Wednesday 4 April 2018

খতরনাক


নাসিকা গর্জন যেমন অতিরিক্ত হলে আমাদের বিরক্তির শেষ থাকে না তেমনি নাসিকা বর্ষণ হলেও কিন্তু চিন্তার অন্ত থাকে না। বিশেষ করে নাক দিয়ে যদি হঠাৎ রক্তপাত হয় তাহলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে নেওয়ার একটা চালু রেওয়াজ আছে আমাদের। ঠিক তারপরেই যেটা ঘটে তা হল এই রক্তপাতের সাথে কোন কোন রোগের সম্পর্ক আছে তা নিয়ে একটা জম্পেশ আলোচনা শুরু করে দেওয়া বা নিজে নিজেই নানারকম আকাশকুসুম ভাবতে বসে যাওয়া। এক্ষেত্রে যেটা করণীয় তা হল মাথা ঠাণ্ডা রাখা এবং নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে রক্তপাতকে আয়ত্তে আনা। তার আগে আসুন একটু জেনে নিই যে কি কি কারণে রক্তপাত হতে পারে এবং এই নিয়ে কোনো উদ্বেগের অবকাশ আছে কিনা। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাক থেকে রক্তপাতের ঘটনাকে এপিসট্যাক্সিস বলে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা উষ্ণ আবহাওয়ায় এপিসট্যাক্সিসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটা যেকোনো বয়েসেই হতে পারে তবে ২ থেকে ১০ বছরের শিশুদের মধ্যে এবং ৫০ থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মধ্যে বেশি হয়। এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা এবং দু ধরণের হয়ে থাকে। যথা -

# নাকের অগ্রভাগ থেকে রক্তপাত - নাকের অভ্যন্তরীণ কোনো শিরা বা উপশিরা থেকে এই রক্তপাত ঘটে থাকে এবং এই রক্তপাতকে খুব সহজেই আয়ত্তে আনা যায়।
# নাকের পশ্চাৎভাগ থেকে রক্তপাত - এই রক্তপাত খুব একটা বেশি দেখা যায় না তবে বয়স্ক মানুষদেরই সাধারণত হয় এটা। নাকের পশ্চাৎভাগে অবস্থিত ধমনী থেকে এই রক্তপাত হয়। এক্ষেত্রে রক্তপাতের মাত্রা অনেক বেশি এবং হলে অবশ্যই একজন ই.এন.টি বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।

এমনটা হওয়ার কারণ কি ?
নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে প্রচুর ক্ষুদ্র শিরা আছে যা ছোট্ট আঘাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার ফলে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট। তবে অত্যন্ত সাধারণ কারণগুলি হল -
#  শুকনো বাতাস - যখন নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণ শুকিয়ে যায় তখনই রক্তপাত বা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে বেশি। অতি গ্রীষ্মের সময় বা অতিরিক্ত শীতল জায়গায় এই সমস্যাটা হয়। 
# নাক খোঁটা - এই অভ্যাস যদি আপনার থাকে তাহলে বলব অবিলম্বে সংবরণ করুন নিজেকে।  

এছাড়াও আর যে যে কারণে রক্তপাত হয় তা হল     
# সাইনাসের ইনফেকশন 
# এলার্জি 
# সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা নাক ফুলে গেলে 
# নাকে কিছু আটকে থাকা 
# বক্র নাকের হাড়  
# হিমোফিলিয়া - রক্ত জমাট না বাঁধার ব্যাধি 
# এসপিরিনের ব্যবহার 
# ওয়ার্ফরিন ও হেপারিনের ব্যবহার 
# কোকেনের ব্যবহার 
# ন্যাসাল স্প্রের অতি ব্যবহার 
# ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে র অভাব
# উচ্চ রক্তচাপ 
# বার্নার্ড সোলার ডিজিজ - প্লেটলেটের সমস্যা 
# এনিমিয়া 
# ডেঙ্গু জ্বর  

রক্তপাত বন্ধ করার কি উপায় আছে ?
রক্তপাত বন্ধ করার কিছু সহজ সরল উপায় আছে। সবার আগে যেটা করতে হবে তা হল - 
# শান্ত থাকুন, অযথা ভয় পাবেন না 
# সোজা হয়ে বসুন এবং মাথাটা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখুন  
# মাথা পিছনে হেলাবেন না, এতে রক্ত আপনার গলা দিয়ে নেমে পেটে চলে যেতে পারে 
# আঙ্গুল দিয়ে ১০ মিনিট নাক চেপে রাখুন, একটু কষ্ট হলেও করুন 
# মুখে কোনো রক্ত থাকলে ফেলে দিন, গিলে নিলে বমি হয়ে যেতে পারে
# এলার্জি হলে আস্তে হাঁচুন বা নাক ঝাড়ুন, বেশি জোর দেবেন না  

সাধারণ রক্তপাতে এগুলো করলে অনেকটাই কাজ দেবে। তবে এরপরেও যদি রক্তপাত হতে থাকে তাহলে বেশ কয়েকটা উপায় আছে যার মাধ্যমে রক্তপাত আয়ত্তে আসে অনেকটাই। যেমন -

# পোষ্টেরিয়ার নেসাল প্যাক - প্রথমে একটা সরু ক্যাথিটার নাকের মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে মুখের ভিতর থেকে বের করে আনা হয়। ক্যাথিটারের শেষ ভাগে একটা প্যাক বেঁধে দেওয়া হয়। এই প্যাকের মধ্যে থাকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ। এরপর নাকের ভিতর থেকে ক্যাথিটার বের করে আনলে ওই প্যাকটি বসে যায় নাকের পশ্চাৎভাগে অর্থাৎ ঠিক যেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছে। প্যাকের শেষপ্রান্তে একটা সরু সুতো বাঁধা থাকে যা মুখের ভিতর থেকে বের করে এনে একটা টেপ দিয়ে গালে আটকে রাখা হয়। ৪৮ ঘন্টা পর রক্তপাত আয়ত্তে এলে এই প্যাক খুলে ফেলা হয়। এছাড়া ফোলি ক্যাথিটার ব্যবহার করেও রক্ত বন্ধ করা হয়।

# কটারি - এই পদ্ধতিতে একটা সিলভার নাইট্রেট স্টিক দিয়ে নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে বুলিয়ে দেওয়া হয়। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একটা এসিড তৈরী হয় এবং ওই আস্তরণের কিছু কিছু অংশ পুড়ে যায়, যার ফলে রক্তপাত কমে। এছাড়া রক্তপাতের স্থান চিহ্নিত করে বাইপোলার কটারিজেশন পদ্ধতিতে ইলেক্ট্রিক কারেন্টের মাধ্যমে নাকের অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সুফল পাওয়া যায়।

# নেসাল এন্ডোস্কোপি - একটা ফাইবার অপটিক সরু যন্ত্র, লাইট আর একটা ছোট্ট ক্যামেরার মাধ্যমে এন্ডোস্কোপি করা হয়। এই যন্ত্রটি নাকের ভিতর ঢুকিয়ে নাকের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় রক্তপাতের সঠিক কারণটা কি। এরপর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত নিরাপদ এবং এতে বিরাট কিছু সমস্যা হয় না।

অতএব সাধারণভাবে যদি রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি এই সমস্যা আপনার চিরকালীন হয় আর আপনি যদি এখনো কোনো ইএনটি বিশেষজ্ঞকে না দেখিয়ে থাকেন তাহলে বলব আপনি অযথাই ঝুঁকি নিচ্ছেন। সামান্য নাক নিয়ে নাকানি চোবানি খাবার দরকার কি বলুন তো ? খাবার তো আরো অনেক জিনিস আছে, তাই না ?

#epistaxis #nosebleeding #nasalendoscopy #cautery #nasalpack #medicalarticle #bengalihealtharticle #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata



No comments:

Post a Comment