Monday 23 October 2017

মাথা ব্যাথা না অন্যকিছু ?


একটা সহজ সরল আপাত নিরীহ রোগ। যে রোগটাকে অনায়াসেই আমরা হাতের পাঁচ করে দিব্যি দৈনন্দিন জীবনে পিছলিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই। যেমন ধরুন আজ অফিস যাবো না, ছোট্ট এসএমএস - 'প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা তুলতেই পারছি না'। কিম্বা বৌয়ের সাথে শপিংয়ে যেতে হবে - 'ওফ ! আজ না ভীষণ মাথা ধরেছে, তুমি একা চলে যাও প্লিজ'। অথবা অনেকদূরের কোনো নিমন্ত্রণ -  'অসহ্য যন্ত্রণায় মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, আজ ছেড়ে দিন দাদা, অন্য একদিন সময় করে গিফট দিয়ে আসব'। ইত্যাদি চেনা জানা ছকের আওতায় মাথা খেলিয়ে ডজ দেওয়াটা প্রায়শই আমাদের বেসিক স্কিলের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সত্যিই যদি একদিন পালে বাঘ পড়ে ? তাহলে ? ঘুঘু দেখতে গিয়ে যদি ফাঁদে জড়িয়ে আছাড় খেয়ে পড়েন, তখন ? ভেবে দেখেছেন কি ? তাহলে এমনই একটা সত্যি ঘটনা বলি। পেশা ও নামগুলো শুধু বদলে দিলাম। 

প্রফেসর দীনেন গুপ্ত দক্ষিণ কলকাতার একজন নামকরা শিক্ষক। পদার্থবিদ্যায় সুনামের ফলে কলেজ ও কলেজের বাইরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তাঁর যথেষ্ট। তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি কল্যাণী গুপ্ত সরকারি চাকুরে। গত দেড় মাস যাবৎ কল্যাণী মাথার মধ্যে এক আশ্চর্য যন্ত্রনা অনুভব করছেন এবং সময় বিশেষে কিছু মাথাব্যথার ওষুধও খেয়ে চলেছেন। কিন্তু রোগ নিরাময় হচ্ছে না কিছুতেই। সচরাচর সাধারণ মাথাব্যথায় অধিকাংশ সময়ই আমরা ডাক্তার এড়িয়ে চলি। স্বাভাবিকভাবে কল্যাণীও তাই করেছিলেন। ছাত্রছাত্রী নিয়ে ব্যস্ত প্রফেসরও স্ত্রীর মাথাব্যথাকে যথেষ্ট গুরুত্ত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কল্যাণীর মাথাব্যথার চরিত্রও বদলাতে লাগলো একটু একটু করে। কালক্ষেপ না করে কল্যাণী চলে গেলেন তাঁর এক চেনা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। কল্যাণীকে পরীক্ষা করে ও কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর ডাক্তার তাঁকে সিটি স্ক্যান করিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। যথাসময়ে রিপোর্টে দেখা গেল কল্যাণীর ব্রেনে গ্লিয়োব্লাস্টোমা মাল্টিফর্ম হয়েছে। শুনতে কতকটা এটম বোমের মত লাগলো বটে তবে সোজা বাংলা ভাষায় এর অর্থ হল - ব্রেন টিউমার। আজ্ঞে হ্যাঁ, সিনেমা সিরিয়ালে বহুল প্রচারিত যে রোগ ঠিক সেই রোগটির কথাই বলছি। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যে অনেকসময় কেউটে বেরিয়ে আসে এইটি হল তার মোক্ষম উদাহরণ। সুতরাং সময় থাকতে থাকতে যদি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলেন তাহলে বাপ্ মায়ের দেওয়া প্রাণটা রক্ষা পায় - এই আর কি। নিচে ব্রেন টিউমারের কিছু লক্ষণ দেওয়া হল। 

লক্ষণ :
# মাথা যন্ত্রণা, সময়ের সাথে সাথে ব্যাথার তীব্রতা বৃদ্ধি
# শরীরের একাংশে বা সারা শরীরে কাঁপুনি  
# দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিতে পরিবর্তন 
# হাতে ও পায়ে দুর্বলভাব
# মেজাজে পরিবর্তন 
# কথা বলার সময় সমস্যা 
# শারীরিক অক্ষমতা 
# স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
# বমি ভাব 
# ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব

কিছু কিছু সময় টিউমারের স্থান অনুযায়ী নানারকম হরমোনের সমস্যা হতে পারে। যেমন অনিয়মিত মাসিক, ঊষরতা, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস। এই সমস্ত লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে, কয়েক মাস বা বছর অথবা হঠাৎ করেও দেখা দিতে পারে। 

এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আর আলাদা করে আলোচনা করলাম না কারণ উপরের লক্ষণগুলি দেখা দিলে যে একজন দক্ষ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু কয়েকটা জিনিস - 

মনে রাখবেন :
এই ধরণের মাথাব্যথা কিন্তু ভোরবেলার দিকে বেশি হয়। সুতরাং সামান্য মাথাব্যথা বলে এড়িয়ে যাবেন না। 'আমার তো মাইগ্রেন আছে, বেশি পরিশ্রম করলে একটু আধটু মাথাব্যথা হয়' - ইত্যাদি যাবতীয় ধারণাগুলির থেকে বেরিয়ে আসুন। বিশেষ করে সে ব্যথা যদি নিয়ম করে প্রায় প্রত্যেকদিনই হতে থাকে এবং তা যদি কষ্টসাপেক্ষ হয় তাহলে বলব দেরি করা মোটে ভালো কাজ না। মাথা বলে কথা, তাছাড়া ঘাড়ের ওপর তো একটাই হয়, তাই দরকার কি বাপু মাথার ব্যামো নিয়ে ঘোরাঘুরি করার। টিউমার হোক বা না হোক সময় করে একটু দেখিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি ?

এই বিষয়টির উপস্থাপনা কিন্তু ভয় দেখানো নয় বা মাথাব্যথা হলেই ব্রেন টিউমার হবে এমনটাও বলা নয়। বরং এই রোগটি যে হতে পারে এবং এড়িয়ে যাবার কারণে আরও জটিল হতে পারে সেই বিষয়ে আরও সাবধান করা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন.......

#medicalarticle #braintumour #genesishospitalkolkata #asprescribed #health

Thursday 12 October 2017

নিদ্রাবিলাস


এক ঘুমে কি রাত কাবার হচ্ছে না ? আপনার নাক ডাকার জ্বালায় কি বাড়ির লোকজন বিরক্ত ? নাকি আপনি ঘুমোলে পাড়ার লোকজন জেগে উঠছে ? যদি সবকটা প্রশ্নের দিকে আপনি করুন মুখ করে তাকিয়ে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন আপনার স্লিপ স্টাডির বিশেষ প্রয়োজন আছে। কি ভাবছেন ? গ্রূপ স্টাডি শুনেছেন, স্লিপ স্টাডিটা আবার কি জিনিস ? তাহলে বলি, এটি একটি পরীক্ষা এবং এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যায় আপনার ঘুমের কোনো সমস্যা আছে কিনা বা কোনোরকম নিদ্রাজনিত রোগের দ্বারা আপনি আক্রান্ত কিনা। এই পরীক্ষার নাম পলিসমনোগ্রাফি। এর মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাস, চোখ এবং পায়ের ম্যুভমেন্ট ইত্যাদি রেকর্ড করা হয়। আপনার ঘুমের যদি কোনো অস্বাভাবিক প্যাটার্ন থাকে বা আপনার স্লিপ এপ্নিয়া হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পরীক্ষায় ধরা পড়বে। সুতরাং অহেতুক দেরি করে নিজের এবং বাড়ির লোকের বিপদ আর বাড়াবেন না। পলিসমনোগ্রাফি করিয়ে নিন আর ছোট্ট করে জেনে নিন স্লিপ এপ্নিয়া কি। 

স্লিপ এপ্নিয়া কারে কয়  ?
স্লিপ এপ্নিয়া হল একরকম ঘুমের ব্যাধি। ঘুমোনোর সময় শ্বাসজনিত সমস্যার ফলেই এই রোগ হয়। সাধারণত রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে কিছু সেকেন্ড বা মিনিটের বিলম্ব হলেই এই সমস্যা দেখা দেয়। সারারাতে বহুবার এই শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে অস্বাভাবিক নাক ডাকা। এই রোগ যাঁদের আছে তাঁরা সমস্তদিন ক্লান্তিতে ভোগেন ও অসময়ে তাঁদের ঘুম পেতে থাকে। স্লিপ এপ্নিয়ার ফলে রোগীর নানারকম শারীরিক সমস্যাও হয়, যার ফলে প্রতিদিনের কাজে ও মনোঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। মূলত স্লিপ এপ্নিয়া তিন ধরণের হয়।

১. অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ এপ্নিয়া - এটি তখনই হয় যখন ঘুমের মধ্যে গলার পিছনে থাকা সফ্ট টিস্যু কোল্যাপ্স করে বায়ুনালীর পথ রোধ করে। এই রোগটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

২. সেন্ট্রাল স্লিপ এপ্নিয়া - যখন মস্তিস্ক শ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী পেশীকে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয় তখনই এই রোগটি হয়। এই সমস্যাটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (central nervous system) সাথে যুক্ত।

৩. কমপ্লেক্স বা মিক্সড স্লিপ এপ্নিয়া - উপরের  দুটি স্লিপ এপ্নিয়ার সমন্বয়ের ফলে এই রোগ দেখা দেয়।

স্লিপ এপ্নিয়ার উপসর্গ কি কি ?
# ভীষণ জোরে নাক ডাকা
# ঘুমোনোর সময় হঠাৎ বিষম খাওয়া
# শ্বাস প্রশ্বাসে বিলম্ব
# শ্বাসকষ্টের কারণে ঘুম ভেঙে যাওয়া
# দিনের বেলায় ক্লান্তি ও অবসাদ
# গলায় ব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা
# অনিদ্রা ও তার ফলে শারীরিক অস্থিরতা
# রাত্রে বারে বারে টয়লেট যাওয়া
# সকালে মাথাব্যথা হওয়া

দেখে নিন স্লিপ এপ্নিয়ার প্রভাবে কি হতে পারে ?
# উচ্চ রক্তচাপ
# স্ট্রোক
# অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দন, হার্টফেল, হার্ট এট্যাক
# ডায়াবেটিস
# অবসাদ
# মাথাব্যথা   

আমার কি স্লিপ এপ্নিয়া হতে পারে ? 
স্লিপ এপ্নিয়া সাধারণত যে কোনো মানুষেরই হতে পারে, যে কোনো বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে। তবুও মূলত যে কারণে হয় সেগুলি হল :
# অতিরিক্ত ওজন
# ৪০ বছরের ঊর্দ্ধে বয়েস হলে 
# গলার আকার ১৬ - ১৭ ইঞ্চির বেশি হলে 
# টন্সিল বা জিহ্বার আকার যদি বড় হয়
# চোয়ালের হাড় যদি ছোট হয়
# এলার্জি বা সাইনাসের সমস্যাজনিত নাকে বাধা 
# পরিবারের কোনো সদস্যের যদি স্লিপ এপ্নিয়া হয়ে থাকে
# মদ্যপান, ধূমপান, ঘুমের ওষুধ বা ট্রাংকুইলাইজার এর অভ্যাস থাকে   

কিভাবে রেহাই পাবেন ?
# ওজন কমিয়ে ফেলুন, গলায় অতিরিক্ত টিস্যুর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 
# ধূমপান এড়িয়ে চলুন। এর ফলে গলা বা বায়ুনালী কোনোটাই ফুলবে না। 
# মদ্যপান ও ঘুমের ওষুধ একেবারে বর্জন করুন, বিশেষ করে ঘুমের আগে।  
# নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে এবং ভালো ঘুম হবে। 
# ঘুমের আগে ভারী খাবার বা ক্যাফিন এড়িয়ে চলুন।  
# প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমের অভ্যাস করুন। সঠিক ঘুমের ফলে স্লিপ এপ্নিয়া সেড়ে যাবার সম্ভাবনা  অনেকটাই।

অতএব কষ্ট করে ঘুমোনোর দরকার কি ? চিকিৎসকের পরামর্শে চট করে পোলিসমনোগ্রাফি করিয়ে নিন, তারপর সামান্য কিছু বদল আনুন আপনার জীবনযাত্রায়। এ যাত্রায় যে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন তা কিন্তু হলপ করে বলতে পারি। অন্তত বাড়ির লোকজনও হাঁপ ছেড়ে ঘুমোক একটু। তাই না ?

#medicalarticle #sleepapnoea #sleepapnea #genesishospitalkolkata #asprescribed

Saturday 7 October 2017

গোপন কথাটি রবে না গোপনে....

ইদানীং অবনীবাবু ঘুম ভাঙলেই যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। দুচোখের পাতা খুললেই তাঁর চোখের কোণে জল আসার উপক্রম হয়। পায়ে পায়ে বাথরুমের দরজা খুলে কমোডের ওপর বসলেই তিনি প্রায় সর্ষেফুল দেখতে থাকেন চারিধারে। প্রথমদিকে ভয়ের চোটে বাথরুম যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন একেবারে। কিন্তু পেটের কামড় উপেক্ষা করবে এমন বীরপুঙ্গব আর যেই হোন না কেন অবনীবাবু অন্তত নন। আর তাই সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে প্রত্যেক সকালবেলাতে তিনি কোনোমতে কষ্ট করে কমোডের ওপর বিরাজমান হতে থাকেন। কিন্তু সেও ক্ষনিকের। কিছুটা হওয়ার পরই অস্বস্তিতে উঠে চলে আসেন বারবার। কারণটা আর কিছুই নয়। ফুরফুরে দিনের শুরুতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণে তাঁর মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারেন যে তাঁর গুপ্তস্থানে কিঞ্চিৎ গোলযোগ দেখা দিয়েছে অথচ চরম সঙ্কোচের ফলে ভরসা করে বাড়ির কাউকে বলেও উঠতে পারছেন না। কারণ বললেই যদি কেউ বলে, 'কই দেখি' ? তাহলে তো আর তিনি লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কোনোকিছুই ঠিক দেখিয়ে উঠতে পারবেন না। তাই তিনি চুপচাপ ঠিক করলেন পাড়ার ডাক্তারকে গিয়ে একবার গোপনে দেখিয়ে নেবেন। চেম্বারে গিয়ে পাজামার দড়ি আলগা করে কামানের মতো পিছন তাক করে যখন ঝুঁকে দাঁড়ালেন তখন ডাক্তার গম্ভীর হয়ে বললেন, 'হুম, আপনার তো পাইলস হয়েছে মশাই'। একথায় অবনীবাবু প্রায় শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করলেন, 'তাহলে' ?

এই তাহলে যে কি সেটা জানতে হলে বেশ কিছু জিনিস আগে জেনে রাখা প্রয়োজন। যেমন শুধু পাইলস নয়, গুপ্তস্থানে ফিশার বা ফিশ্চুলার মতোও কঠিন রোগ হতে পারে। সেগুলো কি, কেমন করে হয় আর তার কি প্রতিকার, আসুন জেনে নিই এক এক করে।  

পাইলসের সাতকাহন 
মলদ্বারের ভিতরে যে ছোট ছোট শিরাগুলি থাকে সেগুলি যখন বিভিন্ন কারণে স্ফীত হয় তখনই তাকে পাইলস বা অর্শ বলে। মূলতঃ কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়েরিয়া, ভারী ওজন তোলা, প্রেগন্যান্সি বা মলত্যাগে সমস্যার দরুন পাইলস হয়। তবে চিন্তার কিছু নেই, অনেকসময়ই পাইলস কিন্তু নিজে থেকেই সেরে যায়। অবশ্য সমস্যা জটিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। খুব কঠিন সমস্যা হলে ছোট্ট সার্জারিতেই রোগ নিরাময় হয়।  

পাইলসের উপসর্গ কি ?

সাধারণত পাইলসে কোনো যন্ত্রনা হয় না। মলদ্বারের চারপাশে অস্বস্তিকর সমস্যা হয়। প্রথম দিকে মলদ্বার থেকে রক্তপাত হয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর পাইলস থেকে কষ্ট অনুভূত হয়। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণীতে পৌঁছলে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বোসিসের আকার ধারণ করে। সেক্ষেত্রে যথেষ্ট বেদনাদায়ক হয়।

এর চিকিৎসা কি ?
জেনেসিস হসপিটালের কর্ণধার ও বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক ডঃ পূর্ণেন্দু রায় এই সমস্যার কিছু সহজ সমাধান দিয়েছেন। ডায়েট কন্ট্রোল করলে অনেকাংশেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন ফাইবার যুক্ত খাবার, ফল, শাকসবজি, ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। প্রচুর পরিমানে জল খেতে হবে এবং ক্যাফিনের থেকে দূরে থাকতে হবে। মলত্যাগের সময় বেশি চাপ না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। শরীরের স্থূলতা কমিয়ে ফেলতে হবে এবং নিয়ম করে কিছু হালকা ব্যায়াম করলে এর সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু মলম, ক্রীম বা স্টুল সফ্টনার ব্যবহার করলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়।

এবার ফিশার 
মলদ্বার চিরে যাওয়া বা কেটে যাওয়াকে ফিশার বলে। এই চিরে যাওয়া জায়গায় অসম্ভব যন্ত্রনা হয় এবং মলত্যাগের সময় বা পরে রক্তপাত ঘটে। এর বিভিন্ন কারণগুলি হল কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগে সমস্যা, শিশুর জন্ম দেওয়া, ডায়েরিয়া, ইনফেকশন বা অন্যান্য পেটের সমস্যা।  যে কোনো বয়েসেই এই রোগ হতে পারে। সাধারণত ফিশার নিজের থেকেই সেরে যায় তবুও একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ফিশারের উপসর্গ কি ?
# চেরা জায়গার পাশে ছোট মাংসপিণ্ড হওয়া।
# মলত্যাগের সময় অসহ্য যন্ত্রনা।
# মলের সাথে রক্তপাত এবং মলদ্বারে জ্বলন।  

এর চিকিৎসা কি ?
সাধারণত অত্যাধিক ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। কিছু সহজ প্রতিকারের মাধ্যমে এই রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন প্রচুর পরিমানে জল, ফলমূল, সবজি খেতে হবে। নাইট্রোগ্লিসারিন মলম বা হাইড্রোকর্টিসোন ক্রীম ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া সিটজ বাথ নিলে অনেকটাই অস্বস্তি কমে। এক গামলা ঈষদুষ্ণ জলে দিনে অন্তত দুবার কোমর অবধি ডুবিয়ে রাখলে অনেকটাই সুফল পাবেন। এর পরেও যদি সমস্যা হয় তাহলে একমাত্র চিকিৎসকই আপনার ভরসা।

সবশেষে ফিশ্চুলা 
ফিশ্চুলা হল একটি ছোট চ্যানেল বিশেষ, যা অন্ত্রের শেষভাগ ও মলদ্বারের চামড়ার মাঝামাঝি তৈরী হয়। এর মাধ্যমে রক্তপাত হয়, পুঁজ জমা হয় এবং কখনো কখনো মল বেরিয়ে আসে। ফিশ্চুলা যথেষ্ট বেদনাদায়ক এবং সার্জারি করেই এই রোগের নিরাময় ঘটে। ডঃ পূর্ণেন্দু রায় জানাচ্ছেন যে ফিশ্চুলার অন্যতম কারণ হল মলদ্বারে ইনফেকশন বা ফোঁড়া হওয়া। অনেকসময় ক্রনজ ডিজিস, টিউবারকিউলোসিস এবং ডাইভারটিকিউলাইটিস এর কারণেও ফিশ্চুলা হয়। 

এর উপসর্গ কি ?
# অসহনীয় একটানা ব্যথা হওয়া। বিশেষ করে বসার সময় অত্যন্ত অস্বস্তি হওয়া। 
# মলদ্বার ফুলে যাওয়া, চুলকানি হওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া। 
# পুঁজ বেরোনো ও রক্তক্ষরণ। 
# মলত্যাগে যন্ত্রনা ও কোষ্ঠকাঠিন্য।  
# জ্বর হওয়া। 

তাহলে ফিশ্চুলার চিকিৎসা কি ?
এর একমাত্র চিকিৎসা হল সার্জারি। তবে এটা অনেকটাই নির্ভর করবে মলদ্বারের ঠিক কোন জায়গায় ফিশ্চুলা হয়েছে তার ওপর। নিচে কিছু পদ্ধতি দেওয়া হল। 
# ফিশ্চুলোটমি  - ৯০% সময় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ সেরে উঠতে এক -দু মাস সময় লাগে। 
# সিটন - এই পদ্ধতি একটি সার্জিক্যাল থ্রেডের মাধ্যমে করা হয়। অনেকসময় অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করার আগে সিটন ব্যবহার করা হয়।
# ফিশ্চুলেক্টোমি - এই পদ্ধতিতে ফিশ্চুলা ট্রাক্ট কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। জটিল ফিশ্চুলার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। 
# লেজার ট্রিটমেন্ট - এই আধুনিক পদ্ধতিতে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে না। এতে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সেরে উঠতেও কম সময় লাগে। 

এছাড়াও আরও পদ্ধতি আছে যা জটিল ফিশ্চুলার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অবলম্বন করেন। 

সুতরাং এসমস্ত রোগ যদি আপনার হয়ে থাকে এবং আপনি যদি লজ্জা ও কুণ্ঠার ভেলায় ভেসে বেড়ান তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই কোনোরকম সঙ্কোচ না করে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া ভীষণ জরুরী। মনে রাখবেন এই সমস্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হওয়াটাই আপনার পক্ষে অত্যন্ত মঙ্গলের। নাহলে ইনফেকশনের কবলে পড়ে শেষকালে কি মুখ আর 'ইয়ে' দুটোই খোয়াবেন নাকি ?

#piles #fissure #fistula #medicalarticles #genesishospitalkolkata #asprescribed