Tuesday 30 January 2018

তিল থেকে তাল

কথায় বলে বিউটি স্পটের কদরই আলাদা। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে একপ্রকার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বলা যেতে পারে। মুখে যাদের বিউটি স্পট আছে তারা যে রাস্তাঘাটে অতিরিক্ত মনোযোগ পেয়ে থাকেন এ হয়ত না বললেও চলবে। ভুবনমোহিনী হাসির অন্তরালে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তার দিকে বরং আরেকটু লক্ষ্য রাখুন। খেয়াল করে দেখুন তো এই বিউটি স্পটের বিউটি চিরকাল একইরকম থাকছে কিনা ? অর্থাৎ যে স্পট বা  তিলটি সৌন্দর্যের মূল উপাদান সেইটি কোনোরকম আকারে পরিবর্তন হল, নাকি তার বর্ণের কোনোরকম বিসদৃশ ঘটল ! তা যদি হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান এক্ষুনি। মেলানোমা নামক ত্মকের একটি ভয়ানক ক্যান্সার হতে পারে। এই রোগের কথা আগে না শুনে থাকলে, আজই জেনে নিন এর হাল হকিকত।  

মেলানোমা কি ?
খুব প্রচলিত না হলেও ত্মকের এই ক্যান্সারটি অত্যন্ত মারাত্মক কারণ এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে কিছু জেনেটিক সমস্যা তৈরী হয়। যার ফলে ত্মকের কোষগুলি দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি করে এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে পরিণত হয়। এই টিউমারগুলি তৈরী হয় এপিডার্মিসের বেসাল লেয়ারে। ত্মকের যে কোনো জায়গায় হতে পারে এই রোগ। মেলানোমা কতকটা তিলের মতো দেখতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে আবার তিল থেকেই শুরু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেলানোমা কালো বা বাদামী রঙের হয়। আবার কখনো কখনো গোলাপী, লাল, বেগুনি বা সাদা রঙেরও হতে পারে। প্রধানত ইউভি (UV) রশ্মির তীব্রতার কারণেই ত্মকে মেলানোমা হয়। 

তবে কি আশার আলো একেবারেই নেই ? হ্যাঁ আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি মেলানোমা ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা হয় তাহলে প্রায়ই সেড়ে যায়। তা যদি না হয় তাহলে এই ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। 

কত রকমের হয় এই রোগ ?
মেলানোমা সাধারণত চার রকমের হয়। 
#  সুপার ফিসিয়াল স্প্রেডিং মেলানোমা - এটি বেশ প্রচলিত। সাধারণত বুক, পেট, পিঠ বা হাতে পায়ে দেখা যায়।

# নোডিউলার মেলানোমা - বুক, পিঠ, মাথা বা গলার দিকে হয়। অপেক্ষাকৃত দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এই রোগের এবং ধীরে ধীরে লাল হতে থাকে। 

# লেন্টিগো ম্যালাইনা মেলানোমা - বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে শরীরের সেই সমস্ত জায়গাতে হয় যা বহু বছর ধরে সূর্যের রশ্মিতে উন্মুক্ত থাকে। প্রথমে একটা দাগের মতো হয়, সময়ের সাথে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। তুলনামূলক ভাবে এটি কম বিপজ্জনক।

# এক্রাল লেন্টিজিনাস মেলানোমা - এই রোগটি বিরল। সাধারণত এটি দেখা যায় হাতের চেটোয়, গোড়ালির নিচে অথবা নখের তলায়। এর সাথে ত্মকের বর্ণ বা সূর্যের রশ্মির কোনো সম্পর্ক নেই।

এই রোগ হওয়ার কারণ কি ?
কোনো একটি নির্দিষ্ট ধরণের ত্মকে মেলানোমা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিম্নলিখিত কারণের ফলে এই রোগ হতে পারে। 
# ছোট ছোট প্যাচ হওয়া বা সূর্য রশ্মির কারণে সেই প্যাচ গাঢ় হওয়া। 
# প্রচুর তিল হওয়া 
# সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের তিল হওয়া 
# ছোট ছোট বাদামী রঙের স্পট বা বয়সজনিত কোনো স্পট দেখা দেওয়া 
# এমন ত্মক যা সহজেই রোদে পুড়ে যায়
# অতিরিক্ত সময় ধরে সূর্যের রশ্মিতে উন্মুক্ত থাকা  
# পরিবারের কোনো সদস্যের মেলানোমা হওয়া বা 
# যদি কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়ে থাকে

এর উপসর্গ কি কি ?
অন্যান্য ক্যান্সারের মতোই মেলানোমার প্রাথমিক স্টেজ শনাক্ত করা মুশকিল হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ত্মকে কোনোরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিনা। যেমন - 
# নতুন কোনো স্পট বা তিল হওয়া অথবা পুরোনো তিলের বর্ণ বা আকারে কোনো পরিবর্তন 
# ত্মকের কোনো সমস্যা সহজে ঠিক না হওয়া  
# কোনো স্পটে ব্যাথা হওয়া বা রক্তক্ষরণ হওয়া 
# কোনো স্পট অতিরিক্ত উজ্জ্বল, মসৃণ বা ম্লান হওয়া, অথবা 
# কোনো অদ্ভুত দর্শন শক্ত লাল পিণ্ড যার থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে 

কিভাবে বুঝবেন ?
এবিসিডিই (ABCDE) টেস্টের মাধ্যমে মেলানোমার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। নিচে বিশদে দেওয়া হল। 
# এসিমেট্রিক - সাধারণ তিল, গোল বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ক্যান্সারাস তিল কিন্তু গোল বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। অর্থাৎ তিলটির দুদিক একইরকম দেখতে নয়। 
# বর্ডার - তুমলমূলক ভাবে অমসৃণ বা ঝাপসা হবে।  
# কালার - বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে, যেমন - কালো, বাদামী, সাদা বা নীল। 
# ডায়ামিটার - তিলের আকারে পরিবর্তন বা সাধারণ তিলের থেকে বড় হলে ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। 
# ইভলভিং - কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই যদি তিলের চেহারায় পরিবর্তন আসে তাহলেও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। 

চিকিৎসার উপায় 
অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় এর চিকিৎসা খানিকটা সহজ কারণ এর সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব। মেলানোমার অত্যন্ত প্রচলিত চিকিৎসা হল সার্জারি। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ক্ষতস্থান ও চারপাশের টিস্যু অপসারণ করা হয়। যদি ত্মকের অনেকটা জায়গা জুড়ে হয় তাহলে স্কিন গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে নির্মূল করা হয়। এছাড়া স্কিন ক্যান্সারের অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল - কেমোথেরাপি এবং বায়োলজিক্যাল থেরাপি। বিরল ক্ষেত্রে ফোটোডায়নামিক থেরাপিও করা হয়। 

সুতরাং মেলানোমার জন্য দরজা খোলা না রেখে আমাদের প্রতিরোধের দিকে মন দেওয়াটাই বেশি প্রয়োজন। অতিরিক্ত রোদ বা সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন। বলাই বাহুল্য ব্যাগে সানস্ক্রিন রাখতে হবে এবং সরাসরি সূর্যের আলো থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। মেলানোমার কবল থেকে বাঁচতে নিজেকেই প্রাথমিক ধাপটা নিতে হবে, জানবেন, বিপদ কিন্তু ওত পেতেই আছে। তাই আগের থেকেই সাবধান হন।

#melanoma #skincancer #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed #bengalihealtharticle #medicalarticle #health 

No comments:

Post a Comment