Friday 12 January 2018

দিনের শেষে ঘুমের দেশে

(Audio File)
https://soundcloud.com/user-298724335/fz5bc3sdjgnc 


ঘুম বড় আশ্চর্য জিনিস। পেলে একরকম না পেলে আরেকরকম। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়াও যেমন ঠিক নয় তেমনি ঘুমকে অবজ্ঞা করাও মোটে উচিত নয়। ট্রামে, বাসে বা ট্রেনে যদি আপনি মখমলি কাঁধ পেলেই চোখ বোজার সুযোগ খোঁজেন তাহলে বলতে হবে আপনি ঘুমের অভাবে ভুগছেন অথবা ঐটে আপনার ভীষণ রকম বদভ্যেস। সেটা যদি না হয় তাহলে চট করে পড়ে ফেলুন ঘুমের অভাবে কি কি হতে পারে। 

ঘুমের অভাবে কি হতে পারে ?
ঘুমের অভাবে নানান রকম সমস্যা তৈরী হয়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেসব সমস্যা জটিলতর হতে থাকে অচিরেই। এক্ষেত্রে প্রথমেই যার কথা বলতে হয় তা হল স্মৃতি। ভীষণ রকম স্মৃতিজনিত সমস্যা হতে পারে। যাঁরা গান ভালোবাসেন তাঁদের, 'তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি' - রবিঠাকুরের এই গানটি আর নাও মনে আসতে পারে। মুচকি হেসে ভাবছেন, 'যাহ ! রবিঠাকুর ভুলে যাব ! তাই আবার কখনো হয় নাকি' ! তাহলে একটি সরল, ছোট্ট ব্যাখ্যা দিই। আসন্ন বিপদটা বুঝতে সুবিধে হবে আপনার। খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনার ইমেল্ ইনবক্সের মতো মস্তিষ্কেরও একটি স্মৃতির ইনবক্স থাকে। ঠিকঠাক ঘুম না হলে এই ইনবক্সটি আপনা আপনিই বন্ধ বা শাট ডাউন হয়ে যায়। যার ফলে নতুন করে কোনোরকম স্মৃতি তৈরী হতে পারে না। আপনার স্মৃতিবিলোপ হতে থাকে খুব তাড়াতাড়ি। দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়।  

এছাড়া আরও একটি সমস্যা আছে। ঘুমের অভাবে একটি বিষাক্ত প্রোটিন তৈরী হয় যার নাম হল 'বিটা এমিলয়েড'। এই প্রোটিন তৈরীর ফলে আপনার মারাত্মক রকমের স্মৃতি সংশয় হতে পারে, ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম - আলঝেইমার্স ডিজিজ। ঘুমোনোর সময় আপনার মস্তিষ্কে একটি নিকাশী ব্যবস্থা সচল হয়ে ওঠে। যার মাধ্যমে এই 'বিটা এমিলয়েড' ধুয়ে সাফ হয়ে বেরিয়ে যায়। সুতরাং ঘুমের অভাব কিন্তু অজান্তেই আপনার মস্তিষ্কে তৈরী করবে এই আলঝেইমার্স প্রোটিন। যত বেশি মাত্রায় এই ক্ষতিকারক প্রোটিন তৈরী হবে ততটাই দ্রুত আপনি স্মৃতিভ্রংশ হবেন। "ম্যায় কাঁহা হুঁ" ? এই ধরণের প্রশ্ন আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে আসাটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং 'ঘুমিয়ে কি কেউ বড়লোক হতে পেরেছে' ? - এই বেদবাক্যে যদি আপনি বিশ্বাসী হন তাহলে কোন কোন রোগকে আগাম পান সুপুরি দিয়ে নিমন্ত্রণ দিচ্ছেন তা একবার নিচের লেখায় চোখ বুলিয়ে নিলেই জানতে পারবেন।   

শরীরের ওপর কি কি প্রভাব পড়ে  ?
শরীরের ওপর এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যাঁরা ইচ্ছে করে রাত জাগেন বা অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভোগেন তাঁরা হয়ত জানেন না যে অজান্তেই আপনারা শরীরের মধ্যে ডেকে আনছেন অবাঞ্ছিত বিপদ। পরবর্তীকালে যে বিপদ আপনাদের প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তখন হয়ত বড্ড বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাই আগের থেকেই জেনে রাখুন নিম্নলিখিত বিপদের তালিকা এবং প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নিন এখন থেকেই।

# প্রজনন প্রক্রিয়ায় এর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। যে সমস্ত পুরুষরা ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ঘুমোন তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেশ কম হয়। ঘুমের অভাবে কিন্তু তাদের পুরুষত্ব হ্রাস পাবার সম্ভাবনা সাংঘাতিক রকম বেশি। 

# রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব মারাত্মক। যাঁরা ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ঘুমোন তাঁদের এন্টি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধক কোষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস পায়। এছাড়া অন্য আরও ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে প্রবল। যেমন অন্ত্রের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার এবং স্তনের ক্যান্সার। সম্প্রতি হু (WHO), রাত্রিকালীন  শিফটের কাজগুলিকে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

# এছাড়া কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের ওপরেও বিশেষ প্রভাব পড়ে। এখানে জেনে রাখা ভালো যে ঘুমোনোর সময়তেই আমরা কিন্তু রক্তচাপের ওষুধ সঞ্চয় করি। আশ্চর্য হচ্ছেন ? আমাদের হয়তো অনেকেরই এই সহজ তথ্যটি জানা নেই যে ঘুমোনোর সময় হৃদ কম্পন ধীরগতির হয় যার ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। জানা গেছে যে ৬ঘন্টা বা তার কম সময়ে ঘুমের দরুন হার্ট এট্যাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে ২০০ শতাংশ।  সুতরাং পরিমিত ঘুম, সুস্থ হৃদয়ের অন্যতম কারণ। 

বছরে দুবার প্রায় ১৬ কোটি মানুষের ওপর বিশ্বব্যাপী একটি পরীক্ষা করা হয় যার নাম হল ডেলাইট সেভিং টাইম। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে যে একদিন এক ঘন্টা কম ঘুমোনোর ফলে তার পরের দিনে ২৪ শতাংশ হার্ট এট্যাক বেড়েছে। এমতাবস্থায় খুব স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন উঠে আসে। 

ঘুম ছাড়া কতক্ষন পর্যন্ত আমাদের মস্তিস্ক সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে ?
উত্তর হল - ১৬ ঘন্টা। তারপরেই মানসিক ও শারীরিক অবনতি ঘটে। কতকটা গাড়ির স্টিয়ারিঙ ধরে  নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চালানোর মতো। অতএব জেগে থাকার ক্ষতি মেরামতির জন্য অন্তত পক্ষে ৮ ঘন্টার ঘুম অতি আবশ্যক। তাই এরপরেও যদি আপনার মনে হয় রাত জেগে আরও কিছুক্ষন লুডো খেলে নি, যা আপনি খেলতেই পারেন কিন্তু পরের দিনে আপনাকে না ছক্কা পুটের মাশুল গুনতে হয় সে ব্যাপারে কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। বাকি আপনি দিনের শেষে ঘুমের দেশে যাবেন না অন্য কোথাও সে আপনার একান্তই ব্যক্তিগত।

courtesy : Prof. Matthew Walker, Neuroscience and Psychology, University of California, Berkeley

#sleepdisorders #sleepproblems #lackofsleep #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata


No comments:

Post a Comment