Friday, 7 December 2018

কিছু কিছু কথা



মনের সাথে শরীরের অমিলটা, রূপান্তরিত লিঙ্গ এবং রূপান্তরকামীদের জন্য যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ। বাহ্যিক অবয়বের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে যে মানুষটি অধিকাংশ সময়ই কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর  সমস্যা হয় প্রচুর। কপালে জোটে নানান বিদ্রূপ ও লাঞ্ছনা। কারণ ধ্বনি খাপ খায়না শরীরের সাথে। একজন রূপান্তরকামী পুরুষ তাঁর পোশাকের ধারায় বদল আনতে পারলেও গলার স্বরটা কিন্তু তাঁর  পুরুষেরই থেকে যায়। তবে আর চিন্তা নেই ! একঝাঁক অভিজ্ঞ ই.এন.টি সার্জেন  এবং স্পীচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্ট-দের তত্ত্বাবধানে জেনেসিস হাসপাতাল ও ডেসিবেল হিয়ারিং ক্লিনিক  (DBHCL) - এর যুগ্ম প্রচেষ্টায় এখন ধ্বনি রূপান্তরের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন ! আপনার ভিতরের পুরুষ বা মহিলা এবার থেকে বাঙময় হবে। কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই এখন প্রাণ খুলে কথা বলা যাবে আকাঙ্খিত ধ্বনিতে। সার্জারি এবং স্পীচ থেরাপির মাধ্যমে সমস্তটা হবে খুবই স্বাভাবিকভাবে, কোনোরকম জটিলতা ছাড়াই। জেনেসিস হাসপাতাল ও DBHCL এর ই.এন.টি সার্জেন  এবং স্পীচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্টরা শুধু এটা দাবীই করছেন না বরং হাতে কলমে করে দেখাচ্ছেন একের পর এক।

দিল্লী, আসানসোল, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই রূপান্তরকামী এবং রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষরা অত্যন্ত সফলভাবে এই সার্জারি করিয়েছেন এবং আশাতীত ফল পেয়েছেন। এখনো অবধি ৭ জনের পুরুষ থেকে মহিলা ধ্বনি রূপান্তর করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি সার্জারি দুর্দান্ত ভাবে সফল প্রমানিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল এই অস্ত্রোপচার, অধিকাংশ সময়, লোকাল অ্যানাস্থেসিয়ার মাধ্যমে এক ঘন্টার মধ্যেই করে ফেলা যায় এবং একদিন পরেই রুগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুরুষ থেকে মহিলা রূপান্তরের ক্ষেত্রে, প্রয়োজন পড়লে গলার নমনীয় ভাবটাও এনে দেওয়া হয়।

যে সমস্ত মানুষরা এই ধ্বনি রূপান্তর করিয়েছেন তাঁরা বলছেন যে তাঁরা এক নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছেন। পাল্টে গেছে তাঁদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিকোণ, তাঁদের শরীরের দুর্বলতাকে কাটিয়ে ফেলে তাঁরা এখন অন্য মানুষ, অনেক পরিবর্তিত, আরও অনেক বেশি স্বাধীন। কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া হল -

# একজন শিক্ষক বলছেন যে রূপান্তরিত হলেও কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁকে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। অস্ত্রোপচারের পর সমস্ত বাধা কাটিয়ে তিনি এখন এগিয়ে চলেছেন নতুন জীবনের দিকে।

# একটি নার্সিং হোমের একজন জনসংযোগ আধিকারিক ফিরে পেয়েছেন তাঁর হৃত আত্মবিশ্বাস। নার্সিং হোমের সমস্ত পরিস্থিতি এখন তিনি নিঁখুত হাতে সামলাচ্ছেন।

# ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর সংগ্রামের পর একজন মডেল এখন সফলভাবে কাজ করছেন এই ধ্বনি রূপান্তরের দৌলতে।

জেনেসিস হাসপাতাল ও DBHCL - এর চিকিৎসকরা একযোগে দেখাচ্ছেন এক নতুন আলোর দিশা। রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের কাছে এ যে এক বৈপ্লবিক জাগরণ, এ বিষয় কোনো সন্দেহ নেই। যদিও ভারতবর্ষের দু একটা সংস্থায় ধ্বনি রূপান্তর করা হয় তবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে এই প্রয়াস হল সর্বপ্রথম তথা চমকপ্রদ। সুতরাং যাঁরা ধ্বনি রূপান্তর করতে চান অথচ এখনো পর্যন্ত কোনো উপায় খুঁজে পাননি তাঁরা দেরি না করে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে - ০৩৩ ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২ ৪২৪২। বেছে নিন নতুন করে বেঁচে ওঠার পথ।

#Transgendervoicetransformation #transgenderissues #GenesisHospitalKolkata #DBHCL #Asprescribed

Friday, 17 August 2018

এলার্জিক রাইনাইটিস ! একটি বিরক্তিকর সমস্যা



উল্টোডাঙা নিবাসী হরিপদ সান্যাল সদ্য এস.এস.সি পাশ করে একটা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি  পেয়েছেন। স্কুলের প্রথম দিন। হরিপদ গম্ভীর মুখে অষ্টম শ্রেণীর ঘরে ঢুকলেন। ঘরভর্তি ছাত্র, নতুন শিক্ষকের রাশভারী ভাব দেখে অনেকেরই মুখ থমথমে। হরিপদ দু চারটে প্রাথমিক কথা বলে নিজের পরিচয় দিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটা বেমক্কা হাঁচির তোড়ে মুখ ফস্কে বেরিয়ে এল, "আ.. আঃ নাম হরিপদ...হ্যাঁচ্চো" !! মুহূর্তে ক্লাস জুড়ে হাসির বন্যা বয়ে গেল। গম্ভীর পরিবেশটা আমূল বদলে গিয়ে ফাজলামিতে পরিণত হল। দু একটা ফচকে ছেলে জিজ্ঞেস করে বসল, "হ্যাঁ, কি নাম বললেন স্যার"?? হরিপদ খানিক থতমত খেয়ে সামলে নিয়ে আবার নিজের নাম বলতে গেলেন। 

কিন্তু এবারও যথারীতি বিরাট হাঁচির তোড়ে নামটা জিভের ডগায় জড়িয়ে সমস্তটা তছনছ হয়ে গেল। তিনি এবারও  বললেন, "আঃনাম…..হরিপদ....হ্যাঁচ্চো" ! বলাই বাহুল্য এরপর থেকে হরিপদ সান্যাল  নাম বদলে গিয়ে হরিপদ হ্যাঁচ্চো হয়ে সম্পূর্ণ ভুল কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। এমনকি স্কুলের সহকর্মীরা পর্যন্ত তাঁকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করে দিলেন। হরিপদর অবশ্য এ সমস্যা বহুদিনের। সামান্য সিজন চেঞ্জ বা ধুলো ময়লার কারণে হরিপদ হেঁচে হেঁচে পাগল হয়ে ওঠেন। ব্যাপারটা যখন স্কুল অবধি পৌঁছে গেল তখন হরিপদ আর থাকতে না পেরে একজন ই.এন.টি চিকিৎসককে দেখালেন। তিনি বললেন হরিপদর এলার্জিক রাইনাইটিস আছে। আসুন জেনে নিই এই এলার্জিক রাইনাইটিস কি।
     
সাধারণত অ্যালার্জেন (allergen) নামক একটি বস্তু থেকে এলার্জি হয়। এলার্জিক রাইনাইটিস, বা হেম জ্বর, এমনই কিছু নির্দিষ্ট অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। ফুলের রেণু হল এলার্জিক রাইনাইটিসের অন্যতম কারণ। এছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে যেমন - 

# ঘাসের রেণু
# ধুলো
# পশুদের শুকনো চামড়া
# বিড়ালের লালা
# মোল্ড - এক ধরণের ছত্রাক যা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে জন্মায় 

তাছাড়া কিছু বাহ্যিক কারণেও এই রোগ হতে পারে। যেমন - ধূমপান বা কোনো রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, ঠাণ্ডা তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুদূষণ, নির্দিষ্ট কোনো সুগন্ধি, ধোঁয়া ইত্যাদি। 

উপরোক্ত কারণে কিছু মানুষের সারা বছর ধরেই এলার্জিক রাইনাইটিস থাকে আবার কোনো কোনো মানুষের একটা নির্দিষ্ট ঋতুতে এই সমস্যা হয়। যেমন বসন্তের শুরুতে বা শীতের আগে বেশি হয়। তবে এই ধরণের এলার্জি যেকোনো মানুষেরই হতে পারে। যাদের এলার্জিক রাইনাইটিসের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা এজমা (asthma), একজিমা (eczema) আছে তাদের ক্ষেত্রে এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রেও কতকটা একইরকম। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বছরের কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় হচ্ছে কিনা। তা যদি হয় তাহলে ওই সময়টিতে শিশুটির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। জামাকাপড় নিয়মিত ধোয়া, বাড়ির ভিতর ও আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি খুবই জরুরি। তবে এর সাথে কিছু জটিলতাও দেখা দিতে পারে যেমন - শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট বা শ্বাস টানার সময় শব্দ হওয়া। এমনটা হলে দেরি না করে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। 

এই রোগের বেশ কিছু উপসর্গ আছে। যেমন - 


# সাংঘাতিক হাঁচি
# নাক দিয়ে জল পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
# কাশি
# গলা ফুলে যাওয়া
# চোখ দিয়ে জল পড়া বা অস্বস্তি
# চোখের তলায় কালি
# মাঝে মাঝেই মাথা ব্যাথা হওয়া
# এক্জিমা অর্থাৎ ত্মকে চুলকানি হওয়া
# ক্লান্তিভাব ইত্যাদি 

মনে রাখবেন এই উপসর্গগুলি সহজ মনে হলেও এই রোগ কিন্তু আপনা আপনি সেরে যায় না। কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যা করলে এই রোগের উপশম হয়। অন্যথায় বেশ কিছু জটিলতা তৈরী হতে পারে। যেমন -
# এজমা হতে পারে বা থাকলে আরও বেশি হতে পারে
# কানের সংক্রমণ
# সাইনুসাইটিস বা সাইনাসের সংক্রমণ
# রাত্রে ঘুমোনোয় সমস্যা 

তাহলে এর চিকিৎসা কি ?

এলার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসা অত্যন্ত সহজ এবং সরল। এর বেশ কিছু ওষুধ আছে যেমন - ফেক্সোফেনাডিন, ডিফেনহাইড্রামিন, সেট্রিজিন, লোরাটাডিন ইত্যাদি যা একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে নিয়মিত খেলেই অনেকটা সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু চোখের ড্রপ বা নাকের স্প্রে আছে যা এই ধরণের সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। আরও দুটি চিকিসা পদ্ধতি আছে যাদের নাম হল - ইমিউনোথেরাপি এবং সাবলিঙ্গুয়াল ইমিউনোথেরাপি। একটায় ইনজেকশন নিতে হয় আর আরেকটায় জিভের তলায় এক ধরণের ট্যাবলেট রাখতে হয়। দু ক্ষেত্রেই যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। তবে আপনার ক্ষেত্রে কোনটি প্রযোজ্য হবে সেটা কিন্তু আপনার চিকিৎসকই বলতে পারবেন। এছাড়া সিলভার নাইট্রেট প্রয়োগ করে কেমিকাল কটারাইজেশন পদ্ধতিতেও এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। 


তবে সমস্যা যদি গভীর হয় এবং অনেকদিন ধরে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে জেনেসিস হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ই.এন.টি বিভাগে যোগাযোগ করুন। যোগাযোগের নম্বর - 8584883884 / 40224242 । আমাদের ই.এন.টি বিশেষজ্ঞরা এই ধরণের সমস্যার সহজ সমাধান দিয়ে থাকেন।

#allergicrhinitis #ENT #nasalproblem #respiratoryproblem #GenesisHospitalKolkata #prescriptiontheke

Tuesday, 7 August 2018

কানভারী


বর্ষার বিকেল। বৃদ্ধ অখিলেশ তার ছোট্ট ঘরে একটা তক্তপোশের ওপর বাবু হয়ে বসে আছেন। মুখে চোখে চিন্তার ছাপ। আদ্যিকালের সিলিং ফ্যানের ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না প্রায়। উল্টোদিকের চেয়ারে গম্ভীরমুখে বসে আছেন অখিলেশের উকিল। খানিক্ষন চুপ করে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উকিল ভদ্রলোকটি মুখ ফুটে বললেন, 'আপনি কিন্তু আরেকবার ভেবে দেখতে পারতেন.....মানে এই নিয়ে চারবার হল কিনা'। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বিরসবদনে অখিলেশ বললেন, 'না হে সুকান্ত, চারবার যখন করেছি তখন পাঁচবারে কোনো ক্ষতি নেই। এই সম্পত্তি আমি দান করে দেব, আমার আর কোনো মোহ নেই'। 

এখানে নেপথ্যের গল্পটা জানা দরকার সকলের, তাহলেই গোটা ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। অখিলেশ গত কয়েক বছর ধরে ভীষণ কানের সমস্যায় ভুগছিলেন। অবস্থা এমন পর্যায় গিয়ে দাঁড়ায় যে শেষটায় প্রায় বধির হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। চুপচাপ একজন ই.এন.টি বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তিনি হিয়ারিং এড ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে করে আরও কাল হয়। চোরাগোপ্তা নিজের ছেলেমেয়েদের যে কথোপকথন তিনি শুনতে পেয়েছিলেন তাতে বাধ্য হয়ে চারবার উইল চেঞ্জ করতে হয়েছিল তাঁকে। শেষটায় সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সম্পত্তি কোনো ছেলেমেয়েকে না দিয়ে সম্পূর্ণ দান করে দেবেন এক বৃদ্ধাশ্রমে। আর ঠিক সেই কারণেই আজ উকিলবাবুর আগমন। সুতরাং বধির হলেই যে সমস্যা হয় তা কিন্তু নয়, পুনরায় শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়ারও গ্যাঁড়াকল আছে কিছুটা। তবে গল্পের মজা থেকে সরে এসে বলব সর্বক্ষেত্রে কিন্তু সুস্থ জীবনই কাম্য। 

এই সূত্রে জানাই যে বধিরতার কিছু প্রকারভেদ আছে এবং প্রত্যেক ভেদের সমস্যা কিন্তু ভিন্ন। সুতরাং কোন ধরণের বধিরতা সেটা প্রথমেই জানা থাকলে তার চিকিৎসায় সুবিধে হয়। এক এক করে বলি। 

১. অডিটরি প্রসেসিং ডিসর্ডার (APD) - দেখা গেছে প্রায় ৫% স্কুল পড়ুয়া শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত। এই সমস্যায় কান আর মস্তিস্কের কোনো সমন্বয় ঘটে না। যার ফলে শুনতে বা বুঝতে যথেষ্ট সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে শিশুটি, শব্দ বা ধ্বনির তারতম্য ধরতে পারে না। আরও অসুবিধে হয় যখন শিশুটি কোনো শব্দবহুল পরিবেশে থাকে যেমন  - খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান বা গানের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। তবে চিন্তার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা বা থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা  অনেকটাই প্রবল। প্রয়োজন শুধু আগাম রোগ নির্ণয়, তা না হলে পরবর্তীকালে ভাষা ও কথা বলায় বিস্তর সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ডেফ মিউটিজমের কারণেও APD হতে পারে। জন্মগত ভাবে যদি কেউ বধির হয় তাহলে সে জন্মগত ভাবে মূকও হয়। তার কারণ কথা বলার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ঠিক থাকলেও শব্দ না শুনতে পাওয়ার ফলে সে কোনো শব্দই তৈরী করতে পারে না।

২. কন্ডাক্টিভ হিয়ারিং লস - যখন কানের বহির্ভাগ এবং মধ্যভাগে শব্দ পৌঁছতে পারে না তখনই  কন্ডাক্টিভ হিয়ারিং লস হয়। এক্ষেত্রে মৃদু শব্দ একেবারেই শোনা যায় না এবং জোরে শব্দ হলে জড়িয়ে যায়। বেশ কিছু কারণে এই সমস্যা হয়। যেমন - 


# ঠান্ডা বা এলার্জি থেকে কানের মধ্যে তরল জমতে পারে
# কানের সংক্রমণ
# ইউস্টাশিয়ান টিউবের সঠিক ভাবে কাজ করতে না পারা
# কানের পর্দায় ফুঁটো
# টিউমার, যা কানের বহির্ভাগ এবং মধ্যভাগ আটকে দিতে পারে # কানের মধ্যে প্রচুর ময়লা জমা হওয়া  
# কানের মধ্যে কোনো কিছু আটকে থাকা
# কানের অভ্যন্তরীণ গঠনে সমস্যা

তবে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এমনটা হলে কিছু ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

৩. সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস - কানের অভ্যন্তরীণ অংশ বা ককলিয়ায় চুলের মতো সরু সরু কিছু কোষ থাকে যা সময়ের সাথে সাথে কমে যায়। ফলস্বরূপ, যত বয়স বাড়ে তত শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। চিকিৎশাস্ত্রে একে বলা হয় প্রেসবাইকিউসিস (Presbycusis) তবে শুধুমাত্র এটাই কারণ নয়। অতিরিক্ত শব্দের কারণেও এই কোষগুলি নষ্ট হতে পারে। যেমন কাজের সূত্রে শব্দপ্রবণ পরিবেশে সময় কাটানো বা অনেক্ষন ধরে ভীষণ জোরে গান শোনা ইত্যাদি। এছাড়া মাম্পস, মেনিঞ্জাইটিস, স্কলেরোসিসের মতো রোগ হলেও সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস হতে পারে। জেনে রাখুন কিছু ওষুধ বা এন্টিবায়োটিকের কারণেও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া মাথায় বা কানে সাংঘাতিক চোট লাগলেও শ্রবণক্ষমতা লোপ পেতে পারে। এর একমাত্র চিকিৎসা হল সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং এড অথবা অস্ত্রপচার যার দরুন এই সমস্যা আংশিকভাবে ঠিক হওয়া সম্ভব। এছাড়া একুয়াস্টিক নিউরোমা নামে একটি রোগের কারণেও এই হিয়ারিং লস হতে পারে। মস্তিষ্কের এক বিশেষ স্নায়ুতে টিউমার হওয়ার ফলে কানের এই সমস্যাটি হয়।

৪. মিক্সড হিয়ারিং লস - মিক্সড হিয়ারিং লস হল কন্ডাক্টিভ এবং সেন্সরিনিউরাল সমস্যার সমষ্টি বিশেষ। এর অর্থ হল কানের বহির্ভাগ, মধ্যভাগ এবং অভ্যন্তরীণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি হ্রাসের পরিমাণ অল্প থেকে বেশিও হতে পারে। এর কারণগুলি হল কন্ডাক্টিভ এবং  সেন্সরিনিউরাল কারণের মতোই। এর চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার গভীরতার ওপর। অর্থাৎ ওষুধ বা হিয়ারিং এড ব্যবহার করে কাজ হতে পারে আবার প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার বা বোন কন্ডাকশন ইম্প্ল্যান্টও করতে হতে পারে।

এর চিকিৎসা আছে নাকি চিরকাল কালা হয়েই থাকতে হবে ?
অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বধির হয়ে থাকার দিন শেষ। বিভিন্ন পদ্ধতি আছে যার প্রচেষ্টায় আবার আপনার হৃতগৌরব ফিরে আসতে পারে। সেই সমস্ত পদ্ধতি নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

# কান পরিষ্কার - একজন ই.এন.টি চিকিৎসক অত্যন্ত সাবধানে এই কাজটি করে থাকেন। তেল ব্যবহার করে এবং ইরিগেটর যন্ত্রের সাহায্যে কানের সমস্ত ময়লা ধুয়ে বা টেনে বের করে আনা হয়।

# অস্ত্রোপচার - কানে যদি সাংঘাতিক আঘাত লাগে বা কোনোরকম সংক্রমণ হয় তাহলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

# হিয়ারিং এড - কানের অভ্যন্তরীণ ভাগের সমস্যার কারণে যদি শ্রবণক্ষমতা লোপ পায় তাহলে    
সেক্ষেত্রে হিয়ারিং এডের কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। তবে অবশ্যই একজন ই.এন.টি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা উচিত।
# ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট - যদি আপনার শ্রবণশক্তি একেবারেই লুপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট আপনার জন্য দারুন একটি বিকল্প হতে পারে কারণ এটি হিয়ারিং এডের থেকেও উন্নত। ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট হল একটি ইলেক্ট্রনিক চিকিৎসা যন্ত্র যা একটি ক্ষতিগ্রস্ত কানের অভ্যন্তরীণ অংশের কাজ করে। এই ইমপ্ল্যান্টটি মস্তিষ্কে শব্দের সিগন্যাল পাঠাতে সাহায্য করে। একটি ছোট্ট সার্জারির মাধ্যমে এটি বসিয়ে দেওয়া হয় কানের ভিতরের দিকে। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংক ক্লিক করুন -
https://docs.wixstatic.com/ugd/c72522_2135963da147417890acabb3a63dc6df.pdf


সুতরাং, এবার কিন্তু আপনাকে আর চোখ মুখ কুঁচকে, কানের পাশে হাত রেখে, উল্টোদিকের মানুষের মুখের ওপর ঝুলে পড়তে হবে না। বা হাসিহাসি মুখে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে হবে না তিনি  সিঙ্গাপুর বলছেন নাকি শ্রীরামপুর বোঝাচ্ছেন। কানের সমস্যা যেমনই হোক না কেন, তার যে একটা বাস্তবিক চিকিৎসা আছে তা কিন্তু ওপরের লেখা থেকেই পরিষ্কার। এখন আপনি আপনার অনুমান ক্ষমতার ওপর ভরসা করবেন নাকি একবার কানের চিকিৎসা করিয়ে নেবেন সে সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার। শুধু এটুকু বলতে পারি জেনেসিস হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ই.এন.টি বিভাগ এই বিষয়ে যেকোনো জটিল সমস্যার সমাধানে সক্ষম। যোগাযোগের নম্বর - ২৪৪২ ৪২৪২ / ৪০২২ ৪২৪২। 

সবশেষে একটা আশ্চর্য তথ্য দিই। শিশুরা কিন্তু প্রথম শুনতে শুরু করে গর্ভে থাকাকালীন ২৩ থেকে ২৭ সপ্তাহের মধ্যে। শুধু তাই নয়, মায়ের গলার স্বর এবং অন্যান্য শব্দও আলাদা করে তারা চিনতে  পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুকে বিশেষ কোনো সঙ্গীত বা শব্দ যদি নিয়মিত শোনাতে পারেন তাহলে জন্মের পর তাকে সামলানো সহজ হবে। 


#deafness #hearingloss #ENT #medicalarticle #bengalihealtharticle #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata

Friday, 29 June 2018

কেস জণ্ডিস !

জণ্ডিস হলেই হলুদ খেতে বারণ করা হয়। তার কারণ হলুদের হলুদ বর্ণ জণ্ডিস বাড়িয়ে দিতে পারে এমন একটা চালু ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। এর সাথে যখন সেদ্ধ শাকসবজি এবং তেল,নুন ব্যতীত পথ্য চলতে থাকে তখন রোগীর সর্বপ্রকারে কেস জণ্ডিস হবার উপক্রম হয়। সদ্যজাতকের ক্ষেত্রে তা আরও মারাত্মক। জন্ডিস হলেই তার স্তন্যপান বন্ধ করে দিতে উদ্যত হন বাড়ির লোকজন। তাঁদের ধারণা মাতৃদুগ্ধের বদলে জল খাওয়ালে বোধহয় শিশুটি তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠবে। জেনেসিস হাসপাতালের কর্ণধার ডাঃ পূর্ণেন্দু রায় বলছেন, এই সমস্ত চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধে নেই কিন্তু কার্যকরী করতে যাবেন না তার কারণ এর ফল মারাত্মক হতে পারে।   
প্রথমেই যেটা ভালো করে জেনে রাখা দরকার তা হল জণ্ডিস কোনো রোগ নয়। অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলেই জণ্ডিস দেখা দেয়। প্রতি ১২০ দিন অন্তর পুরোনো লোহিত রক্ত কণিকা (RED BLOOD CELLS) নষ্ট হয়ে আবার নতুন লোহিত রক্ত কণিকার জন্ম হয়। এর ফলে বিলিরুবিন তৈরী হয় যা শরীরের অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের সাথে বেরিয়ে যায়। কোনো সমস্যার ফলে এই বিলিরুবিন শরীর থেকে বেরোতে না পারলেই তা জমা হতে থাকে যার ফলস্বরূপ জণ্ডিস হয়। বলাই বাহুল্য জণ্ডিস হলে ত্মক ও চোখের বর্ণ হলুদ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগ অনুযায়ী এর উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। খুব সাধারণ উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হল। 

উপসর্গ 
# প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ 
# ত্মকের চুলকানি 
# বমি ভাব বা বমি হওয়া 
# ডায়ারিয়া 
# জ্বর 
# শারীরিক দুর্বলতা 
# ওজন হ্রাস পাওয়া 
# খিদে না হওয়া 
# পেটে ব্যাথা 
# পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি 

কোন কোন রোগে জণ্ডিস হয় সেটা আগের থেকেই জেনে রাখা দরকার। সেইমত চিকিৎসা করলে উপযুক্ত ফল পাওয়া যায়। জণ্ডিসের কারণ অনুযায়ী সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়। মেডিক্যাল জণ্ডিস এবং সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস। এই দুই কারণের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্টতা আছে যা বিশদে আলোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। 

মেডিক্যাল জণ্ডিস যে যে কারণে হয় তা হল - 
# হেপাটাইটিস (A,B,C,D,E)
# ম্যালেরিয়া  
# ডেঙ্গু 
# সিক্ল সেল ডিজিজ (Sickle cell disease)
# স্ফেরোসাইটোসিস 
# সিরোসিস 
# অতিরিক্ত মদ্যপান 
# ড্রাগ সেবন 
# গিলবার্টস সিনড্রোম (Gilbert's syndrome) ইত্যাদি 
সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস যে যে কারণে হয় তা হল -
# পিত্তথলিতে পাথর 
# ক্যান্সার (অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, পিত্তথলির ক্যান্সার, বাইল ডাক্টের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার)
# প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস 
# কোল্যাঞ্জাইটিস 
# বাইল ডাক্টে কোনো বাধা বা সমস্যা ইত্যাদি 

এর চিকিৎসা কি ?
মেডিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। যেমন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, লিভার ফাঙ্কশন টেস্ট অথবা ইউরিন্যালিসিস। এরপর সঠিক রোগ নির্ণয় করে রোগ অনুযায়ী ওষুধ বা এন্টিবায়োটিক খেলে জণ্ডিস আপনিই সেরে যাবে। এছাড়া প্রচুর পরিমানে জল খেতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং মদ্যপান থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হবে। তবে সার্জিক্যাল বা অবস্ট্রাক্টিভ জণ্ডিস হলে পিত্তথলি বা অগ্ন্যাশয়ের সার্জারি করিয়ে নিতে হবে এবং বাইল ডাক্টের সমস্যাতে এন্ডোস্কোপি করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। শিশুদের ক্ষেত্রে ফোটোথেরাপি একটি অত্যন্ত স্বীকৃত মাধ্যম।  

সুতরাং জণ্ডিস নিয়ে কোনোরকম টোটকার বশবর্তী হবেন না। শিশুদের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধই শ্রেষ্ঠ। জণ্ডিসের সময় স্তন্যপানে বঞ্চিত করবেন না, শিশুর ক্ষতি হতে পারে। বাকিরা পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। শুধুমাত্রই নিরামিষ খাবারের ওপর নির্ভর করতে হবে এমনটা নয় বরং স্বল্প পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে আপনার ডায়েট যেন সুষম হয় এবং তাতে যেন সমস্ত পুষ্টিগুণ থাকে। বাকি বিশ্রামে থাকুন আর অতিরিক্ত চিন্তা করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। 

#jaundice #hepatitis #liverproblems #gallstone #pancreatitis #endoscopy #medicaljaundice #obstructivejaundice 

Monday, 21 May 2018

ভুলভুলাইয়া


কেশব উদ্যানের চারপাশে গোল হয়ে পাক মারাটা রিটায়ার্ড নিবারণ চ্যাটার্জির বরাবরের অভ্যাস। আজ সকালেও তার অন্যথা হয় নি। তিনটে পাক মেরে আসার পর নিবারণ ক্লান্ত হয়ে একটা সিমেন্টের বেঞ্চির ওপর পা ঝুলিয়ে বসলেন। তারপর চোখ বুজে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। এরপর খানিক বাদে ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দিয়ে নাক চেপে প্রাণায়াম শুরু করলেন। আসে পাশে প্রচুর মানুষ যে যার মতো মর্নিং ওয়াক এবং শরীর চর্চায় ব্যস্ত। বিকেল আর সকালের এই সময়টা পার্কে বেশ ভিড় হয়। পাশ থেকে পাড়ার একজন সমবয়েসী এসে নিবারণের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, 'কি হে ! কাল সন্ধ্যার আড্ডায় দেখলাম না তো, শরীর টরির খারাপ ছিল নাকি ? নিবারণ চোখ খুলে আগন্তুকের দিকে তাকালেন এবং আশ্চর্যভাবে কিছুতেই তাঁর নামটা মনে করে উঠতে পারলেন না। শুধু বুঝতে পারলেন এই আপাত অপিরিচিতের সাথে তাঁর বিলক্ষণ আলাপ আছে এবং কাল সন্ধ্যার আড্ডায় এই ভদ্রলোক গিয়েছিলেন।

নিবারণ কোনোরকমে একটা দেঁতো হাসি হেসে বললেন, 'হ্যাঁ মানে ওই আর কি, শরীরটা ঠিক........' । ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে আশ্বাসের ভঙ্গিতে বললেন, 'আচ্ছা আচ্ছা বেশ, আজকে এস কিন্তু ঠিক' । নিবারণ আমতা আমতা করে ঘাড় নাড়লেন কিন্তু লজ্জার চোটে কিছুতেই ওনার নামটা জিজ্ঞেস করে উঠতে পারলেন না। অপিরিচিত চলে গেলেন। এইবার নিবারণ ভারী মুস্কিলে পড়লেন। এই ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ কদিন ধরেই হচ্ছে তাঁর সাথে। ইদানিং যেন একটু বেড়েছে। আজ সামান্য একটা নাম মনে না পড়ায় ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠলেন বেশ। শেষটায় বিরক্ত হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেবেন বলে উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু চমকের আরও বাকি ছিল। বাড়ির রাস্তাটা ঠিক কোন দিকে সেটা কিছুতেই ঠাহর করে উঠতে পারলেন না। এদিক ওদিক খুঁজে শেষটায় পাড়ার একটি ছেলেকে  চিনতে পেরে কোনোমতে তার সাথে বাড়ি অবধি এসে পৌঁছলেন। বিকেলের দিকে ডাক্তার এসে সমস্ত কিছু দেখে বললেন, 'আপনার খুব সম্ভব আলঝাইমার্স হয়েছে'। একথায় প্রায় হাঁ হয়ে গেলেন নিবারণ। এই রোগের সম্বন্ধে ডাক্তার আরও যা যা বললেন তা নিচে দেওয়া হল।

আলঝাইমার্স ডিজিজ একটি স্নায়বিক রোগ। এই রোগে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয় এবং তার ফলে স্মৃতি ও মস্তিষ্কের অন্যান্য কার্যকলাপের অবনতি ঘটে। এই রোগের প্রকোপ প্রাথমিক ভাবে সামান্য হলেও পরবর্তীকালে জটিল আকার ধারণ করে। এর ফলে মানুষ তার কাছের ব্যক্তিদের ভুলে যেতে পারে এবং সাংঘাতিক ভাবে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন আসতে পারে।

ডিমেনশিয়া (একটি মস্তিষ্কের রোগ) রোগের অন্যতম কারণ হল আলঝাইমার্স। ভারতবর্ষে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়া দ্বারা আক্রান্ত, যার মধ্যে ১৬ লক্ষ মানুষের আলঝাইমার্স রয়েছে। ভয়াবহ ভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় তিনগুন। বিশেষত ৬৫ বা তার বেশি বয়েসের মানুষদেরই এই রোগ হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের কমেও এই রোগ হতে পারে। একে বলে আর্লি - অনসেট - আলঝাইমার্স। 

এই রোগের কারণ কি ?
যদিও সঠিকভাবে এর কারণ বলা মুশকিল তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন জিনগত কারণ, অর্থাৎ পরিবারের যদি কোনো সদস্যের আলঝাইমার্স থাকে তবে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া লাইফস্টাইল এবং পরিবেশগত বিষয় যা  সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্ককে নানা ভাবে প্রভাবিত করে তার ফলেও আলঝাইমার্স হতে পারে।  তবে এর ফলে মস্তিষ্কের যে প্রভূত ক্ষতি হয় তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এক্ষেত্রে দুরকমের জটিলতা দেখা দেয়। 

# প্লাক - মস্তিষ্কের মধ্যে বিটা এমিলয়েড নামে একটি বিষাক্ত প্রোটিনের সমষ্টি তৈরী হয় যাকে প্লাক বলা হয়। এই প্রোটিন মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে এবং কোষেদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দেয়।
# ট্যাঙ্গল - মস্তিষ্কে, টাঊ নামক আরেক রকম প্রোটিন থাকে যার মাধ্যমে কোষের মধ্যে পুষ্টি সঞ্চার হয়। এই প্রোটিন যখন কোষের মধ্যে অস্বাভাবিক ভাবে জড়িয়ে যায় তখন সেই কোষের মৃত্যু ঘটে।

উপসর্গ কি কি ?
আলঝাইমার্সের ফলে মস্তিষ্কে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তা হল -

# স্মৃতিলোপ - স্বাভাবিক নিয়মে কিছু কিছু জিনিস ভুলে যাওয়াটা সমস্যার নয় তবে এক্ষেত্রে বাড়ির সদস্যদের নাম ভুলে যাওয়া, জরুরি জিনিস কোথায় থাকে তা মনে করতে না পারা, বারে বারে একই কথা বলা বা প্রশ্ন করা, ইত্যাদি আলঝাইমার্সের অন্যতম উপসর্গ।

# চিন্তাশক্তি লোপ পাওয়া - এক্ষেত্রে সংখ্যা বিষয়ক কাজে যথেষ্ট সমস্যা হয়। সঠিক সময় বাড়ির বিভিন্ন বিল জমা দেওয়া, হিসেব ঠিক রাখা, চেকবই, পাসবই সামলে রাখা প্রভৃতি কাজে ভুল হয় প্রচুর।

# সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা - নিয়মমাফিক কাজে জটিলতা তৈরী হয়। কোন কাজটা আগে বা পরে করা উচিত সেই নিয়ে ভীষণ সমস্যা দেখা দেয়।

# সাধারণ কাজে ভ্রান্তি - যেমন প্রতিদিন স্নান করা বা খাবার খাওয়ার কথাও ভুলে যেতে পারে আলঝাইমার্স রুগী। এছাড়া বাড়ির অন্যান্য কাজ করাতেও বেশ ভুল হতে পারে।

# ব্যক্তিত্বে ও ব্যবহারে পরিবর্তন - অবসাদ, ঔদাসীন্য, অবিশ্বাস, বিরক্তিভাব, অনর্থক ঘুরে বেড়ানো, ঘুমের সমস্যা, ইত্যাদি নানান রকমের পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া নিজস্ব কিছু দক্ষতাও হারিয়ে যেতে পারে এই রোগে।

মৌলিক ভাবে এই রোগের তিনটি ধাপ আছে। যথা - ১. উপসর্গ দেখা দেওয়ার পূর্বে  ২. সামান্য উপসর্গ দেখা দেওয়া এবং ৩.ডিমেনশিয়া। অতএব এখন যে প্রশ্নটি উঠে আসতে পারে তা হল এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবার উপায় কি ?


চিকিৎসা কি ?
একটা মজার তথ্য দিই। প্রচলিত জনশ্রুতি আছে যে সিগারেট খেলে বা নারকোল তেলের ব্যবহারে নাকি আলঝেইমার্স সেরে যায়। অবাক হবেন না কারণ এই ধরণের কোনোরকম প্রমান কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রে নেই। আলঝাইমার্স হলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবার কোনো উপায় যে নেই এটা প্রথমেই পরিষ্কার করে আমাদের জেনে রাখা দরকার। তার কারণ মস্তিষ্কের যে কোষগুলির মৃত্যু হয়েছে তাদের পুনর্জন্মের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিছু ওষুধ আছে যার ব্যবহারে বাকি জীবনটা এই রোগ নিয়ে বেঁচে থাকাটা একটু সহজ হয়। তবে এই ওষুধে আলঝাইমার্স সারে না, উপসর্গ কিছুটা কম হতে পারে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি ডেপ্রিনাইল নাম একটি ওষুধ আছে যা মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে। যার ফলে দৈনিক বা ব্যবহারিক কাজে একটু উন্নতি লাভ হয়। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাঞ্ছনীয়। এছাড়া শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক ভাবে যদি সচল থাকা যায় বা মূলত আনন্দে থাকা যায় তাহলে পরবর্তী জীবনটা অনেক শান্তিপূর্ণ হয় এ বলাই বাহুল্য।

পুরোটা শুনে নিবারণ চ্যাটার্জি কতকটা বিমর্ষ হলেন বটে তবে ডাক্তারের উপদেশ মেনে এরপর থেকে সাবধানে চলা ফেরা করার মনস্থির করলেন। তাঁর বিভিন্ন আড্ডাস্থলে জানিয়ে রাখলেন এই রোগের কথা। এবং তেমন বিপদ বুঝলে বাড়ি ফেরা বা অন্যান্য জরুরি কাজকর্ম করারও একটা বন্দোবস্ত করলেন। সুতরাং নিবারণের মতো আপনিও যদি এই রোগের শিকার হন তাহলে প্রথমেই একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত অনুযায়ী সাবধান হন এবং সেইমতো কাজ করুন। বলা তো যায়না কি থেকে কি বিপদ হতে পারে ! 


#alzheimer'sdisease #oldagedisease #neurology #neurologicalproblem #neurologicaldisease #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata

Thursday, 17 May 2018

বহিছে ধারা

ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে সমরেশ গজগজ করতে থাকেন। পাঁচটার মধ্যে ফেরার কথা ঋকের।  সাড়ে পাঁচটা বাজে অথচ ধারে কাছে টিকি পাওয়া যাচ্ছে না ছেলের। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় চলে আসেন তিনি। গলির শেষ মাথাটা অবধি দেখা যায় এখান থেকে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ ছেলের দেখা নেই। আজ আইপিএলের খেলা আছে ইডেনে। প্রায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দুটো  টিকিট জোগাড় করেছেন সমরেশ। বাবা ছেলের ক্রিকেট দেখার শখ সাংঘাতিক। এখনই বেরোতে না পারলে ঠিকমতো গুছিয়ে বসা যাবে না। ভিড় তো আছেই তার ওপর জ্যাম। এসব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে ওঠেন নিরুপায় বাবা।

অকস্মাৎ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে ঋক। সমরেশ চেঁচিয়ে ওঠেন, 'কিরকম আক্কেল তোর ? কটা বাজে খেয়াল আছে ? এখনই বেরোতে না পারলে.......'। পুরোটা শেষ করতে দেয় না ঋক। হাত তুলে থামায় বাবাকে। নিচুস্বরে বলে, 'কোচিং থেকে বেরিয়ে দেখলাম পাশের পাড়ায় ব্লাড ক্যাম্প হচ্ছে। দিয়ে আসতেই যা একটু দেরি হল'। মুহূর্তে শান্ত হয়ে গেলেন সমরেশ। ঘুরে তাকালেন দেওয়ালে ঝোলানো একটা বাঁধানো ছবির দিকে। বছর দুয়েক আগের স্মৃতি এখনো দগদগে ঘায়ের মতো দুজনের বুকেই জীবন্ত। মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার ভয়াল কোপে স্নেহলতা আজ দুজনের থেকে বিচ্ছিন্না। শুধুমাত্র রক্তের অভাবে সেদিন ফেরানো যায়নি তাঁকে। ছবির কাঁচে ঋকের ছায়া পড়ায় সম্বিৎ ফেরে সমরেশের। কোমল কণ্ঠে বলেন, 'যা, মুখ হাত ধুয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। সময়মতো পৌঁছতে হবে তো'।

বাবার হাতটা আলতো করে ছুঁয়ে দেয় ঋক । কনুইয়ের ভাঁজে একটা গোলাকার ব্যান্ডেড চোখে পড়ে। তৎক্ষণাৎ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, 'কি ব্যাপার ! চোট লাগল কি করে তোমার' ? সমরেশ কোনোমতে কম্পিতস্বরে বলেন, 'ও কিছু না, অফিস যাওয়ার আগে আমিও একবার ওই ক্যাম্পে.......' । নিজেকে আর সামলাতে পারে না ঋক । এক লহমায় জড়িয়ে ধরে সমরেশকে। অন্তর্নিহিত গ্লানি জল হয়ে বেরিয়ে আসে দুই গাল বেয়ে। অস্ফুটে বলে, 'বাবা.......' 

এমন গল্প হয়ত খুঁজলে পরে অনেক পাওয়া যাবে। তার কারণ ভারতবর্ষে রক্তের জোগানে বরাবরের সমস্যা আছে। তবে স্বস্তির খবর এই যে রক্তদানের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হচ্ছেন এবং রক্তদাতার সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানে বোঝানো যেতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০০৬ - ০৭ সালে রক্তদাতার সংখ্যা ছিল ৫৪.৪ শতাংশ যা ২০১১ - ১২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৩.১ শতাংশে। প্রতি ইউনিট রক্তের হিসাবে ২০০৬ - ০৭ সালে ৪.৪ মিলিয়ন ইউনিট থেকে ২০১২ - ১৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯.৩ মিলিয়ন ইউনিটে। তবু চমকপ্রদভাবে, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রক, ভারত সরকারের একটি রিপোর্টে জানা গেছে যে ২০১৬ সালে ১২ মিলিয়ন ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী শুধুমাত্র ১০.৯ মিলিয়ন ইউনিট রক্তই পাওয়া গেছে। সুতরাং ঘাটতির পরিমাণটা যে এখনও বিপুল তা এই সহজ অঙ্কের মাধ্যমেই বোঝা যায়। প্রয়োজন আরও সচেতনতার এবং এর উপকারিতাগুলি জেনে রাখার।

রক্তদানের উপকারিতা :
# হিমোক্রোমাটোসিস (Hemochromatosis) প্রতিরোধে সাহায্য করে - শরীরে লৌহমাত্রা বেড়ে গেলে এই ধরণের সমস্যা হয়। রক্তদানের ফলে এই সমস্যা হ্রাস পায় অনেকটাই।
# ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। 
# হৃদযন্ত্র, লিভার এবং অগ্ন্যাশয় সুস্থ থাকে।  
# শরীরের ওজন কম রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা আছে রক্তদানের। বিশেষ করে যাঁরা স্থূল এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত তাঁদের জন্য বিশেষ উপকারী।
# রক্তদানের দরুন নতুন রক্তকোষের জন্ম হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

নূন্যতম বিধি :
রক্তদান একটি অত্যন্ত সুস্থ চিন্তা, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না যে চাইলেই কিন্তু রক্ত দেওয়া যায় না। রক্তদানের ক্ষেত্রে নূন্যতম কিছু বিধি মেনে চলা অতি আবশ্যক। স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রক, ভারত সরকারের অধীনে কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা বেঁধে দেওয়া হয়েছে যা একজন রক্তদাতার জেনে রাখা উচিত। যেমন -

# রক্তদাতাকে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হতে হবে
# রক্তদাতার বয়স হতে হবে  ১৮ - ৬৫ র মধ্যে
# ওজন নূন্যতম পক্ষে ৪৫ কিলোগ্রাম হতে হবে
# হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ন্যূনতম ১২.৫ গ্রাম হতে হবে
# পুরুষদের ক্ষেত্রে তিন মাসে একবার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে চারমাসে একবার রক্তদান করা যাবে
# এছাড়া চিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তদানের পূর্বে কিছু আবশ্যক পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে

ভারত সরকারের অধীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় - এর একটি নির্দেশিকা আছে যা রক্তদানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পড়ুন। 

রক্তদানের উপকারিতা যে যথেষ্ট তা আমরা জানলাম বটে তবে কতটা সচেতন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টা দেখব সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। এর কারণ হল আমাদের মধ্যে এখনো অনেকেই আছেন যাঁরা রক্তদান এড়িয়ে চলেন, বিভিন্ন রকমের অজুহাত দেন এবং সর্বোপরি রক্তদান সম্পর্কে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। যেমন - রক্তদান করলে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বা পরবর্তীকালে নানান রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে ইত্যাদি। তাঁদেরকে বলব সময় করে নাহয় একবার আপনার চিকিৎসককেই জিজ্ঞেস করে দেখুন। তাঁর কথা নিশ্চই বিশ্বাসযোগ্য হবে এই আশা রাখি।

                                                           www.genesishospital.co

Tags :blooddonation ; donateblood ; savelife ; PrescriptionTheke ; GenesisHospitalKolkata

Thursday, 19 April 2018

স্নায়ুর জালে

অরিজিৎ ও পারমিতা, উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি দম্পতি। দোতলার বাড়িতে সাজানো গোছানো সংসার। দিন কেটে যায় সচ্ছলতার ডানায় ভর করে। সুখ আছে, তবু যেন দুজনের মনে শান্তি নেই। একমাত্র সন্তান ধ্রবজ্যোতির বয়স সাড়ে তিন বছর। অন্য আর চার পাঁচটা সমবয়সীদের থেকে যেন বড্ড আলাদা। কোথায় এই সময়টা ধ্রুবজ্যোতি মেল্ ট্রেনের মতো ছুটবে, চড়াইপাখির মতো দুরন্ত পায় সারা বাড়ি তোলপাড় করবে অথচ কোনো এক অলৌকিক  জাদুবলে ধ্রুবজ্যোতি যেন ভীষণরকম শান্ত। তাতে অবশ্য কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু ছেলের যেন কোনো কিছুতেই কোনো স্পৃহা নেই। ডাকলে সাড়া দেয় না, খেলাধুলার প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, সারাক্ষন শুধু বারান্দার ধারে বসে সমানে কাগজ ছিঁড়তে থাকে। কোনো কথার উত্তর দেয় না ঠিকমতো, বন্ধুবান্ধবে আগ্রহ নেই তবে হঠাৎ করে কোনো কোনো বায়না ধরলে তা একনাগাড়ে বলতে থাকে। কোনোরকম বারণ বা শাসন গ্রাহ্য করে না। সাতপাঁচ ভেবে একজন নামকরা শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলেন অরিজিৎ ও পারমিতা। সমস্তটা দেখে তিনি বললেন ধ্রবজ্যোতি এস্পারগার্স সিন্ড্রোম অর্থাৎ অটিজমে আক্রান্ত। এখন থেকেই তার চিকিৎসার প্রয়োজন। অরিজিৎ ও পারমিতার মাথায় যেন বাজ পড়ল। এই গল্প বলার আগে আসুন জেনে নিই কি এই রোগ আর এর হাত থেকে নিস্তার পাবার উপায় কি। 


অটিজম কি ?
অটিজম সোসাইটি অফ আমেরিকার মতে এটি একটি জটিল স্নায়বিক রোগ যা মস্তিষ্কের অক্ষমতার কারণে হয়ে থাকে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সাধারণ কথাবার্তায় এবং ব্যবহারে। ইন্ডিয়ান স্কেল এসেসমেন্ট অফ অটিজম - এর মতে ভারতবর্ষে প্রায় ২০ লক্ষ শিশু এই রোগের শিকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতি ৬৮ জন শিশুতে ১ জন শিশুর এই রোগ হয়। সর্বোপরি একটা আশ্চর্য তথ্য দিই। সারা বিশ্ব জুড়ে ৭ কোটি মানুষ রয়েছেন যাঁদের অটিজম আছে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হল এঁদের মধ্যে ১ কোটি মানুষ হলেন ভারতীয়।

এই রোগের কারণ কি ? 
নিয়মিত গবেষণার ফলে কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়। যেমন -

# জিনগত বিরল সমস্যা, পরিবেশগত চাপ, গর্ভকালীন অবস্থায় পিতামাতার বয়স, গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো রোগ, জন্মের সময় শিশুর মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবাহ ইত্যাদি।
# এছাড়া মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্ষমতায় অস্বাভাবিকতার দরুণও অটিজম হতে পারে।

এই রোগ কি একই রকমের হয় ?
একদমই না। এই রোগের বিভিন্ন প্রকার আছে এবং প্রকারগত সমস্যাও একেবারেই আলাদা। সুতরাং শিশুটির কোন অটিজম হয়েছে সে ব্যাপারে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

# এস্পারগার্স সিন্ড্রোম - এই রোগে সাধারণত কোনো বস্তু বা বিষয়ের ওপর সাংঘাতিক আকর্ষণ থাকে। একই কাজ বারেবারে করার একটা প্রবণতা থাকে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক গড় বা গড়ের থেকে বেশি বুদ্ধিমান হয়। সেই কারণে একে হাই - ফাঙ্কশনিং অটিজমও বলা হয়।

# পারভেসিভ ডেভেলপ্মেন্টাল ডিসর্ডার -  সামাজিক মেলামেশা এবং কথা বলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যা হয়। এস্পারগার্স সিন্ড্রোমের তুলনায় আচরণগত সমস্যা কম।

# অটিস্টিক ডিসর্ডার - উপরোক্ত দুই প্রকারের তুলনায় এটি অত্যন্ত জটিল। এক্ষেত্রে সামাজিকতা ও কথাবলায় সমস্যা তো আছেই তাছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধকতাও হতে পারে।

কিভাবে বুঝবেন বা উপসর্গ কি ?
জেনেসিস হাসপাতালের শিশু বিভাগের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক বলছেন যে সামাজিক ভাবে এই রোগ নিয়ে একটা সমস্যা আছে। মানুষকে বুঝতে হবে যে এই রোগ যদি প্রাথমিক ভাবে নির্ণয় করা যায় এবং শিশুদের পর্যাপ্ত সাহায্য করা যায় তাহলে সেই শিশুটিও অন্যদের মতো বেড়ে উঠবে। সমাজে তারও অবদান থাকবে এবং পাশাপাশি অন্যের ওপরেও নির্ভরশীল হতে হবে না। এই রোগ নির্ণয়ের কিছু সহজ পন্থা আছে, যেমন -

# শিশুটির যদি খেলনার প্রতি কোনো আকর্ষণ না থাকে
# ডাকলে যদি সাড়া না দেয়
# যদি নিজের খেয়ালেই ব্যস্ত থাকে
# একই কথা বারবার বলতে থাকে
# কথাবলার সময় যদি সরাসরি চোখের দিকে না তাকায় অথবা
# অন্যদের সাথে মেলামেশায় সমস্যা হয় তাহলে
একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে যে বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের পাঁচ বছর বয়েসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একেবারে প্রথম দিকে অর্থাৎ দু আড়াই বছর বয়েসেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করাই উচিত। তাতে করে প্রাথমিক ভাবেই শিশুটির চিকিৎসা শুরু হবে এবং মনোবিজ্ঞানীদের সাহায্যে বয়সচিত কাজের সাথেও পরিচিত হতে পারবে। যার দরুণ সুফল পাওয়া যাবে তাড়াতাড়ি। জেনে রাখবেন, বয়েস বেড়ে গেলে বিভিন্ন কাজের সাথে খাপ খাওয়াতে অসুবিধে হবে।

এক্ষেত্রে কি করণীয় ?
# বাবা মার কার্যকরী ভূমিকা -  বাবা মাকে ভীষণভাবে সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং সমস্ত ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে।
# সুসম্পর্ক স্থাপন - সন্তানের সাথে বাবা মার অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ সম্পর্ক হতে হবে। সন্তানের পড়াশোনা এবং সঠিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে।
# বিশেষজ্ঞর মতামত - সর্বপ্রথম একজন শিশু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ ভীষণ প্রয়োজন। তাঁর মতামত অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলাই বাঞ্ছনীয়। 
# সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে যোগাযোগ - কিছু সংস্থা আছে যারা অত্যন্ত যত্নসহকারে এই শিশুদের পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ট্রেনিং, থেরাপি ও এক্টিভিটির মাধ্যমে শিশুটির সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধন করুন। এক্ষেত্রে বাবা মায়েদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। নিম্নলিখিত লিঙ্কগুলিতে যোগাযোগ করতে পারেন।
http://autismsupport.in/helpline-region/west-bengal/#s=1
http://www.pradipautism.org/#
http://shruti.co.in
http://motherandchildschool.com/index.html

কয়েক বছর ধরে, একটি অটিজম সেন্টারের যোগ্য সহায়তায় ও নিয়মিত ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে ধ্রুবজ্যোতি ধীরে ধীরে তার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠছে। অরিজিৎ ও পারমিতার মুখে এখন স্বস্তির ছাপ। তাঁদের একমাত্র সন্তান নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছে। সন্ধ্যের দিকে সে নিয়মিত বইখাতা খুলে বসে। কয়েকজন বন্ধুবান্ধব হওয়াতে ক্রিকেটের প্রতি তার একটা বিশেষ আগ্রহ জন্মেছে। ভারতবর্ষের বহু বাড়িতে এমন ধ্রুবজ্যোতিরা অনেকেই রয়েছে। এমন ভাবার কিন্তু কোনো কারণ নেই যে তারা সময়পোযোগী হয়ে উঠতে পারবে না। বরং সঠিক দিশা পেলে নিজ নিজ বিষয়ে তারা যথেষ্ট যোগ্যতা প্রমান করতে পারে যার নজির কিন্তু প্রচুর রয়েছে। প্রয়োজন একটু দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর, একটু সহনীয় মনোভাবের........ মনে রাখতে হবে তারাও এ পৃথিবীর সন্তান।

#Autism #Worldautismday #autisticchildren #neurology #neurologicaldisorder #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata

Wednesday, 4 April 2018

খতরনাক


নাসিকা গর্জন যেমন অতিরিক্ত হলে আমাদের বিরক্তির শেষ থাকে না তেমনি নাসিকা বর্ষণ হলেও কিন্তু চিন্তার অন্ত থাকে না। বিশেষ করে নাক দিয়ে যদি হঠাৎ রক্তপাত হয় তাহলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে নেওয়ার একটা চালু রেওয়াজ আছে আমাদের। ঠিক তারপরেই যেটা ঘটে তা হল এই রক্তপাতের সাথে কোন কোন রোগের সম্পর্ক আছে তা নিয়ে একটা জম্পেশ আলোচনা শুরু করে দেওয়া বা নিজে নিজেই নানারকম আকাশকুসুম ভাবতে বসে যাওয়া। এক্ষেত্রে যেটা করণীয় তা হল মাথা ঠাণ্ডা রাখা এবং নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে রক্তপাতকে আয়ত্তে আনা। তার আগে আসুন একটু জেনে নিই যে কি কি কারণে রক্তপাত হতে পারে এবং এই নিয়ে কোনো উদ্বেগের অবকাশ আছে কিনা। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাক থেকে রক্তপাতের ঘটনাকে এপিসট্যাক্সিস বলে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা উষ্ণ আবহাওয়ায় এপিসট্যাক্সিসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটা যেকোনো বয়েসেই হতে পারে তবে ২ থেকে ১০ বছরের শিশুদের মধ্যে এবং ৫০ থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মধ্যে বেশি হয়। এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা এবং দু ধরণের হয়ে থাকে। যথা -

# নাকের অগ্রভাগ থেকে রক্তপাত - নাকের অভ্যন্তরীণ কোনো শিরা বা উপশিরা থেকে এই রক্তপাত ঘটে থাকে এবং এই রক্তপাতকে খুব সহজেই আয়ত্তে আনা যায়।
# নাকের পশ্চাৎভাগ থেকে রক্তপাত - এই রক্তপাত খুব একটা বেশি দেখা যায় না তবে বয়স্ক মানুষদেরই সাধারণত হয় এটা। নাকের পশ্চাৎভাগে অবস্থিত ধমনী থেকে এই রক্তপাত হয়। এক্ষেত্রে রক্তপাতের মাত্রা অনেক বেশি এবং হলে অবশ্যই একজন ই.এন.টি বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।

এমনটা হওয়ার কারণ কি ?
নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে প্রচুর ক্ষুদ্র শিরা আছে যা ছোট্ট আঘাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার ফলে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট। তবে অত্যন্ত সাধারণ কারণগুলি হল -
#  শুকনো বাতাস - যখন নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণ শুকিয়ে যায় তখনই রক্তপাত বা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে বেশি। অতি গ্রীষ্মের সময় বা অতিরিক্ত শীতল জায়গায় এই সমস্যাটা হয়। 
# নাক খোঁটা - এই অভ্যাস যদি আপনার থাকে তাহলে বলব অবিলম্বে সংবরণ করুন নিজেকে।  

এছাড়াও আর যে যে কারণে রক্তপাত হয় তা হল     
# সাইনাসের ইনফেকশন 
# এলার্জি 
# সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা নাক ফুলে গেলে 
# নাকে কিছু আটকে থাকা 
# বক্র নাকের হাড়  
# হিমোফিলিয়া - রক্ত জমাট না বাঁধার ব্যাধি 
# এসপিরিনের ব্যবহার 
# ওয়ার্ফরিন ও হেপারিনের ব্যবহার 
# কোকেনের ব্যবহার 
# ন্যাসাল স্প্রের অতি ব্যবহার 
# ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে র অভাব
# উচ্চ রক্তচাপ 
# বার্নার্ড সোলার ডিজিজ - প্লেটলেটের সমস্যা 
# এনিমিয়া 
# ডেঙ্গু জ্বর  

রক্তপাত বন্ধ করার কি উপায় আছে ?
রক্তপাত বন্ধ করার কিছু সহজ সরল উপায় আছে। সবার আগে যেটা করতে হবে তা হল - 
# শান্ত থাকুন, অযথা ভয় পাবেন না 
# সোজা হয়ে বসুন এবং মাথাটা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখুন  
# মাথা পিছনে হেলাবেন না, এতে রক্ত আপনার গলা দিয়ে নেমে পেটে চলে যেতে পারে 
# আঙ্গুল দিয়ে ১০ মিনিট নাক চেপে রাখুন, একটু কষ্ট হলেও করুন 
# মুখে কোনো রক্ত থাকলে ফেলে দিন, গিলে নিলে বমি হয়ে যেতে পারে
# এলার্জি হলে আস্তে হাঁচুন বা নাক ঝাড়ুন, বেশি জোর দেবেন না  

সাধারণ রক্তপাতে এগুলো করলে অনেকটাই কাজ দেবে। তবে এরপরেও যদি রক্তপাত হতে থাকে তাহলে বেশ কয়েকটা উপায় আছে যার মাধ্যমে রক্তপাত আয়ত্তে আসে অনেকটাই। যেমন -

# পোষ্টেরিয়ার নেসাল প্যাক - প্রথমে একটা সরু ক্যাথিটার নাকের মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে মুখের ভিতর থেকে বের করে আনা হয়। ক্যাথিটারের শেষ ভাগে একটা প্যাক বেঁধে দেওয়া হয়। এই প্যাকের মধ্যে থাকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ। এরপর নাকের ভিতর থেকে ক্যাথিটার বের করে আনলে ওই প্যাকটি বসে যায় নাকের পশ্চাৎভাগে অর্থাৎ ঠিক যেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছে। প্যাকের শেষপ্রান্তে একটা সরু সুতো বাঁধা থাকে যা মুখের ভিতর থেকে বের করে এনে একটা টেপ দিয়ে গালে আটকে রাখা হয়। ৪৮ ঘন্টা পর রক্তপাত আয়ত্তে এলে এই প্যাক খুলে ফেলা হয়। এছাড়া ফোলি ক্যাথিটার ব্যবহার করেও রক্ত বন্ধ করা হয়।

# কটারি - এই পদ্ধতিতে একটা সিলভার নাইট্রেট স্টিক দিয়ে নাকের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে বুলিয়ে দেওয়া হয়। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একটা এসিড তৈরী হয় এবং ওই আস্তরণের কিছু কিছু অংশ পুড়ে যায়, যার ফলে রক্তপাত কমে। এছাড়া রক্তপাতের স্থান চিহ্নিত করে বাইপোলার কটারিজেশন পদ্ধতিতে ইলেক্ট্রিক কারেন্টের মাধ্যমে নাকের অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সুফল পাওয়া যায়।

# নেসাল এন্ডোস্কোপি - একটা ফাইবার অপটিক সরু যন্ত্র, লাইট আর একটা ছোট্ট ক্যামেরার মাধ্যমে এন্ডোস্কোপি করা হয়। এই যন্ত্রটি নাকের ভিতর ঢুকিয়ে নাকের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় রক্তপাতের সঠিক কারণটা কি। এরপর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত নিরাপদ এবং এতে বিরাট কিছু সমস্যা হয় না।

অতএব সাধারণভাবে যদি রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি এই সমস্যা আপনার চিরকালীন হয় আর আপনি যদি এখনো কোনো ইএনটি বিশেষজ্ঞকে না দেখিয়ে থাকেন তাহলে বলব আপনি অযথাই ঝুঁকি নিচ্ছেন। সামান্য নাক নিয়ে নাকানি চোবানি খাবার দরকার কি বলুন তো ? খাবার তো আরো অনেক জিনিস আছে, তাই না ?

#epistaxis #nosebleeding #nasalendoscopy #cautery #nasalpack #medicalarticle #bengalihealtharticle #AsPrescribed #GenesisHospitalKolkata



Thursday, 15 March 2018

পানি, পানি রে.....


ভারতী ঘোষ, ছাপ্পান্ন বছর বয়েস, তিন কামরার ফ্ল্যাটে পুজো আচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই বেশি ভালোবাসেন। স্বামী রিটায়ার করেছেন বছর কয়েক হল। পুত্র, পুত্রবধূ ও আদরের নাতিকে নিয়ে সচ্ছল পরিবার তাঁর। আজ বাড়িতে একটা বড় অনুষ্ঠান। তাঁর একমাত্র নাতির আজ অন্নপ্রাশন। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি ভর্তি লোকজন ও আত্মীয়স্বজনের কোলাহলে চারিদিক মুখরিত। পুরোহিতমশাই অন্নপ্রাশনের পুজোয় বসেছেন এবং নাতির চারপাশে গোল হয়ে ঘিরে বসে আছেন বাকিরা। এমন আনন্দঘন পরিবেশে থেকে থেকেই বিভিন্ন কথায় হাসির রোল উঠছে। ভারতী দেবী প্রায় সমস্ত কথাতেই হোহো করে হেসে উঠছেন। এমন সময় আচম্কা তিনি এক ভীষণ হাসির কথায় জোর হাসতে গিয়ে একেবারে কেলেঙ্কারি করে ফেললেন। হাসতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে তাঁর প্রিয় ঢাকাই শাড়িটিতে কলকল করে জলে ভাসিয়ে ফেললেন। এমন বেমক্কা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সবাই যত না ভ্যাবাচ্যাকা খেল, ভারতী দেবী তার দ্বিগুন মরমে মরে গেলেন। একঘর ভর্তি লোকের সামনে এমন অপ্রত্যাশিত কারণে লজ্জায় মাথা হেঁটে হয়ে গেল তাঁর। অনতিকাল পরেই সমস্তটা ধুয়ে পরিষ্কার করা হল। নাতির অন্নপ্রাশন তাতে আটকালো না বটে তবে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে উঠে তিনি অন্য ঘরে চলে গেলেন। বিকেলের দিকে ডাক্তার সমস্তটা শুনে ও পরীক্ষা করে বললেন, ভারতী দেবীর ইনকন্টিনেন্স হয়েছে। আসুন জেনে নিই এই বেয়াড়া সমস্যা কি এবং কিভাবে তাকে আয়ত্বে আনা যায়।

ইনকন্টিনেন্স কি ?
ইনকন্টিনেন্স বা অনিয়ন্ত্রণ একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং বিব্রতকর সমস্যা। এটি হলে শুধুমাত্র অস্বস্তি নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। না চাইতে বা আপনা আপনিই যখন প্রস্রাব বা মলত্যাগ হয়ে যায় তখন তাকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা বলে। এর অর্থ হল, যে পেশীগুলি প্রস্রাব আটকে রাখতে সাহায্য করে সেই পেশীগুলি দুর্বল বা অক্ষম হয়ে পড়েছে। ভারতবর্ষে তিনহাজার মহিলাদের নিয়ে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রায় ২১.৮% মহিলাদেরই এই সমস্যা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদেরই এই সমস্যা হয় বেশি।

এর উপসর্গ কি ? 
ইনকন্টিনেন্সের প্রধান উপসর্গই হল অনিচ্ছাকৃত মূত্রত্যাগ। স্থান, কালের ওপর একেবারেই নির্ভরশীল নয় এই সমস্যা।

কত রকমের হয় ?
এই অনিয়ন্ত্রণ বেশ কয়েক রকমের হয়। যেমন -
# স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স - হাঁচি, কাশি বা হাসার সময় এবং ব্যায়াম বা কোনো ভারী জিনিস তোলার সময় মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে, ফলে অনিচ্ছাকৃত মূত্রত্যাগ হয়।
# আর্জ ইনকন্টিনেন্স - হঠাৎ করে তীব্র প্রস্রাব পেলে অনিচ্ছাকৃত মূত্রত্যাগ হয়। এক্ষেত্রে সারারাত ধরেও প্রস্রাব পায়। কোনোরকম সংক্রমণ বা ডায়াবেটিস হলে সাধারণত এই সমস্যাটি হয়।
# ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স - মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি না হলে ঘন ঘন প্রস্রাব পেতে থাকে।
# ফাংশনাল ইনকন্টিনেন্স - কোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকলে সময়মত টয়লেট যাবার আগেই প্রস্রাব হয়ে যায়।

এর কারণ কি ?
এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে। আপনার প্রতিদিনের অভ্যাস বা কোনো মেডিক্যাল বা শারীরিক সমস্যার কারণে মূলত ইনকন্টিনেন্স হয়। যেমন -
# স্থূলতা
# মদ্যপান
# অতিরিক্ত ক্যাফিন
# কার্বনেটেড পানীয়
# আর্টফিসিয়াল সুইটনার
# চকোলেট
# সাইট্রাস ফল
# হার্ট এবং ব্লাড প্রেসারের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ
# ভিটামিন সিএর অতিরিক্ত ডোজ
# এছাড়া ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সংক্রমণ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির জন্যেও হতে পারে

শুধু এটাই নয় বেশ কিছু স্বাভাবিক কারণেও ইনকন্টিনেন্স হয়। যেমন -
# গর্ভাবস্থা এবং সন্তানের জন্ম
# বয়সের সাথে সাথে মূত্রাশয়ের পরিবর্তন
# মেনোপজ
# হিস্টেরেক্টমি
# প্রস্টেটের বৃদ্ধি
# প্রস্টেট ক্যান্সার
# ইউরিনারি ট্র্যাক্টে কোনো বাধা বা
# স্নায়বিক রোগ

এর চিকিৎসা কি ?
এর চিকিৎসা বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করবে যেমন - অনিয়ন্ত্রণের ধরণ, রোগীর বয়স, স্বাস্থ্য এবং তার মানসিক অবস্থা। নিম্নলিখিত কিছু পদ্ধতি দেওয়া হল।

# ব্যায়াম - কেগল এক্সারসাইজ নামে কোমরের একটি ব্যায়াম আছে যা নিয়মিত করলে সুফল পাওয়া     যায়।
# মূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ - মূত্রত্যাগের সময় একটু দেরি করে টয়লেট গেলে ভালো হয়। একটা নির্দিষ্ট           সময়ের পর পর টয়লেট গেলে উপকার পাবেন।
# ওষুধ - বেশ কিছু ওষুধ আছে যেমন - এন্টিকোলিনার্জিক, টপিক্যাল ইস্ট্রোজেন, ইমিপ্রামিন ইত্যাদি।     তবে বলাই বাহুল্য যে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
# সার্জারি - বাকি পন্থায় কাজ না হলে সার্জারি করিয়ে নেওয়াই ভালো।
   *স্লিঙ পদ্ধতি - মূত্রাশয়ের নিচে একটি জাল বা মেশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে হঠাৎ মূত্রত্যাগের             সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
   *কল্পসাস্পেনশন - মুত্রাশয়টিকে একটু তুলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স থেকে রেহাই        পাওয়া যায়।
   *আর্টিফিশিয়াল স্ফিঙ্কটার - একটি কৃত্তিম ভাল্ভ মূত্রনালীর ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর দরুন           প্রস্রাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
# এছাড়া ইউরিনারি ক্যাথিটার বা এবসরবেন্ট প্যাড দিয়েও সাময়িক নিরাময় হয়। তবে এতে                     সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। 
# কিছু মেডিক্যাল যন্ত্র রয়েছে যার দ্বারাও চিকিৎসা করা যায়। যেমন - ইউরিথ্রাল ইন্সার্ট এবং পেসারি।     রেডিওফ্রিকোয়েন্সি থেরাপি, বোটক্স, বাল্কিং এজেন্ট এবং সেক্র্যাল নার্ভ স্টিমুলেটর ব্যবহার করেও       প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

সুতরাং ভারতী দেবীর মতো আপনারও যদি ইনকন্টিনেন্স হয়ে থাকে এবং উপরোক্ত ঘটনার মতো কোনোরকম বিপদের মধ্যে না জড়াতে চান তাহলে আর কালক্ষেপ না করে জলদি একজন ইউরোলোজিস্ট বা কোনো হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে দেখিয়ে নিন। মনে রাখবেন আপনার সম্মান কিন্তু আপনারই হাতে।


#incontinence #bengalimedicalarticle #womenproblems #AsPrecribed #GenesisHospitalKolkata

Saturday, 24 February 2018

দুরন্ত এক্সপ্রেস #





গৃহবধূ রণিতা বসু ঘুম ভেঙে আঁতকে উঠলেন। বিছানায় বাবলু নেই তার পাশে। এঘর ওঘর খুঁজে কোত্থাও না পেয়ে শেষটায় বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলেন তার আদরের বাবলু বাগানের মাটি খুঁড়ে একাকার করেছে। রাগের বশে একছুটে তিনি দুম করে এক কিল বসিয়ে দিলেন বাবলুর পিঠে। চার বছরের বাবলু সে কিলের তোয়াক্কা না করে দৌড়ে গিয়ে একপাশে ঝোলানো দোলনার চেন ধরে অবলীলায় হনুমানের মতো দোল খেতে লাগলো। রণিতা সেখানেও তাকে তাড়া করায় সে কলা দেখিয়ে সেখান থেকেও পালালো। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে একটা স্টিলের থালা আর হাতা নিয়ে মনের সুখে বাজনা বাজাতে শুরু করল। বাগানের মধ্যেই রণিতা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সংসারের সমস্ত কাজ সামলালেও তার আদরের বাবলুকে তিনি কিছুতেই যেন সামলে উঠতে পারছেন না। বাবলু চরম দুরন্ত হয়েছে, আর চার পাঁচটা ছেলে মেয়েদের থাকে বড্ড আলাদা। কারোর কোনো কথা তো শোনেই না উল্টে সর্বক্ষণই যেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। শেষটায় একদিন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করলেন একজন মনোবিদের সাথে। সমস্তটা দেখে তিনি বললেন বাবলুর এডিএইচডি (ADHD) অর্থাৎ এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার আছে।এডিএইচডি কি এবং কেন হয় জানার আগে ছোট্ট করে দেখে নিন একটা পরিসংখ্যান। 

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভারতবর্ষে প্রাথমিক স্কুল শিশুদের মধ্যে এডিএইচডির প্রভাব রয়েছে  প্রায় ১১.৩২ % । আরও জানা গেছে যে তুলনামূলক ভাবে নারী শিশুদের (৩৩.৩%) থেকে পুরুষ শিশুদের (৬৬.৭%) ক্ষেত্রেই বেশি এডিএইচডি হয়। পড়লে আশ্চর্য হবেন, নিম্ন আর্থ - সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব প্রায় ১৬.৩৩ % এবং মধ্য আর্থ - সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব ৬.৮৪% ।  এডিএইচডি হবার কারণ কি ?

কারণ 
এডিএইচডি হবার সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যায় নি। তবে চিকিৎসক এবং গবেষকরা কয়েকটি নিম্নলিখিত কারণ বলছেন।  

# একটি এডিএইচডি শিশুর মস্তিস্ক সাধারণ শিশুর মস্তিষ্কের থেকে ৫% ছোট হয়। বিশেষ করে সেই সমস্ত জায়গাগুলি যেগুলি মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত। নিউরোট্রান্সমিটার নরএপিনেফ্রিন এবং ডোপামিনের অসামঞ্জস্য - এক্ষেত্রে একটি কারণ হতে পারে।

# মস্তিষ্কে রাসায়নিক, কাঠামোগত বা সংযোগের পার্থক্য হলে এডিএইচডি হয়। বেশীরভাগটাই জিনগত কারণে।

# এছাড়া গর্ভাবস্থায় ড্রাগের ব্যবহার বা মদ্যপান করলেও এডিএইচডি হতে পারে।

বৈশিষ্ট 
এডিএইচডির প্রধান বৈশিষ্টগুলি হল -
# অমনোযোগ - পড়াশোনার সময় অধ্যাবসায়ের অভাব ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত শিশুটি একেবারেই মনোযোগী হয় না এবং সুষ্ঠভাবে কোনো কাজই করে উঠতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে এর অর্থ কিন্তু শিশুটি অবাধ্য বা তার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, এমনটা কিন্তু নয়।

# অতিচাঞ্চল্য - মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতার ফলে শিশুটিকে একজায়গায় বসিয়ে রাখা সম্ভব হয় না কিছুতেই। এর ফলে অনেকসময়ই প্রতিকুল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। সাধারণত এরা একটানা কোনো একটা কাজ করতে থাকে বা অনর্গল কথা বলতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে  অতিরিক্ত অস্থিরতা দেখা যায়।

# অতিআবেগপ্রবণ - এরা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়। কোনো রকম জটিলতা বা ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই কোনো কাজ করে ফেলাটা এদের অন্যতম লক্ষণ। "উঠল বাই তো কটক যাই" - এই প্রবাদটা এদের ক্ষেত্রেই বোধহয় বেশি করে খাটে।

উপসর্গ 
অমনোযোগীর ক্ষেত্রে 

# স্কুলের কাজে বা অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল করা

# কোনো লেকচার বা আলোচনার সময় অমনোযোগী হওয়া, এছাড়া পড়ার সময় বারে বারে মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলা

# কারোর কথা না শোনা এবং স্কুল, বাড়ি বা অফিসের কাজ সময়মত শেষ করতে না পারা

# সংগঠিত ভাবে কাজ করায় সমস্যা, যেমন কোন কাজটা আগে বা পরে করা জরুরি, স্কুলে বা কাজের ক্ষেত্রে ডেডলাইন মিট করতে ব্যর্থ হওয়া।

# জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা

# জরুরী কাজে অনীহা, যেমন হোমওয়ার্ক না করতে চাওয়া।  প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অফিসের জরুরি কাজগুলি নিয়মিত এড়িয়ে যাওয়া

# মাঝেমাঝেই নিজের জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা

# উদ্ভট চিন্তাভাবনায় মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলা

# প্রতিদিনের কাজ প্রায়ই ভুলে যাওয়া

অতিচাঞ্চল্য বা অতিআবেগপ্রবণতার ক্ষেত্রে 

# সারাক্ষণ উসখুস করা

# হঠাৎ করে নিজের সিট্ থেকে উঠে পড়া

# অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে সহজেই জড়িয়ে পড়া

# সর্বক্ষণ ছটফট করা বা একটা অস্থির ভাব থাকা

# অনর্গল কথা বলে যাওয়া

# প্রশ্ন শেষ হবার আগেই উত্তর দেওয়া, কোনো একটা আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করে কথা বলে ওঠা

# অন্যের কাজে বাধা দেওয়া, ইত্যাদি

চিকিৎসা
এডিএইচডি একেবারে সেরে যাবে এমন কোনো ওষুধ বা পদ্ধতি এখনো অবধি বেরোয়নি। তবে বিশেষ চিকিৎসার দ্বারা এর উপসর্গগুলি কমানো যেতে পারে এবং কাজের ক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি লাভ করা যেতে পারে। যেমন - 

# ওষুধ - বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের সাহায্যে অতিচাঞ্চল্য এবং আবেগপ্রবণতা  কমানো সম্ভব। এর ফলে কাজ বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। এডিএইচডির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রচলিত ওষুধ হল 'স্টিমুল্যান্ট'। এই ওষুধটি মস্তিষ্কে নরএপিনেফ্রিন এবং ডোপামিন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

# সাইকোথেরাপি - বিহেভিওরাল থেরাপি দ্বারা একজন শিশুর ব্যবহার বা তার কাজের প্রতি মনোভাব বদলানো সম্ভব। এর মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা, অন্যের প্রতি ব্যবহার বা মনোভাবের যথেষ্ট উন্নতি হয়।এছাড়া ফ্যামিলি এন্ড ম্যারিটাল থেরাপির দ্বারা স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি সাধন করা যায়। 

# শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ - পেরেন্টিং স্কিল ট্রেনিং এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিকের মাধ্যমে বাবা মায়েদের শেখানো হয় কিভাবে একজন এডিএইচডি শিশুকে সামলানো উচিত। পরিস্থিতি বিচারে শিশুটিকে যেমন পুরস্কৃত করতে হবে আবার সময়বিশেষে কঠোরও হতে হবে। আবার জটিল পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে শিশুটিকে সামলানো উচিৎ তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া সাপোর্ট গ্রূপের সাহায্যে শিশুদের বাবা মায়েরা একে অন্যের সাথে সমস্যার কথা আলোচনা করতে পারেন এবং কি কি ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে তারও একটা সম্যক ধারণা তৈরী করতে পারেন। এতেও যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায়।

# মিরাক্যালস এবং টার্নিং পয়েন্ট নামে দুটি সংস্থা আছে যাঁরা কলকাতায় এডিএইচডি শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। যথাক্রমে ওয়েবসাইট হল - http://www.miraclespecialschool.com/contact-us.html . এবং http://www.turningpoint.org.in/disha.asp. এছাড়া ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স, পার্ক স্ট্রিট - এ এই শিশুদের চিকিৎসা করা হয়।

সুতরাং ধৈর্য ধরে রাখাটাই কিন্তু এক্ষেত্রে সবথেকে জরুরী। নিয়মিত শিশুটিকে সময় দিতে হবে এবং তার সমস্ত ব্যবহার বা কাজের দিকে মনোযোগ দিয়ে তার মনোভাব বদলানোর চেষ্টা করতে হবে। মাথা গরম করে দু চার ঘা দিয়ে ফেললে কিন্তু শিশু এবং তার বাবা মা, দুজনেরই লোকসান বই লাভ কিছু হবে না। বরং দিনে অন্তত কিছুটা সময় বাইরে নিয়ে গিয়ে খোলা মাঠে খেলতে দিন। ঘুমোনোর নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন এবং ঘুমোনোর বেশ কিছুটা আগে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনমত স্কুল থেকে আপনার সন্তানের রিপোর্ট চেক করুন। লক্ষ্য রাখুন কমপ্লেন খুব বেশি আসছে কিনা। সেক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বার করুন। বলাই বাহুল্য আপনার শিশুটিকে সঠিক ভাবে পথ দেখানো কিন্তু আপনারই দায়িত্ব, এটা ভুলে গেলে কিন্তু বড় রকমের গাড্ডায় পড়তে হবে। #ADHD #attentiondeficithyperactivitydisorder #medicalarticle #learningdisabilities #learningdisorder #GenesisHospitalKolkata #AsPrescribed