Saturday 12 January 2019

ফুড অ্যালাৰ্জি থেকে মৃত্যু !



সদ্য বিবাহিত পরিমল ঠিক করল তার নববধূ অঞ্জলিকে একটা সারপ্রাইজ দেবে। পরিমল জানত অঞ্জলির সীফুড খাওয়ার বেশ শখ আছে। তাই এক শীতের দুপুরে, মায়াবী রোদের আলোয় দুজনে হাজির হল দক্ষিণ কলকাতার একটা নামি রেস্তোরাঁয়। অঞ্জলিকে অবাক করে দিয়ে পরিমল অর্ডার করল বিচিত্র কয়েকটা ডিশ। জিভে জল আনা সেসব খাবারের থালা যখন ওয়েটার টেবিলের ওপর সাজিয়ে দিয়ে গেল তখন অঞ্জলীর চোখে একরাশ বিস্ময় আর ভালোলাগার ঘোর। তবে বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল। ডিশগুলো শেষ করার পর পরই পরিমলের মুখ আর গলা চুলকাতে শুরু করল ভীষণরকম। দেখতে দেখতে ঠোঁটের চারপাশটা লাল হয়ে ফুলে উঠল আর সারা গায়ে, হাতে, পায়ে  বেরিয়ে গেল গোল গোল চাকা চাকা দাগ। সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে পরিমল নিজে সারপ্রাইজড হল দ্বিগুন। কোনোমতে বিল মিটিয়ে দুজনে ছুটল ডাক্তারের কাছে। সমস্তটা দেখে ডাক্তারবাবু বললেন পরিমলের ফুড অ্যালাৰ্জি হয়েছে। আসুন এই ফুড অ্যালাৰ্জির সম্বন্ধে একটু আলোকপাত করা যাক।

ফুড অ্যালাৰ্জি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। কম বেশি প্রায় সকলেরই কোনো না কোনো খাবার থেকে অ্যালাৰ্জি হয়ে থাকে। এর কারণ হল মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে নির্দিষ্ট একটি খাবারের প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং তার থেকেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল চাকা চাকা দাগ দেখা দেয়। সাধারণত শিশুদের মধ্যেই এই ফুড অ্যালাৰ্জির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই অবস্থাকে বলা হয় আর্টিক্যারিয়া বা হাইভ্স (hives)। এর উপসর্গগুলি অত্যন্ত পরিচিত হলেও আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

উপসর্গ
# ত্বকের কয়েকটি জায়গায় লাল হয়ে ফুলে ওঠা
# প্রচণ্ড চুলকানি হওয়া এবং কখনো কখনো জ্বালা হওয়া
# শ্বাসনালীর সমস্যা, সাথে হাঁচি বা কাশি
# মুখের চারপাশটা ফুলে ওঠা বা চুলকানি হওয়া
# খাবার গিলতে সমস্যা, বমিভাব বা পেটে ব্যাথা
# হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়ে আবার দেখা দেওয়া

কোন কোন খাবারে হতে পারে ?
নির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন কারণ এটা ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে। তবে সাধারণত যে সমস্ত খাবারের কারণে হয়ে থাকে তা হল - দুধ, ডিম, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, বেগুন ইত্যাদি।

আপাতভাবে ফুড অ্যালাৰ্জি খুব একটা ভয়ের কারণ না হলেও একটি বিশেষ রোগ আছে যা সত্যিই বেশ সমস্যা তৈরী করতে পারে। এর নাম হল - এঞ্জিও নিউরোটিক ইডিমা বা এঞ্জিওইডিমা (angioneurotic edema)। চিকিৎসকরা বলছেন যে পোকা মাকড়ের কামড় বা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াও এই রোগটা কিন্তু খাবার থেকেও হতে পারে। এই রোগে ত্বকের নিচের আস্তরণ বা টিস্যু ফুলে যায় বেশ। এই ফুলে যাওয়াটা মুখে, জিভে, শ্বাসনালীতে, পেটে, হাতে, পায়ে বা শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। সাধারণত কয়েকঘন্টার জন্য এটা স্থায়ী হয়, তবে তার বেশি হলে চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।

এছাড়া দেখা গেছে যে ফুড অ্যালাৰ্জির কারণে এটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা (eczema) হতে পারে। সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, সারা গা হাত পায়ে অসম্ভব চুলকানি হয় এবং ত্বক পুরু হয়ে, ফেটে গিয়ে তরল বেরোতে পারে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ।






এই প্রসঙ্গে  আরও একটি ফুড অ্যালাৰ্জির প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যা থেকে প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের নাম হল অ্যানাফাইল্যাক্সিস (anaphylaxis)। এক্ষেত্রে ভোকাল কর্ড ফুলে গিয়ে বায়ুপথ প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে চরম সমস্যা হয়। এই পরিস্থিতিতে গলা চিরে একটি নল ঢুকিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হয়। এছাড়া গলা ফুলে যেতে পারে, রক্তচাপ সাংঘাতিক কমে যেতে পারে এবং পরিস্থিতি জটিল হলে রুগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। শীঘ্র চিকিৎসা না হলে মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।



চিকিৎসা কি ?
ফুড অ্যালাৰ্জির চিকিৎসা অত্যন্ত সাধারণ। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো উপসর্গ কম করে এবং বেশ কিছুটা স্বস্তি দেয়। এছাড়া যে সমস্ত খাবার থেকে আপনার অ্যালাৰ্জি হয় সেগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলুন। তাহলেই অনেকটা সুস্থ থাকবেন। তেমন বাড়াবাড়ি হলে জেনেসিস হাসপাতালের ডারম্যাটোলজি বিভাগ তো আছেই, চিন্তা কি !

#GenesisHospitalKolkata #foodallergy #urticaria #hives #angioedema #eczema #anaphylaxis #angioneuroticedema #prescriptiontheke