চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটা মজার কথা আমি প্রায়ই শুনতে পাই - "ডাক্তারবাবু আমার কিন্তু থাইরয়েড আছে, ওষুধ দেওয়ার আগে একটু দেখে নেবেন প্লিজ"। আমি তাঁদের বলি, "হ্যাঁ আমারও থাইরয়েড আছে, আর শুধু থাইরয়েড নয়, আমার হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, যকৃৎ প্রভৃতি, যা যা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকার কথা তার সবটাই আছে"। এই উত্তর শুনে অনেক সময়ই তাঁরা ঘাবড়ে যান। আসল কথাটা হল থাইরয়েড একটা গ্ল্যান্ড যা মানব শরীরে থাকারই কথা, বরং না থাকলেই আশ্চর্যের ব্যাপার। এক্ষেত্রে রুগীরা যদি একটু নির্দিষ্ট করে বলেন যে হাইপোথাইরয়েড বা হাইপারথাইরয়েড আছে তাহলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা হয় আর কি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুগীরা বুঝতে পারেন না যে থাইরয়েডটা ঠিক কি বা কোথায় থাকে আর থাকলেও তার কার্যকারিতা কতটা। আসুন এই প্রসঙ্গে একটু আলোকপাত করা যাক।
থাইরয়েড কারে কয় ?
থাইরয়েড একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্ল্যান্ড যা মানবদেহে গলায় থাকে। এটি ২ ইঞ্চি মতো লম্বা এবং আকারে কতকটা প্রজাপতির মতো দেখতে হয়। এর দুটো ভাগ আছে - লেফট লোব এবং রাইট লোব, যা শ্বাসনালীর দুদিকে থাকে। এই দুটি ভাগকে একসাথে জুড়ে রাখে ইস্থমাস নামক কিছু থাইরয়েড টিস্যু।
এই থাইরয়েড থেকে দুটি হরমোন নিঃসরণ হয় যা শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এই হরমোনগুলি শ্বাস প্রশ্বাস, হৃদকম্পন, ওজন, পেশীশক্তি, ঋতুচক্র, শরীরের তাপমাত্রা, কোলেস্টেরল মাত্রা, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই হরমোনগুলোর নাম হল - থাইরক্সিন (thyroxine) (T4) এবং ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (triiodothyronine) (T3)। এদের উচ্চারণে খানিক জিভের ব্যায়াম হলেও হৃদকম্পন বা পাচন প্রক্রিয়ায় এদের ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ এদের মাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে শরীরে নানান রকমের রোগ হতে পারে। চলুন এই রোগের সম্বন্ধে জেনে নিই।
রোগবালাই
১. হাইপোথাইরয়েডিজম (hypothyroidism) : থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে যখন যথেষ্ট পরিমানে হরমোন তৈরী হয় না তখন সেই অবস্থাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়। শুধু থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নয়, এটা পিটুইটারী গ্ল্যান্ড বা হাইপোথ্যালামাসের সমস্যার ফলেও হতে পারে। এর উপসর্গগুলি হল - ক্লান্তি, শুষ্ক ত্বক, কোষ্ঠকাঠিণ্য, শীত করা, শরীরে জল জমা হওয়া, পেশী এবং গাঁটে ব্যাথা, অবসাদ, মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হওয়া ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, 'হাশিমোতোজ থাইরয়ডাইটিস' (hashimoto's thyroiditis) নামক একটি বিচিত্র রোগ আছে যার কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।
২. হাইপারথাইরয়েডিজম (hyperthyroidism) : এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে থাইরয়েড হরমোন তৈরী হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমের তুলনায় এটার উপস্থিতি অনেক কম। এর উপসর্গগুলি হল- কাঁপুনি, দুর্বলতা, দ্রুত হৃদকম্পন, ক্লান্তি, গরম সহ্য করতে না পারা, ঘন ঘন মলত্যাগ, ঘাম হওয়া, ওজন হ্রাস, মনঃসংযোগে সমস্যা ইত্যাদি। হাইপারথাইরয়েডিজম হওয়ার অন্যতম কারণগুলি হল - গ্রেভস ডিজিজ, মাল্টিনডুলার গয়টার, অথবা অতিরিক্ত মাত্রায় আয়োডিন খাওয়া।
৩. থাইরয়েড নডিউল : এই নডিউল হল ছোট ছোট মাংসপিণ্ড বা লাম্প যা থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায়। এগুলি এক বা একাধিক হতে পারে এবং নানান আকারের হতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই কারণ এর থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণত খুব কম। তবে এই নডিউল যদি আকারে বেশ বড় হয় তাহলে বেশ কিছু উপসর্গ তৈরী হতে পারে।
কখন পরীক্ষা করবেন ?
# গর্ভাবস্থায় - গর্ভবতী মহিলাদের থাইরয়েডের পরীক্ষা করে নেওয়া খুবই জরুরি। কারণ থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে শিশুর মানসিক বিকাশে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটে। তাই আপনার গাইনোকোলোজিস্টের সাথে এই সংক্রান্ত আলোচনা অবশ্যই করে নেবেন।
# সার্জারির আগে - যেকোনো সার্জারির আগে থাইরয়েডের পরীক্ষা করা উচিত। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, সার্জারির পর রুগীর জ্ঞান ফিরতে সমস্যা হয়।
থাইরয়েডের কি কি পরীক্ষা হয় ?
# T3 এবং T4 : রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
# থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) : রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে TSH-এর মাত্রা বোঝা যায়। TSH-এর মাত্রা বেশি হলে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং কম হলে হাইপারথাইরয়েডিজম ধরা হয়।
# থাইরয়েড স্ক্যান : এই পরীক্ষায় মুখের মধ্যে সামান্য রেডিওএক্টিভ আয়োডিন দেওয়া হয়। এতে থাইরয়েড গ্ল্যাণ্ডের চিত্রটা পরিষ্কার পাওয়া যায়।
# থাইরয়েড বায়োপ্সি : FNAC পরীক্ষার মাধ্যমে অর্থাৎ একটি সূচের দ্বারা সামান্য কিছু থাইরয়েড টিস্যু বের করে আনা হয়। এতে ক্যান্সার আছে কিনা বোঝা যায়।
# ইমেজিং টেস্ট : আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান অথবা পেট (PET) স্ক্যানের মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সারের বৃদ্ধি পরীক্ষা করা হয়।
থাইরয়েডের চিকিৎসা
# থাইরয়েডেক্টমি : এই পদ্ধতিতে একজন শল্যচিকিৎসক আংশিক অথবা প্রয়োজন মাফিক সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটা কেটে বাদ দিয়ে দেন। এই পদ্ধতিটি ক্যান্সার, গয়টার ও হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
# এন্টিথাইরয়েড ওষুধ : কিছু ওষুধ আছে যা হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনের গতি মন্থর করতে পারে।
# রেডিওএক্টিভ আয়োডিন : এই পদ্ধতিতে কম ডোজ দিয়ে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড পরীক্ষা করা যায় এবং বেশি ডোজের মাধ্যমে ক্যান্সার টিস্যু ধ্বংস করা যায়।
# এক্সটার্নাল রেডিয়েশন : এই পদ্ধতিতে রেডিয়েশনের রশ্মি দিয়ে থাইরয়েডের ক্যান্সার কোষগুলি ধ্বংস করা হয়।
# থাইরয়েড হরমোন পিল : এই পিলের সাহায্যে হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করা হয় এবং থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি জেনেসিস হাসপাতালে (Genesis Hospital) নামকরা চিকিৎসকরা বছরের পর বছর ধরে অত্যন্ত সফলভাবে থাইরয়েডের চিকিৎসা করছেন। তাঁদের সাথে এপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে - ৮৫৮৪৮৮৩৮৮৪ / ০৩৩-৪০২২৪২৪২
#thyroidproblems #hypothyroidism #hyperthyroidism #thyroidnodule #TSH #GenesisHospitalKolkata #prescriptiontheke