Friday 21 June 2019

ছোটদের বড় রোগ


যে কোনো পরিবারে শিশুর জন্মের সাথে সাথে আনন্দের আবহ বয়ে যায় সারা বাড়ি জুড়ে। তবে এরপর থেকেই বাবা মায়েদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে নানারকম চিন্তা আর আশঙ্কা। কিভাবে সন্তানকে সুস্থ রাখা যায় বা যত্ন করা যায় সেই ব্যাপারে প্রায় ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। তার অবশ্য সঙ্গত কারণ আছে বেশ। শিশুদের জন্মের পর পরই বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি থেকে যায় যা কপালে ভাঁজ ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। আসুন সেই সব রোগ নিয়ে একটু আলোচনা করে নিই যাতে সময় থাকতে সাবধান হওয়া যায় কারণ ছোট হলেও রোগে ছাড় নেই।


১. হাম - রুবিওলা ভাইরাসের কারণে হাম হয়। এই রোগের প্রভাবে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এরসাধারণ উপসর্গগুলি হল মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, নাক দিয়ে জল পড়া এবং কাশি। এই উপসর্গের কারণে শিশুর শরীরে লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা যায়।




২. হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ - কক্স্যাকি ভাইরাসের (coxsackievirus) কারণে এই রোগ হয়। এই রোগে জ্বর ও গলা ব্যাথা হয়। এছাড়া হাতের তালুতে, পায়ের পাতায় ও মুখের ভিতরে ফোস্কা হয়। এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই তবে দিন দশেক পরে আপনিই ঠিক হয়ে যায়।




৩. ফ্লু - সাধারণত শীতকালে এই রোগ হয় এবং এর উপসর্গগুলি হল মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, কাঁপুনি, সারা শরীরে ব্যাথা ইত্যাদি। সাধারণত আপনিই সেরে যায় তবে কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়াও হতে পারে। বর্তমানে ৬ মাস বয়েসের পর থেকেই এই রোগের টিকা দেওয়া হয়।


৪. মাম্পস - এটাও একপ্রকার ভাইরাস ঘটিত রোগ। প্রথম দিকে ফ্লুয়ের উপসর্গ দেখা দিলেও পরবর্তী সময় লালা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে প্রচন্ড ব্যাথা হয় (প্যারোটাইটিস - parotitis)। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভোগায়, তবে তেমন জটিল হলে মেনিঞ্জাইটিস বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।




৫. চিকেন পক্স - ভ্যারিসেলা (varicella) ভাইরাসের দরুণ চিকেন পক্স হয়। বর্তমানে নিয়মিত টিকাকরণের ফলে এই রোগ এখন অনেক কম। তবে অযত্নের ফলে ত্বকের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়াও হতে পারে।




৬. রোটাভাইরাস সংক্রমণ - অনুন্নত দেশগুলিতে রোটাভাইরাসের (rotavirus) প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই সংক্রমণের ফলে শিশুদের জ্বর, বমি এবং ডায়ারিয়া হয়। এছাড়া পরিস্থিতি জটিল হলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। বর্তমানে অবশ্য নিয়মিত টিকাকরণের ফলে এই সংক্রমণের প্রভাব অনেকটাই কম।




৭. কানের সংক্রমণ - শিশুদের কানের সংক্রমণ প্রায় সাধারণ ঘটনা। ইউস্ট্যাশিয়ান টিউব, অভ্যন্তরীণ কানের সঙ্গে গলার সংযোগস্থাপন করে এবং এখানে জমা হওয়া তরলের নিকাশী ব্যবস্থার কাজ করে। কোনোভাবে এই তরল আটকে গেলে এতে জীবাণু জন্মায় যার ফলে সংক্রমণ হয়। সাধারণ উপসর্গগুলি হল কানে ব্যাথা, জ্বর, কান থেকে নিষ্ক্রমণ ইত্যাদি।


৮. জয়বাংলা - এই রোগও একরকম ভাইরাসের কারণে হয়। জয়বাংলা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস (conjunctivitis) অত্যন্ত সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ৫ দিনেই এই রোগের উপশম হয় তবে জটিলতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ বাঞ্ছনীয়।



৯. ক্ৰূপ - এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ শিশুরোগ এবং বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগে স্বরযন্ত্র (larynx) ও শ্বাসনালী (trachea) ফুলে যায়। এছাড়া প্রচন্ড কাশি এবং শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হয়। ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতে রেখে স্টেরোয়েড বা ইনহেলার ব্যবহার করেও চিকিৎসা করা যায় তবে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়।




১০. হুপিং কাশি - বোর্ডেটেলা পারটুসিস (Bordetella pertussis) নামক এক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ। এটা ভীষণ সংক্রামক এবং এতে শিশুদের মৃত্যুও হতে পারে। প্রথমে ঠাণ্ডা লাগার উপসর্গ দিয়ে শুরু হয় এবং পরে একটানা দমবন্ধ করা কাশি হতে থাকে। টিকাকরণই এই রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায়।


উপরে উল্লিখিত অধিকাংশ রোগের টিকা আছে যা সময়মতো শিশুকে দিলে অনেক জটিলতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যেগুলো সাধারণ রোগ অর্থাৎ একটু অনিয়মে হামেশাই হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু নজর এড়িয়ে গেলে চলবে না। কারণ অবহেলার ফলে সাধারণ রোগ অনেক সময়ই অসাধারণ আকার নিয়ে নানান রকম বিপদ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং শিশুদের সাবধানে রাখুন এবং ছোটখাট সমস্যাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জেনেসিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের এপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে - 8584883884 / 033 - 40224242

Tags : Common Paediatric Diseases ; Common Child Disease ; Genesis Hospital Kolkata ; Prescription Theke 

No comments:

Post a Comment