Saturday 24 February 2018

দুরন্ত এক্সপ্রেস #





গৃহবধূ রণিতা বসু ঘুম ভেঙে আঁতকে উঠলেন। বিছানায় বাবলু নেই তার পাশে। এঘর ওঘর খুঁজে কোত্থাও না পেয়ে শেষটায় বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলেন তার আদরের বাবলু বাগানের মাটি খুঁড়ে একাকার করেছে। রাগের বশে একছুটে তিনি দুম করে এক কিল বসিয়ে দিলেন বাবলুর পিঠে। চার বছরের বাবলু সে কিলের তোয়াক্কা না করে দৌড়ে গিয়ে একপাশে ঝোলানো দোলনার চেন ধরে অবলীলায় হনুমানের মতো দোল খেতে লাগলো। রণিতা সেখানেও তাকে তাড়া করায় সে কলা দেখিয়ে সেখান থেকেও পালালো। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে একটা স্টিলের থালা আর হাতা নিয়ে মনের সুখে বাজনা বাজাতে শুরু করল। বাগানের মধ্যেই রণিতা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সংসারের সমস্ত কাজ সামলালেও তার আদরের বাবলুকে তিনি কিছুতেই যেন সামলে উঠতে পারছেন না। বাবলু চরম দুরন্ত হয়েছে, আর চার পাঁচটা ছেলে মেয়েদের থাকে বড্ড আলাদা। কারোর কোনো কথা তো শোনেই না উল্টে সর্বক্ষণই যেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। শেষটায় একদিন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করলেন একজন মনোবিদের সাথে। সমস্তটা দেখে তিনি বললেন বাবলুর এডিএইচডি (ADHD) অর্থাৎ এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার আছে।এডিএইচডি কি এবং কেন হয় জানার আগে ছোট্ট করে দেখে নিন একটা পরিসংখ্যান। 

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভারতবর্ষে প্রাথমিক স্কুল শিশুদের মধ্যে এডিএইচডির প্রভাব রয়েছে  প্রায় ১১.৩২ % । আরও জানা গেছে যে তুলনামূলক ভাবে নারী শিশুদের (৩৩.৩%) থেকে পুরুষ শিশুদের (৬৬.৭%) ক্ষেত্রেই বেশি এডিএইচডি হয়। পড়লে আশ্চর্য হবেন, নিম্ন আর্থ - সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব প্রায় ১৬.৩৩ % এবং মধ্য আর্থ - সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব ৬.৮৪% ।  এডিএইচডি হবার কারণ কি ?

কারণ 
এডিএইচডি হবার সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যায় নি। তবে চিকিৎসক এবং গবেষকরা কয়েকটি নিম্নলিখিত কারণ বলছেন।  

# একটি এডিএইচডি শিশুর মস্তিস্ক সাধারণ শিশুর মস্তিষ্কের থেকে ৫% ছোট হয়। বিশেষ করে সেই সমস্ত জায়গাগুলি যেগুলি মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত। নিউরোট্রান্সমিটার নরএপিনেফ্রিন এবং ডোপামিনের অসামঞ্জস্য - এক্ষেত্রে একটি কারণ হতে পারে।

# মস্তিষ্কে রাসায়নিক, কাঠামোগত বা সংযোগের পার্থক্য হলে এডিএইচডি হয়। বেশীরভাগটাই জিনগত কারণে।

# এছাড়া গর্ভাবস্থায় ড্রাগের ব্যবহার বা মদ্যপান করলেও এডিএইচডি হতে পারে।

বৈশিষ্ট 
এডিএইচডির প্রধান বৈশিষ্টগুলি হল -
# অমনোযোগ - পড়াশোনার সময় অধ্যাবসায়ের অভাব ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত শিশুটি একেবারেই মনোযোগী হয় না এবং সুষ্ঠভাবে কোনো কাজই করে উঠতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে এর অর্থ কিন্তু শিশুটি অবাধ্য বা তার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, এমনটা কিন্তু নয়।

# অতিচাঞ্চল্য - মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতার ফলে শিশুটিকে একজায়গায় বসিয়ে রাখা সম্ভব হয় না কিছুতেই। এর ফলে অনেকসময়ই প্রতিকুল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। সাধারণত এরা একটানা কোনো একটা কাজ করতে থাকে বা অনর্গল কথা বলতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে  অতিরিক্ত অস্থিরতা দেখা যায়।

# অতিআবেগপ্রবণ - এরা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়। কোনো রকম জটিলতা বা ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই কোনো কাজ করে ফেলাটা এদের অন্যতম লক্ষণ। "উঠল বাই তো কটক যাই" - এই প্রবাদটা এদের ক্ষেত্রেই বোধহয় বেশি করে খাটে।

উপসর্গ 
অমনোযোগীর ক্ষেত্রে 

# স্কুলের কাজে বা অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল করা

# কোনো লেকচার বা আলোচনার সময় অমনোযোগী হওয়া, এছাড়া পড়ার সময় বারে বারে মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলা

# কারোর কথা না শোনা এবং স্কুল, বাড়ি বা অফিসের কাজ সময়মত শেষ করতে না পারা

# সংগঠিত ভাবে কাজ করায় সমস্যা, যেমন কোন কাজটা আগে বা পরে করা জরুরি, স্কুলে বা কাজের ক্ষেত্রে ডেডলাইন মিট করতে ব্যর্থ হওয়া।

# জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা

# জরুরী কাজে অনীহা, যেমন হোমওয়ার্ক না করতে চাওয়া।  প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অফিসের জরুরি কাজগুলি নিয়মিত এড়িয়ে যাওয়া

# মাঝেমাঝেই নিজের জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা

# উদ্ভট চিন্তাভাবনায় মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলা

# প্রতিদিনের কাজ প্রায়ই ভুলে যাওয়া

অতিচাঞ্চল্য বা অতিআবেগপ্রবণতার ক্ষেত্রে 

# সারাক্ষণ উসখুস করা

# হঠাৎ করে নিজের সিট্ থেকে উঠে পড়া

# অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে সহজেই জড়িয়ে পড়া

# সর্বক্ষণ ছটফট করা বা একটা অস্থির ভাব থাকা

# অনর্গল কথা বলে যাওয়া

# প্রশ্ন শেষ হবার আগেই উত্তর দেওয়া, কোনো একটা আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করে কথা বলে ওঠা

# অন্যের কাজে বাধা দেওয়া, ইত্যাদি

চিকিৎসা
এডিএইচডি একেবারে সেরে যাবে এমন কোনো ওষুধ বা পদ্ধতি এখনো অবধি বেরোয়নি। তবে বিশেষ চিকিৎসার দ্বারা এর উপসর্গগুলি কমানো যেতে পারে এবং কাজের ক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি লাভ করা যেতে পারে। যেমন - 

# ওষুধ - বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের সাহায্যে অতিচাঞ্চল্য এবং আবেগপ্রবণতা  কমানো সম্ভব। এর ফলে কাজ বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। এডিএইচডির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রচলিত ওষুধ হল 'স্টিমুল্যান্ট'। এই ওষুধটি মস্তিষ্কে নরএপিনেফ্রিন এবং ডোপামিন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

# সাইকোথেরাপি - বিহেভিওরাল থেরাপি দ্বারা একজন শিশুর ব্যবহার বা তার কাজের প্রতি মনোভাব বদলানো সম্ভব। এর মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা, অন্যের প্রতি ব্যবহার বা মনোভাবের যথেষ্ট উন্নতি হয়।এছাড়া ফ্যামিলি এন্ড ম্যারিটাল থেরাপির দ্বারা স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি সাধন করা যায়। 

# শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ - পেরেন্টিং স্কিল ট্রেনিং এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিকের মাধ্যমে বাবা মায়েদের শেখানো হয় কিভাবে একজন এডিএইচডি শিশুকে সামলানো উচিত। পরিস্থিতি বিচারে শিশুটিকে যেমন পুরস্কৃত করতে হবে আবার সময়বিশেষে কঠোরও হতে হবে। আবার জটিল পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে শিশুটিকে সামলানো উচিৎ তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া সাপোর্ট গ্রূপের সাহায্যে শিশুদের বাবা মায়েরা একে অন্যের সাথে সমস্যার কথা আলোচনা করতে পারেন এবং কি কি ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে তারও একটা সম্যক ধারণা তৈরী করতে পারেন। এতেও যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায়।

# মিরাক্যালস এবং টার্নিং পয়েন্ট নামে দুটি সংস্থা আছে যাঁরা কলকাতায় এডিএইচডি শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। যথাক্রমে ওয়েবসাইট হল - http://www.miraclespecialschool.com/contact-us.html . এবং http://www.turningpoint.org.in/disha.asp. এছাড়া ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স, পার্ক স্ট্রিট - এ এই শিশুদের চিকিৎসা করা হয়।

সুতরাং ধৈর্য ধরে রাখাটাই কিন্তু এক্ষেত্রে সবথেকে জরুরী। নিয়মিত শিশুটিকে সময় দিতে হবে এবং তার সমস্ত ব্যবহার বা কাজের দিকে মনোযোগ দিয়ে তার মনোভাব বদলানোর চেষ্টা করতে হবে। মাথা গরম করে দু চার ঘা দিয়ে ফেললে কিন্তু শিশু এবং তার বাবা মা, দুজনেরই লোকসান বই লাভ কিছু হবে না। বরং দিনে অন্তত কিছুটা সময় বাইরে নিয়ে গিয়ে খোলা মাঠে খেলতে দিন। ঘুমোনোর নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন এবং ঘুমোনোর বেশ কিছুটা আগে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনমত স্কুল থেকে আপনার সন্তানের রিপোর্ট চেক করুন। লক্ষ্য রাখুন কমপ্লেন খুব বেশি আসছে কিনা। সেক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বার করুন। বলাই বাহুল্য আপনার শিশুটিকে সঠিক ভাবে পথ দেখানো কিন্তু আপনারই দায়িত্ব, এটা ভুলে গেলে কিন্তু বড় রকমের গাড্ডায় পড়তে হবে। #ADHD #attentiondeficithyperactivitydisorder #medicalarticle #learningdisabilities #learningdisorder #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed

Tuesday 13 February 2018

তারাদের কথা


যে বিষয়ে নিয়ে একটা গোটা হিন্দী ছবি তৈরী হয়েছে, সেই বিষয়ের নাম আমাদের প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু শুধু জেনে রাখলেই কাজ শেষ হয় না, বরং সেখান থেকেই শুরু । ছবিতে ঈশান অবস্তির করুণ সময়ের কথা ভাবলেই আমাদের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। 'তুঝে সব হ্যায় পাতা....মেরি মা' এই গান শুনলে আজও চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, একথা সত্যি, কিন্তু বিশ্বাস করুন, ব্যাস ! ওই পর্যন্তই। পরবর্তী সময়ের সংগ্রাম ও নিরলস পরিশ্রমের কথা আমরা ভাবতেও পারি না, তার কারণ আমরা একটা গল্প তৈরী হতে দেখেছি, চেষ্টা করেছি সে গল্পের সাথে বাঁচতে কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে অনুভব করিনি। আমাদের বাড়িতে যদি এমনই একজন ডিস্লেক্সিক শিশু থাকত তাহলে কিন্তু সমস্যাটা আর রুপালি পর্দার মোড়কে বন্দী হয়ে থাকত না। দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব বোধহয় পাহাড়ের থেকেও ভারী মনে হত তখন। কঠিন হলেও এমন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কি কি উপায় আছে আসুন একটু দেখে নিই।     

ডিস্লেক্সিয়া কি ?
ডিস্লেক্সিক একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ হল শব্দের সমস্যা। এর নানা রকম সংজ্ঞা থাকতে পারে, তবে  সহজ ভাষায় ডিস্লেক্সিয়া হল একপ্রকার অক্ষমতা যার দরুন পড়তে, লিখতে বা বুঝতে সমস্যা হয়। জেনে রাখা ভালো যে এই সমস্যাটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভাষাগত এবং এর সাথে বুদ্ধিমত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং বাড়িতে যদি ডিস্লেক্সিক শিশু থাকে তাহলে তার মেধা নিয়ে আশঙ্কিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই। দেখা গেছে শিশুরা ডিস্লেক্সিক হলেও অন্যান্য বিষয়ে তারা বেশ প্রতিভাশালী হয়। এমন চমকপ্রদ উদাহরণ বহু আছে। তবে তার আগে জেনে নিই ঠিক কি কারণে ডিস্লেক্সিয়া হয়। 

কি কারণ ?
ডিস্লেক্সিয়া এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভারতবর্ষে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিশুরা কোনো না কোনো ভাবে ডিস্লেক্সিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের দেশের বহুভাষার সমস্যাও কিন্তু এর অন্যতম কারণ হতে পারে। সাধারণত ডিস্লেক্সিয়ার সঠিক কারণ চিহ্নিত করা যায় নি, তবু কিছু তথ্যের ফলে একটা সম্যক ধারণা তৈরী করা যায়। যেমন - আমরা জানি যে একজন বাঁহাতির ক্ষেত্রে ডানদিকের মস্তিস্ক বেশি সক্রিয় এবং একজন ডানহাতির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বাঁদিক। কিন্তু একজন ডিস্লেক্সিকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন দিকটি বেশি সক্রিয় তা নিয়ে বিভ্রান্তির ফলে তথ্যের সরলীকরণে সমস্যা হয়। এছাড়া জিনগত বা পরিবেশগত কারণেও ডিস্লেক্সিয়া হতে পারে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন একটি শিশু ডিস্লেক্সিক ? আসুন জেনে নিই। 

উপসর্গ কি ?
# পড়বার সময়ে সমস্যা  
# ডিস্লেক্সিক শিশুদের তুলনামূলক ভাবে সাধারণ কাজে দেরি হয় বেশি - যেমন হাঁটাচলা, কথা বলা, সাইকেল চড়া ইত্যাদি 
# ভুল উচ্চারণ করা, ছড়া বলায় সমস্যা এবং শব্দের তফাৎ করতে না পারা 
# অক্ষর ও তার উচ্চারণে বিলম্ব হওয়া, রঙ চিনতে সমস্যা হওয়া বা গণিতে অসুবিধা 
# সাধারণ খেলাধুলায় সমস্যা 
# ডানদিক - বাঁদিক গুলিয়ে ফেলা 
# অক্ষর বা সংখ্যা উল্টো করে লেখা এবং বানানে সমস্যা 
# কোনো কাজে মনোযোগী না হওয়া
# ডিস্লেক্সিক শিশুরা এমনভাবে পরপর তাদের ভাবনাগুলিকে ব্যক্ত করে যা অযৌক্তিক বা অপ্রয়োজনীয়ও মনে হতে পারে
# এছাড়া এজমা, এক্জিমা বা অন্য ধরণের এলার্জিও হয়ে থাকে ডিস্লেক্সিক শিশুদের 

এ সমস্যার সমাধান কি ?
এই ধরণের সমস্যা অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়। বরং বাবা মায়েদের আরেকটু বেশি যত্নবান হতে হবে, তাহলেই সমস্যাগুলি সহজে ধরা পড়বে।

# প্রথমেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু করুন। তাহলে শিশুটির পক্ষে সমস্ত কিছু বুঝতে অনেকটাই সহজ হবে। কোনোভাবেই ধৈর্য হারানো চলবে না।  

# ডিস্লেক্সিক শিশুদের সাধারণত জানার ইচ্ছে প্রবল হয়। যুক্তিসম্মত উত্তর পেলে শিখতে দেরি হয় না তাদের। লেখার ওপর জোর দিন বেশি, শুধুমাত্র কানে শুনে শিখে ফেলা কঠিন কিন্তু। 

# বিজ্ঞানের বিষয়গুলি টেবিল বা চার্টের মাধ্যমে বোঝান। এতে সহজ হবে অনেকটাই।

# অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে বেশ সুফল পাওয়া যায়। যে কোনো বিষয় চিত্রের মাধ্যমে বোঝালে মনে রাখতে সুবিধে হবে। 

#  বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিন। যেমন - একটা প্যারাগ্রাফ পড়ানোর পর বিভিন্ন ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করুন। এতে ভালো কাজ দেয়। 
# ফ্ল্যাশ কার্ডের সাহায্যে শেখালে ভালো হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরপর পুনরায় চেষ্টা করুন। 

# বস্তুর আকৃতি ও আয়তন সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দিন। যেমন - বৃত্ত ও গোলকের তফাৎ বুঝিয়ে দিন সুনির্দিষ্ট ভাবে। জ্যামিতিক আকারগুলি ভালো করে বোঝানো প্রয়োজন। 

# নিয়মিত যোগাসন মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের অভ্যেস করান, সুফল পাবেন।

# স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের সাথে আলোচনা করে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে এই বিষয়ের ওপর সেমিনার করতে পারেন। এতে দু পক্ষই উপকৃত হবে।

# ডিস্লেক্সিক শিশুদের চিহ্নিত করার কিছু টেস্ট আছে। এই লিংকটি ক্লিক করে জেনে নিন আপনার বা আপনার পরিচিত কোনো শিশু ডিস্লেক্সিক নয়তো ! https://www.lexercise.com/tests/dyslexia-test
উপরন্তু কলকাতার বুকে একটি সংস্থা আছে যাঁরা ডিস্লেক্সিক শিশুদের অত্যন্ত যত্ন নিয়ে শেখান। তাঁদের ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হল -  http://www.breakingthroughdyslexia.com/index.php
এছাড়া কলকাতায় এমন অনেক স্কুল আছে যেখানে অন্যান্য শিশুদের সাথেই ডিস্লেক্সিক শিশুদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। 

ঈশান অবস্তি গল্পের চরিত্র হলেও বাস্তবিক এমন অনেকেই আছেন যাঁরা ডিস্লেক্সিক হয়েও পরবর্তী জীবনে সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছেছেন। উদাহরণস্বরূপ যাঁদের নাম বলছি তাঁরা অতীব জনপ্রিয় শুধু নন, স্ববিভাগে নির্দিষ্ট ছাপ রেখে গেছেন। তাঁরা দেখিয়ে গেছেন প্রতিভা গোপন থাকে না, সঠিক সময় নিজ গুণবলে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাঁরা হলেন - এলবার্ট আইনস্টাইন, পাবলো পিকাসো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, জর্জ ওয়াশিংটন, জন এফ কেনেডি, ওয়াল্ট ডিজনি, জন লেনন, রিচার্ড ব্র্যানসন, স্টিভেন স্পিলবার্গ, টম ক্রুজ, জিম ক্যারি এবং আরও অনেক বিখ্যাতরা যাঁদের নাম বলতে গেলে এই লেখা হয়ত কোনোদিন শেষ হবে না। 

সুতরাং আপনার বাড়িতে যদি একজন ডিস্লেক্সিক শিশু থাকে তাহলে ভেঙে না পড়ে তার প্রতিভার দিকে নজর দিন। কে জানে হয়ত কোনো একদিন তারই কৃতিত্বে আপনি গর্বিত হবেন। আপনার মতো করে নয়, ওদের চোখ দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে শিখুন, কতকটা ওদের মতো করেই বাঁচুন, এ পৃথিবী অনেক নিষ্পাপ ও আলোকজ্জ্বল মনে হবে, আমি একশোভাগ নিশ্চিত।

#Dyslexia #DyslexiaAssociationofIndia #Learningdisability #Learningdisorder #Medicalarticle #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed 

Friday 2 February 2018

সব মহিলাদের বলছি !



কিছু কিছু বিষয় প্রায় অধিকাংশ সময় পর্দার আড়ালে বা মাদুরের নিচে চাপা পড়ে থাকে। ধুলো ঝাড়ার মতো করে ঝেড়ে নিয়ে তাকে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসার দুঃসাহস আমরা সচরাচর দেখাতে পছন্দ করি না। বিশেষ করে সে বিষয় যদি মহিলা কেন্দ্রিক হয় তাহলে তো আলোচনা করা দূর, সে প্রসঙ্গের ছায়া পর্যন্ত মাড়াই না। অথচ যখন বিপদে পড়ি তখন কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে  চলতে ঠিক ডাক্তারের কাছে উপস্থিত হয়ে সমস্তটা খোলসা করে বলি। তেমনই একটা বিষয় হল মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ। 

তবে এ সমস্যা আজকের নয়। জানলে হাঁ হয়ে যাবেন, ১৮০০ শতাব্দীতে কিছু পাশ্চাত্য দেশে  মহিলাদের মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ হলে বলা হত, তাদের 'মৃত্যুর দরজা' বা 'gateway to death' উন্মুক্ত হল। মেনোপজ আটকাতে গিনিপিগের ডিম্বাশয় থেকে জ্যুস বানিয়ে খেতেও দ্বিধা বোধ করতেন না সেই সময়ের মহিলারা। অবশ্য ভারতবর্ষে এমন কোনো ঘটনা ঘটত কিনা সেটা জানা নেই। তবে রক্ষণশীল দেশ হিসেবে এই বিষয়ে যে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা যেত না সে ব্যাপারে আমরা একশোভাগ নিশ্চিত। বর্তমান যুগে সে সমস্যা খানিক মিটেছে বটে কিন্তু এহেন মোক্ষম বিষয় গোপন রাখতে আমরা কিন্তু এখনো ভালোবাসি। অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে এই ধরণের বিষয়গুলি সঠিক জানা না থাকলে পরবর্তীকালে জটিল হবার সম্ভাবনা থাকে দ্বিগুন। তারচেয়ে আসুন সমস্যাগুলি  রাখঢাক না করে খোলাখুলি আলোচনা করে নিই। 


মেনোপজ কি ?
মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ এমন একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মহিলার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়। মহিলাদের জীবনে এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা এবং জেনে রাখা ভালো যে এটি কিন্তু কোনোরকম রোগ বা ব্যাধি নয়। টানা বারো মাস যদি ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে তাহলে বলা হয় সেই মহিলার ঋতুবন্ধ হয়েছে। সাধারণত ৫০ বছর বয়েসের পরেই ঋতুবন্ধ হয়ে থাকে তবে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়েসের যে কোনো সময়ের মধ্যেও এটা ঘটতে পারে। 

মেনোপজ হওয়ার কারণ
# বয়স বাড়ার সাথে সাথে অর্থাৎ ৪০ এর কোঠায় ঢোকার মুহূর্তে একজন মহিলার শরীরে প্রজনন হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। কারণ, ডিম্বাশয়ের মধ্যে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের  উৎপাদন অনেকটাই হ্রাস পায় । যার ফলে মাসিকের সময়কালে হেরফের ঘটে এবং ৫০ বা ৫১ বছর বয়েসের পরই তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।  

# হিস্টেরেক্টমি এবং বাইল্যাটারাল উফরেক্টমির মাধ্যমে যদি জরায়ু এবং ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ঋতুবন্ধ হবে। স্বাভাবিকভাবে মাসিকও বন্ধ হয়ে যাবে এবং ঋতুবন্ধের উপসর্গগুলিও দেখা দেবে।  

# কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপিও ঋতুবন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে সর্বক্ষেত্রে থেরাপির পর একেবারে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় না।

# প্রাথমিক অপর্যাপ্ত ডিম্বাশয় - দেখা গেছে প্রায় এক শতাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়েসের আগেই ঋতুবন্ধ ঘটে। একে অকাল ঋতুবন্ধ বা প্রিমাচিওর মেনোপজ  বলা হয়। এর কারণ হল ডিম্বাশয়ের মধ্যে উপযুক্ত পরিমানে প্রজনন হরমোন তৈরী না হওয়া। সাধারণত এর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি তবে চিকিৎসকদের মতে এক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি করিয়ে নেওয়াটা ভীষণ  জরুরি, এতে মস্তিস্ক, হৃদয় এবং হাড় সুরক্ষিত থাকে।

উপসর্গ 
ঋতুবন্ধ হওয়ার আগে অর্থাৎ পেরিমেনোপজের মুহূর্তগুলিতে বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যদিও সমস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে একইরকম হবে এমনটা নয় তবু সাধারণত যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তা হল - 

# অনিয়মিত মাসিক - হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়ে আবার কয়েক মাস বাদে শুরু হতে পারে 
# যোনিতে শুষ্ক ভাব 
# হট ফ্ল্যাশ - শরীরের উপরিভাগে অর্থাৎ মুখ, গলা বা বুকের অংশে গরম ভাব 
# নাইট সোয়েট - রাত্রে ঘুমোবার সময় হট ফ্ল্যাশ হওয়া
# ঘুমোনোয় সমস্যা 
# মেজাজে পরিবর্তন 
# ওজন বৃদ্ধি এবং হজমে সমস্যা 
# পাতলা চুল, শুষ্ক ত্মক এবং 
# স্তন সংকোচন হওয়া 

জটিলতা 
তবে এ পর্যন্ত যা আলোচনা করা হল, তা পড়ে অনেকেই হয়ত নাক সিঁটকোচ্ছেন আর ভাবছেন, ধুস ! এ আর নতুন কি ? এর অধিকাংশই তো জানা এবং সিলেবাসের মধ্যেই। তাহলে আপনাদের বলি যে অতটাও উদাসীন হবেন না। কারণ কিছু কিছু বিষয় আছে যা সিলেবাসের বাইরে এবং যথেষ্ট বেগ দিতে পারে এই সময়টায়। ঋতুবন্ধের কারণে বেশ কিছু জটিলতা তৈরী হয় এবং সময় বিশেষে তা মারাত্মক হতে পারে যদি না আগের থেকেই সাবধান হওয়া যায়। যেমন - 

# হৃদরোগ - ইস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে হৃদরোগের সমস্যা তৈরী হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। 

# অষ্টিওপোরোসিস -  ঋতুবন্ধের প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এর ফলে অষ্টিওপোরোসিস হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। 

# প্রস্রাবে অসংযম - ঋতুবন্ধের কারণে যোনি এবং মূত্রনালীর টিস্যুর ক্ষমতা কমে আসে। এর ফলে যখন তখন প্রস্রাব পাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়। কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত ভাবেও প্রস্রাব হয়ে যায়। বিশেষ করে, হাঁচি, কাশি বা অত্যধিক হাসলেও এমনটা হতে পারে। 

# স্তনের ক্যান্সার - ঋতুবন্ধের পর এই রোগ হতে পারে। তবে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ঝুঁকি কম থাকে। 

# যৌনতা হ্রাস - শুষ্ক যোনির কারণে যৌনমিলনে অস্বস্তি বা সামান্য রক্তপাত হতে পারে। যার ফলে যৌনমিলনে প্রবল অনিচ্ছা তৈরী হতে পারে। এক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার বা লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। 

# ওজন বৃদ্ধি - ঋতুবন্ধের পর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের ওজন বেড়ে যায় তার কারণ এই সময় পাকপ্রক্রিয়া ধীরগতির হয়। সেক্ষেত্রে একটু কম পরিমাণে খেতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে যাতে ওজনটা একই থাকে।

চিকিৎসা 
ঋতুবন্ধে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি কোনো উপসর্গে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে একজন দক্ষ চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া নিম্নলিখিত কিছু পদ্ধতি আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে।  

# হরমোন থেরাপি - হট ফ্ল্যাশ উপশমের জন্য ইস্ট্রোজেন থেরাপির বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা আছে। যদি জরায়ু থাকে তাহলে ইস্ট্রোজেনের সাথে প্রোজেস্টিনেরও প্রয়োজন আছে। ইস্ট্রোজেন হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে একজন মহিলার শারীরিক অবস্থা বা তার চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর।

# ভ্যাজাইনাল ইস্ট্রোজেন - এটি একটি ক্রীম, ট্যাবলেট বা রিঙের সাহায্যে যোনির শুষ্ক ভাব বা অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে। এতে মূত্র সম্পর্কিত বাকি উপসর্গগুলি থেকেও উপশম ঘটে। 

# লো ডোজ এন্টিডিপ্রেস্যান্ট - হট ফ্ল্যাশ বা মেজাজ পরিবর্তনে এই এন্টিডিপ্রেস্যান্ট থেকে সুফল পাওয়া যায়। 

# গাবাপেন্টিন (নিউরোন্টিন, গ্রেলাইজ এবং অন্যান্য) - যারা ইস্ট্রোজেন থেরাপি নিতে পারেন না এবং রাতের পর রাত হট ফ্যাশের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য এই ওষুধ বেশ স্বস্তিদায়ক।  

# ক্লোনিডিন - উচ্চ রক্তচাপ বা হট ফ্ল্যাশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এই ওষুধ। 

#  অষ্টিওপোরোসিসের ওষুধ - এই ক্ষেত্রে একজন দক্ষ অর্থোপেডিকের পরামর্শ খুব জরুরি। এছাড়া নিয়মিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টে নিলেও হাড় শক্ত হবে। 

ঋতুবন্ধ অত্যন্ত সহজ সাধারণ হলেও এর উপসর্গ বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক সময়ই চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। এসমস্ত ক্ষেত্রে অবস্থা জটিলতর হলে ঝঞ্ঝাটের শেষ থাকে না। যদিও এই অবস্থা বাস্তবে এড়ানো সম্ভব নয় তবু এর উপসর্গ থেকে অন্তত কিছুটা হলেও উপশম পাওয়া যায়, যদি উপরোক্ত বিষয়ের ওপর মনোযোগী হন তবেই। তাই আপনার বয়স যদি ৪০ পেরিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বলব নিজের শরীরের প্রতি আরেকটু যত্ন নিন। কালের গর্ভে কি অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য আমরা কেউই জানি না। তার চেয়ে আগের থেকেই সাবধান হই বরং, কি বলেন ? 

#medicalarticle #healtharticle #menopause #hotflash #nightsweat #oldageproblems #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed