Monday 23 October 2017

মাথা ব্যাথা না অন্যকিছু ?


একটা সহজ সরল আপাত নিরীহ রোগ। যে রোগটাকে অনায়াসেই আমরা হাতের পাঁচ করে দিব্যি দৈনন্দিন জীবনে পিছলিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই। যেমন ধরুন আজ অফিস যাবো না, ছোট্ট এসএমএস - 'প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা তুলতেই পারছি না'। কিম্বা বৌয়ের সাথে শপিংয়ে যেতে হবে - 'ওফ ! আজ না ভীষণ মাথা ধরেছে, তুমি একা চলে যাও প্লিজ'। অথবা অনেকদূরের কোনো নিমন্ত্রণ -  'অসহ্য যন্ত্রণায় মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, আজ ছেড়ে দিন দাদা, অন্য একদিন সময় করে গিফট দিয়ে আসব'। ইত্যাদি চেনা জানা ছকের আওতায় মাথা খেলিয়ে ডজ দেওয়াটা প্রায়শই আমাদের বেসিক স্কিলের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সত্যিই যদি একদিন পালে বাঘ পড়ে ? তাহলে ? ঘুঘু দেখতে গিয়ে যদি ফাঁদে জড়িয়ে আছাড় খেয়ে পড়েন, তখন ? ভেবে দেখেছেন কি ? তাহলে এমনই একটা সত্যি ঘটনা বলি। পেশা ও নামগুলো শুধু বদলে দিলাম। 

প্রফেসর দীনেন গুপ্ত দক্ষিণ কলকাতার একজন নামকরা শিক্ষক। পদার্থবিদ্যায় সুনামের ফলে কলেজ ও কলেজের বাইরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তাঁর যথেষ্ট। তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি কল্যাণী গুপ্ত সরকারি চাকুরে। গত দেড় মাস যাবৎ কল্যাণী মাথার মধ্যে এক আশ্চর্য যন্ত্রনা অনুভব করছেন এবং সময় বিশেষে কিছু মাথাব্যথার ওষুধও খেয়ে চলেছেন। কিন্তু রোগ নিরাময় হচ্ছে না কিছুতেই। সচরাচর সাধারণ মাথাব্যথায় অধিকাংশ সময়ই আমরা ডাক্তার এড়িয়ে চলি। স্বাভাবিকভাবে কল্যাণীও তাই করেছিলেন। ছাত্রছাত্রী নিয়ে ব্যস্ত প্রফেসরও স্ত্রীর মাথাব্যথাকে যথেষ্ট গুরুত্ত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কল্যাণীর মাথাব্যথার চরিত্রও বদলাতে লাগলো একটু একটু করে। কালক্ষেপ না করে কল্যাণী চলে গেলেন তাঁর এক চেনা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। কল্যাণীকে পরীক্ষা করে ও কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর ডাক্তার তাঁকে সিটি স্ক্যান করিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। যথাসময়ে রিপোর্টে দেখা গেল কল্যাণীর ব্রেনে গ্লিয়োব্লাস্টোমা মাল্টিফর্ম হয়েছে। শুনতে কতকটা এটম বোমের মত লাগলো বটে তবে সোজা বাংলা ভাষায় এর অর্থ হল - ব্রেন টিউমার। আজ্ঞে হ্যাঁ, সিনেমা সিরিয়ালে বহুল প্রচারিত যে রোগ ঠিক সেই রোগটির কথাই বলছি। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যে অনেকসময় কেউটে বেরিয়ে আসে এইটি হল তার মোক্ষম উদাহরণ। সুতরাং সময় থাকতে থাকতে যদি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলেন তাহলে বাপ্ মায়ের দেওয়া প্রাণটা রক্ষা পায় - এই আর কি। নিচে ব্রেন টিউমারের কিছু লক্ষণ দেওয়া হল। 

লক্ষণ :
# মাথা যন্ত্রণা, সময়ের সাথে সাথে ব্যাথার তীব্রতা বৃদ্ধি
# শরীরের একাংশে বা সারা শরীরে কাঁপুনি  
# দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিতে পরিবর্তন 
# হাতে ও পায়ে দুর্বলভাব
# মেজাজে পরিবর্তন 
# কথা বলার সময় সমস্যা 
# শারীরিক অক্ষমতা 
# স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
# বমি ভাব 
# ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব

কিছু কিছু সময় টিউমারের স্থান অনুযায়ী নানারকম হরমোনের সমস্যা হতে পারে। যেমন অনিয়মিত মাসিক, ঊষরতা, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস। এই সমস্ত লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে, কয়েক মাস বা বছর অথবা হঠাৎ করেও দেখা দিতে পারে। 

এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আর আলাদা করে আলোচনা করলাম না কারণ উপরের লক্ষণগুলি দেখা দিলে যে একজন দক্ষ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু কয়েকটা জিনিস - 

মনে রাখবেন :
এই ধরণের মাথাব্যথা কিন্তু ভোরবেলার দিকে বেশি হয়। সুতরাং সামান্য মাথাব্যথা বলে এড়িয়ে যাবেন না। 'আমার তো মাইগ্রেন আছে, বেশি পরিশ্রম করলে একটু আধটু মাথাব্যথা হয়' - ইত্যাদি যাবতীয় ধারণাগুলির থেকে বেরিয়ে আসুন। বিশেষ করে সে ব্যথা যদি নিয়ম করে প্রায় প্রত্যেকদিনই হতে থাকে এবং তা যদি কষ্টসাপেক্ষ হয় তাহলে বলব দেরি করা মোটে ভালো কাজ না। মাথা বলে কথা, তাছাড়া ঘাড়ের ওপর তো একটাই হয়, তাই দরকার কি বাপু মাথার ব্যামো নিয়ে ঘোরাঘুরি করার। টিউমার হোক বা না হোক সময় করে একটু দেখিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি ?

এই বিষয়টির উপস্থাপনা কিন্তু ভয় দেখানো নয় বা মাথাব্যথা হলেই ব্রেন টিউমার হবে এমনটাও বলা নয়। বরং এই রোগটি যে হতে পারে এবং এড়িয়ে যাবার কারণে আরও জটিল হতে পারে সেই বিষয়ে আরও সাবধান করা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন.......

#medicalarticle #braintumour #genesishospitalkolkata #asprescribed #health

No comments:

Post a Comment