Thursday 12 October 2017

নিদ্রাবিলাস


এক ঘুমে কি রাত কাবার হচ্ছে না ? আপনার নাক ডাকার জ্বালায় কি বাড়ির লোকজন বিরক্ত ? নাকি আপনি ঘুমোলে পাড়ার লোকজন জেগে উঠছে ? যদি সবকটা প্রশ্নের দিকে আপনি করুন মুখ করে তাকিয়ে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন আপনার স্লিপ স্টাডির বিশেষ প্রয়োজন আছে। কি ভাবছেন ? গ্রূপ স্টাডি শুনেছেন, স্লিপ স্টাডিটা আবার কি জিনিস ? তাহলে বলি, এটি একটি পরীক্ষা এবং এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যায় আপনার ঘুমের কোনো সমস্যা আছে কিনা বা কোনোরকম নিদ্রাজনিত রোগের দ্বারা আপনি আক্রান্ত কিনা। এই পরীক্ষার নাম পলিসমনোগ্রাফি। এর মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাস, চোখ এবং পায়ের ম্যুভমেন্ট ইত্যাদি রেকর্ড করা হয়। আপনার ঘুমের যদি কোনো অস্বাভাবিক প্যাটার্ন থাকে বা আপনার স্লিপ এপ্নিয়া হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পরীক্ষায় ধরা পড়বে। সুতরাং অহেতুক দেরি করে নিজের এবং বাড়ির লোকের বিপদ আর বাড়াবেন না। পলিসমনোগ্রাফি করিয়ে নিন আর ছোট্ট করে জেনে নিন স্লিপ এপ্নিয়া কি। 

স্লিপ এপ্নিয়া কারে কয়  ?
স্লিপ এপ্নিয়া হল একরকম ঘুমের ব্যাধি। ঘুমোনোর সময় শ্বাসজনিত সমস্যার ফলেই এই রোগ হয়। সাধারণত রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে কিছু সেকেন্ড বা মিনিটের বিলম্ব হলেই এই সমস্যা দেখা দেয়। সারারাতে বহুবার এই শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে অস্বাভাবিক নাক ডাকা। এই রোগ যাঁদের আছে তাঁরা সমস্তদিন ক্লান্তিতে ভোগেন ও অসময়ে তাঁদের ঘুম পেতে থাকে। স্লিপ এপ্নিয়ার ফলে রোগীর নানারকম শারীরিক সমস্যাও হয়, যার ফলে প্রতিদিনের কাজে ও মনোঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। মূলত স্লিপ এপ্নিয়া তিন ধরণের হয়।

১. অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ এপ্নিয়া - এটি তখনই হয় যখন ঘুমের মধ্যে গলার পিছনে থাকা সফ্ট টিস্যু কোল্যাপ্স করে বায়ুনালীর পথ রোধ করে। এই রোগটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

২. সেন্ট্রাল স্লিপ এপ্নিয়া - যখন মস্তিস্ক শ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী পেশীকে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয় তখনই এই রোগটি হয়। এই সমস্যাটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (central nervous system) সাথে যুক্ত।

৩. কমপ্লেক্স বা মিক্সড স্লিপ এপ্নিয়া - উপরের  দুটি স্লিপ এপ্নিয়ার সমন্বয়ের ফলে এই রোগ দেখা দেয়।

স্লিপ এপ্নিয়ার উপসর্গ কি কি ?
# ভীষণ জোরে নাক ডাকা
# ঘুমোনোর সময় হঠাৎ বিষম খাওয়া
# শ্বাস প্রশ্বাসে বিলম্ব
# শ্বাসকষ্টের কারণে ঘুম ভেঙে যাওয়া
# দিনের বেলায় ক্লান্তি ও অবসাদ
# গলায় ব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা
# অনিদ্রা ও তার ফলে শারীরিক অস্থিরতা
# রাত্রে বারে বারে টয়লেট যাওয়া
# সকালে মাথাব্যথা হওয়া

দেখে নিন স্লিপ এপ্নিয়ার প্রভাবে কি হতে পারে ?
# উচ্চ রক্তচাপ
# স্ট্রোক
# অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দন, হার্টফেল, হার্ট এট্যাক
# ডায়াবেটিস
# অবসাদ
# মাথাব্যথা   

আমার কি স্লিপ এপ্নিয়া হতে পারে ? 
স্লিপ এপ্নিয়া সাধারণত যে কোনো মানুষেরই হতে পারে, যে কোনো বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে। তবুও মূলত যে কারণে হয় সেগুলি হল :
# অতিরিক্ত ওজন
# ৪০ বছরের ঊর্দ্ধে বয়েস হলে 
# গলার আকার ১৬ - ১৭ ইঞ্চির বেশি হলে 
# টন্সিল বা জিহ্বার আকার যদি বড় হয়
# চোয়ালের হাড় যদি ছোট হয়
# এলার্জি বা সাইনাসের সমস্যাজনিত নাকে বাধা 
# পরিবারের কোনো সদস্যের যদি স্লিপ এপ্নিয়া হয়ে থাকে
# মদ্যপান, ধূমপান, ঘুমের ওষুধ বা ট্রাংকুইলাইজার এর অভ্যাস থাকে   

কিভাবে রেহাই পাবেন ?
# ওজন কমিয়ে ফেলুন, গলায় অতিরিক্ত টিস্যুর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 
# ধূমপান এড়িয়ে চলুন। এর ফলে গলা বা বায়ুনালী কোনোটাই ফুলবে না। 
# মদ্যপান ও ঘুমের ওষুধ একেবারে বর্জন করুন, বিশেষ করে ঘুমের আগে।  
# নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে এবং ভালো ঘুম হবে। 
# ঘুমের আগে ভারী খাবার বা ক্যাফিন এড়িয়ে চলুন।  
# প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমের অভ্যাস করুন। সঠিক ঘুমের ফলে স্লিপ এপ্নিয়া সেড়ে যাবার সম্ভাবনা  অনেকটাই।

অতএব কষ্ট করে ঘুমোনোর দরকার কি ? চিকিৎসকের পরামর্শে চট করে পোলিসমনোগ্রাফি করিয়ে নিন, তারপর সামান্য কিছু বদল আনুন আপনার জীবনযাত্রায়। এ যাত্রায় যে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন তা কিন্তু হলপ করে বলতে পারি। অন্তত বাড়ির লোকজনও হাঁপ ছেড়ে ঘুমোক একটু। তাই না ?

#medicalarticle #sleepapnoea #sleepapnea #genesishospitalkolkata #asprescribed

No comments:

Post a Comment