেই, চিন্তা কি ! ফোন করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২৪২৪২ / ৪০২২৪২৪২

#diabetes #heartproblems #neoropathy #retinopathy #alzheimer'sdisease #asprescribed #medicalissues #GenesisHospitalKolkata