মানুষের অন্যতম সংবেদনশীল স্থান হল কোষ্ঠ। কোষ্ঠ নিয়ে মানুষ এতো সহজেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে যে রাতে ঘুমটাও ঠিকমতো হয় না। সকালে উঠে যথারীতি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তবে সে টয়লেট থেকে বেরোতে পারে। তাও পুরোপুরি নয়, 'আবার আসিব ফিরিয়া' বা 'স্মৃতিটুকু থাক' এর মতো করে সম্পূর্ণরূপে সে পিছুটান অবজ্ঞা করতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গে এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে অন্তত একজনের পেটের সমস্যা নেই। কোষ্ঠকাঠিন্য তাদের মধ্যে জনপ্রিয় তথা অন্যতম। কঠিন থেকে কঠিনতর বাধা মানুষ নির্দ্বিধায় অতিক্রম করতে পারে কিন্তু কোষ্ঠের কাঠিন্য উপেক্ষা করা বিন্দুমাত্র সম্ভব হয় না তার পক্ষে। তবে আপনার যদি অল্প বয়স হয় এবং আপনি যদি তুড়ি মেরে ভেবে থাকেন 'এসব তো বয়সকালীন রোগ, যখন হবে দেখা যাবে', তাহলে আপনাকে বলি আপনি সম্পূর্ণ ভুল ভাবছেন। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্কুলপড়ুয়াদের ৪০ শতাংশই ভুগছে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়। অতএব কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার তেমন কোনো নির্দিষ্ট বয়স বা লগ্ন নেই। সুতরাং কৈশোর বা যৌবন কোষ্ঠকাঠিন্যের থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত, এমন ভাবারও কিন্তু কোনো কারণ নেই। তারচেয়ে বরং আসুন এই রোগটার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে একটু বিশদে জেনে নিই। তাহলে অন্তত আগামী দিনে সাবধানে থাকতে পারবেন বা বর্তমানে এই রোগের হাত থেকে রেহাই পাবেন।
এই রোগের কারণ কি কি ?
# খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন - অতিরিক্ত তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার, প্রসেস্ড ফুড, মদ্যপান বা অত্যাধিক ক্যাফিনের কারণে হতে পারে। কম ফাইবার যুক্ত খাবারের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
# তরলের ঘাটতি - যে সমস্ত দিনে আপনি যথেষ্ট জল পান করেন না সেসব দিনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। মনে রাখবেন কৃত্রিম পানীয় কখনোই স্বাস্থকর নয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
# ব্যায়ামের অভাব - ব্যায়ামের অভাবে অনেকসময়ই মেটাবলিজম হ্রাস পায়। তার থেকে হজমের গোলমাল হলে পরবর্তীকালে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়।
# ওষুধ - কিছু বিশেষ ওষুধ বা পেইন কিলার্স-এর দরুন অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এমনকি নানারকম ভিটামিন বা আয়রন সাপ্লিমেন্টের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তেমনটা হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিন।
# অনিয়মিত মলত্যাগ
# টয়লেট যাবার সময় ব্যাথা অনুভূত হওয়া
# কঠিন মল হওয়া
# সম্পূর্ণ অপসারিত না হওয়া
# তলপেটে অস্বাচ্ছন্দ বোধ করা
# পেট ফাঁপা
# মলদ্বার থেকে রক্তপাত হওয়া
# মাঝেমাঝেই ডায়েরিয়া হওয়া
# বারে বারে টয়লেট যাওয়া ইত্যাদি।
এই রোগের চিকিৎসা কি ?
# একটি ছোট গ্লাসে ঈষদুষ্ণ জলে লেবুর রস এবং মধু দিন। লেবু হজমে সাহায্য করবে ও বর্জ্য পদার্থের অপসারণ ঘটাবে। মধু টক ভাব কাটিয়ে রেচকের ভূমিকা পালন করবে। অর্থাৎ মল নরম হবে।
# অলিভ অয়েল, ঘি বা ক্যাস্টর অয়েল এক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী। এগুলিও রেচকের কাজ করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। খালি পেটে খেলে উপকার বেশি হয়।
# ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন গম বা যবের রুটি, ওটস, ব্রকোলি, শাক ও বিভিন্ন ফল এক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকার দেয়।
# বেকিং সোডা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে। সোডিয়াম বাইকার্বোনেট স্টমাক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে নুন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও জল উৎপাদন করে যা পেট পরিষ্কারের জন্য আদর্শ।
# চিজ, পাঁউরুটি, আলু এবং পর্ক -এর থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন।
উপরোক্ত বিষয়গুলির ওপর জোর দিলে এই সমস্যার থেকে অনেকটাই রেহাই পাবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা করার দরকার নেই কারণ এই রাজ্যে বা দেশে আপনি একমাত্র মানুষ নন যিনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কষ্ট পাচ্ছেন। বরং সমস্ত জড়তা ঝেড়ে ফেলে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করুন ও প্রতিদিনের খাবারের দিকে নজর দিন। তেমন 'কঠিন' কিছু হলে চিকিৎসকরা তো আছেনই.........চিন্তা কি !
No comments:
Post a Comment